Web bengali.cri.cn   
আরব দেশগুলোর বিয়ের রীতিনীতি
  2013-11-04 18:58:29  cri



আমরা জানি অধিকাংশ আরবীয় জনগণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তাই তাদের বিবাহের রীতিনীতি বাংলাদেশের মত দক্ষিণ এশীয় দেশের মুসলিম জনগণের বিবাহের রীতিনীতির সাথে কিছু কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ধর্মীয় আচার অনুশাসনের কারণে আরবের প্রচলিত বিয়ের রীতিনীতির সাথে পাশ্চাত্য দেশের রীতিনীতি একদম ভিন্ন।

যদি আপনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের রাস্তায় হাটেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন সবজায়গায় আছে মসজিদ, লোকজন প্রতিদিন পাচ বার নামাজ পড়ে। প্রকাশ্য স্থানে মদ খাওয়া একদম নিষিদ্ধ, ঠিক যেন দক্ষিণ এশিয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মত। একটা কথা দীর্ঘকাল থেকেই প্রচলিত আছে যে, আরব দেশগুলোতে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে। হ্যাঁ এই কথাটা নিকট অতীতেও যতটা সত্য ছিল, বর্তমানে এমনটা খুব কম দেখা যায়। কেননা শহরাঞ্চলে শিক্ষিত জনগণের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বহুবিবাহের ধারণা থেকে সরে এসে এক স্ত্রী'সাথেই জীবন পার করে দিচ্ছেন। তবে এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গোত্র ভিত্তিক কিছু অঞ্চলে একাধিক বিবাহের প্রচলন রয়েছে। তবে বর্তমানে আরব দুনিয়ায় আধুনিক চিন্তাধারার প্রভাবে ধীরে ধীরে বহুবিবাহের পরিবর্তে এক স্ত্রী বিবাহের ধারণা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আরব দুনিয়ায় বহুবিবাহের ধারণা বা রীতির প্রচলন হলো কেন, বা এর পিছনে কারনটাই বা কী? এর পেছনে বড় একটি ঐতিহাসিক কারণ হচ্ছে যুদ্ধ। কেবল বর্তমান সময় কালেই নয়, ইতিহাস ঘাটলে আপনি দেখতে পাবেন প্রায়শই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একে অপরের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থেকেছে। আর যুদ্ধে পুরুষদের হতাহতের নির্মম প্রভাব গিয়ে পড়ে নারী ও পুরুষের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর। অর্থাত্ পুরুষ এবং নারীর অনুপাত ভারসাম্যহীন পড়ে। অনেক মহিলা যুদ্ধে তার স্বামীকে হারায়, স্বামী ছাড়া তাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা একটা সময় পর্যন্ত আরব দেশগুলোতে আমাদের বা পাশ্চাত্য সমাজের ন্যায় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল সীমাবদ্ধ। ফলে এরূপ ভারসাম্যহীন একটি পরিবেশে একজন স্বামীর কয়েকজন স্ত্রী থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এমন একটি বিরূপ পরিস্থিতি একজন পুরুষ একাধিক মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে জীবন ধারণে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য কোরানেও সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হল প্রত্যেক স্ত্রীকে সমান মর্যাদায় দেখতে হবে। প্রত্যেককে সমান অধিকার দিতে হবে, যদি তা করতে না পারে, তাহলে শুধু এক স্ত্রী নিয়ে থাকাই শ্রেয়। তাছাড়া আধুনিক যুগে আরব দেশগুলোর পুরুষদের এক স্ত্রীর ব্যবস্থা মেনে চলার আরও একটি কারণ হচ্ছে, বিবাহ ব্যায় বা খরচ। কারণ আরব দেশে বিয়ে করতে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়। তাছাড়া একাধিক স্ত্রী থাকলে ছেলে মেয়ের সংখ্যাও হবে বেশি, যা পরিবারে আর্থিক চাপ তৈরী করে।

মিসরের জনসংখ্যা পরিসংখ্যান কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই স্ত্রী আছে এমন মিসরীয় পুরুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। যাদের চারজন স্ত্রী আছে এমন পুরুষের সংখ্যা মোট লোকসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ। এর বিপরীতে শিক্ষিত পুরুষদের অধিকাংশেরই একজন স্ত্রী আছে। স্ত্রী বেশি হলে দায়িত্বও বেশি, সন্ত্রানকে লালন করা এবং শিক্ষার দায়িত্বও থাকে এর সাথে। আর তার ওপর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যদি হয় খারাপ তাহলে তো ঝামেলার আর শেষ নেই।

আরব দেশে এখনো অনেক নারী পুরুষ বিয়ের স্থানীয় রীতিনীতি আর ঐতিহ্য অনুযায়ী একে অন্যের সাথে পরিচিত হয় এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যদিও মিসরের বড় বড় শহরে অনেক তরুণ তরুণী ফ্রী লাভ বা প্রেম সম্পর্ক থেকে নিজের প্রিয় মানুষটিকে বিয়ে করে। তবে এখনো কিছু কিছু পাহাড়ি এলাকা বা গ্রামীণ অঞ্চলের বিয়েতে পাত্র পাত্রী পরস্পরকে দেখে পছন্দ করার পদ্ধতিতে সম্পন্ন করে থাকে। মিসরে পাত্র পাত্রীর উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পর্কিত যে কোনো আলোচনার শুরুতে পবিত্র কোরানের সুরা পাঠা করা হয়। যাতে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক শুভ হয়। এদের রীতি অনুযায়ী পাত্রীর পরিবারকে বাগদান স্বরূপ অনেক উপাহার দিতে হয়, এক্ষেত্রে উপহার হিসেবে সাধারণত সাধারণ সোনা আর আসবাবপত্র প্রদান করা হয়। যেমন, মিসরের রীতিনীতি অনুযায়ী, পাত্রপক্ষকে শয়নকক্ষ, খাবার ঘর, বৈঠকখানা আর