Web bengali.cri.cn   
ইউরোপে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার
  2013-11-11 19:13:23  cri



বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার দেয়া প্রায় স্বাভাবিক ও প্রচলিত একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু দেশ এ খাবারকে অবৈতনিক শিক্ষার একটি অংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছে। আবার কিছু কিছু দেশ এ খাবারকে "শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও মেধাবিকাশ তথা জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মের গুণগতমান উন্নয়নের" একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়া আরো কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে বিনামূল্যে খাবার বিতরণকে স্কুলে শিশুদের ভর্তির হার বৃদ্ধি করা এবং সমাজিক বৈষম্য দূর করার একটি প্রকল্প হিসেবে দেখছে। তাহলে বিভিন্ন দেশের স্কুলে শিশু বা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে খাবারের অবস্থা কেমন? তা কতটুকু সন্তোষজনক, নাকি আরো উন্নত করা প্রয়োজন, বিভিন্ন দেশের এ খাবারের মান ও বৈশিষ্টতাও নিশ্চয়ই ভিন্ন ভিন্ন হবে।

আমরা প্রথমে ব্রিটেনে বিনামূল্যে খাবারে বিষয়টি নিয়েই শুরু করি। একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে এ দেশের বিনামূল্যে খাবারে হালচিত্র ব্যাখ্যা করতে চাই। যাতে আপনি আরো সহজেই বিষয়টা বুঝতে পারেন। ব্রুস নামে একটি শিশু যখন সে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়, তখন তার মাকে প্রতি সপ্তাহের দুপুরের খাবারের একটি ফর্ম দেওয়া হয়। সেখানে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ দিনের সব খাবারের তালিকা স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে। সাধারণত এ খাবারের দু'টি পছন্দ রয়েছে। কারণ ব্রুসের স্কুলে মুসলমান শিশুর সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই তাদের জন্য যে মাংস দেয়া হয়, তা প্রধানত গরু বা মুরগি। এ ছাড়া তারা পিত্জা, স্পেগেটি, পুরাও ইত্যাদি খেতে পারে। খাবারের শেষে মিষ্টি এবং আইসক্রিমও আছে। যা ব্রুসের সবচেয়ে প্রিয়। আর আরকেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ঐ ফর্মে বিশেষভাবে লেখা আছে যে, এখানে শিশুদের যে ফল ও শাকসবজি খাওয়ানো হয়, তা বাজারে বিক্রি ফল আর শাকসবজির তুলনায় ভিন্ন, এগুলোএ কেবল শিশুদের জন্যই সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আসলে লন্ডনের প্রতিটি স্কুলেই এসব খাবার বিশেষভাবে সরবরাহ করা হয়ে থাকে, যাতে সম্পূর্ণভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। প্রথম শ্রেণীতে পড়ার সময় ব্রুসকে প্রতিদিন খাবারের জন্য ১.৮ পাউন্ড দেয়া হতো, এখন সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র, তাই এখন তার খাবারের ফি হচ্ছে ১.৮৫ পাউন্ড। আপনার জেনে অবাক হবেন যে, নির্ধারিত এই মূল্য ব্রিটেনে বাজারে খুবই সস্তা। কারণ ব্রিটেনে খুব সাধারণমানের একটি রুটির দামও ২ পাউন্ড, তাই স্কুলে একটি পুষ্টিকর মিল শুধু ১.৮ পাউন্ড, তা সত্যি সস্তা।

আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন হচ্ছে যে, এ খাবার তাহলে বিনা মূল্যে হলো কি করে, তাই না? হ্যাঁ, ব্রিটেনের স্কুলগুলোতে অবশ্যই বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। যে পরিবারের বার্ষিক আয় ১৬১৯০ পাউন্ডের চেয়ে কম, এমন পরিবারের শিশুদেরকে বিনা খরচে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। আর সাধারণত এমন শিশুর সংখ্যা একটি ক্লাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি।

এবারে আমরা ব্রিটেনের বিনামূল্যের মধ্যাহ্ন-খাবারের মানদন্ড নিয়ে কিছু তথ্য জানাচ্ছি। খাবারের মান সুরক্ষায় ব্রিটেনের খুব কঠোর নিয়ম আছে। ফল আর শাকসবজি বিশেষভাবে সরবরাহ করতে হবে, শিক্ষা বিভাগের সরকারি ওয়েবসাইটে লেখা আছে, প্রতিটি মিলে "ভালো গুণগতমানের মাংস, মুরগি বা মাছ, অন্তত দু'রকমের ফল ও শাকসবজি আর রুটি থাকতে হবে"। শুধু তাই নয় ব্রিটেনের স্কুলগুলোর মধ্যাহ্ন-খাবারের তালিকায় "কোমল পানীয়, পটেটো চিপস্, চকলেট ও কেন্ডি" একদম নিষিদ্ধ, কারণ তা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ব্রিটেনের শিক্ষা বিভাগ শিশুদের সুস্বাস্থ্যের স্বার্থেই এই কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করেছে। তাই সেখানে স্কুলের খাবার সত্যি পুষ্টিকর এবং উন্নতমানের। তবে স্কুলের অনেক শিশু আছে যারা নিজেই বাসা থেকে খাবার তৈরী করে নিয়ে আসে। কারণ ব্রিটেনে শিশুদের খাবারের কারণে এলার্জি হওয়া বিষয়টি খুব সাধারণ।

স্কুলে খাবারের ক্ষেত্রে ব্রিটেন আরো বেশি সক্রিয় হচ্ছে। আগামী বছরের নভেম্বর থেকে ব্রিটেনের প্রাথমিক স্কুলের সব শিশু বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার খেতে পারবে। এ সুবিধার ফলে ব্রিটেনের প্রত্যেক শিশুর বাবা মা' প্রতি বছর ৪ শ' পাউন্ড সাশ্রয় করতে পারবে।

আমরা ফিনল্যান্ডের একটি স্কুলে যাবো। দেখি সে দেশের বিনামূল্যের খাবারের অবস্থা কেমন। আমরা সবাই জানি ফিনল্যান্ডের সামাজিক নিশ্চয়ত্তা খুবই ভালো। এ দেশে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিশুকে বিনামূল্যে খাবার দেয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে গত শতাব্দী থেকে। এখন ফিনল্যান্ডের সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিশু এই সুবিধা ভোগ করে থাকে। খাবারের রকমও ভিন্ন। আমরা সে দেশের হেলসিঙ্কির একটি মাধ্যমিক স্কুলের উদাহরণ দিতে পারি। দুপুর ১১টায় এ স্কুলের ডাইনিং হলে প্রথমে একদল শিশু এসেছে। এ হলের দু'টি বুফে ডেস্ক আছে। শিশুরা লাইন করে সেখান থেকে খাবার নেয়। এ ডাইনিং হলে ২ শ'রও বেশি আসন আছে। একটি মজার বিষয় হচ্ছে, খাবারের সময় শিশুরা বেশ শান্ত আর ভদ্র থাকে। ডাইনিং হলে প্রতিদিনের খাবারের মেনিউ টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। প্রতিটি খাবার কিভাবে রান্না করে, কি কি সোস দেওয়া হয়েছে, এ মেনিউ-তে সব উল্লেখ করা থাকে। প্রতিটি ব্যাচের শিশুদের খাওয়ার সময়সীমা ৩০ মিনিট। তারপর চার জন কর্মী এবং দু'জন শিক্ষার্থী টেবিল পরিস্কার করবে এবং নতুন খাবার টেবিলে রাখবে। এরপর দ্বিতীয় ব্যাচের শিশুরা খাবার খেতে আসবে। খাবার টিবিল পরিস্কার করা ও খাবার সাজানোর কাজে শিশুদের যুক্ত করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুদের বোঝানো যে ডাইনিং হলের কর্মীদের কাজটি আসলে সহজ নয়, তাই কোনোমতেই খাবারের অপব্যয় করা যাবে না।

ফিনল্যান্ডের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের বিনা বেতনের খাবার হল অবৈতনিক শিক্ষার একটি অংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ খাবার বরাদ্দ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী প্রতি স্কুলে খাবার অর্থ বরাদ্দ করে। হেলসিঙ্কিতে প্রতি বছর প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট হয় ৭৫০০ ইউরো। এর মধ্যে বিনামূল্যে খাবারের ফি ৮ শতাংশ। শ্রোতা, যদি কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুদের পর্যাপ্ত খাবার না দেয়, তাহলে সেই স্কুলকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে, এমনটি স্কুলটি অবৈধ হয়ে যায় কখনো কখনো। তাই স্কুলের দায়িত্ব শিশুদের জন্য যথেষ্ট পরিমান এবং ভালো ও গুণগতমানের খাবার প্রদান করা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক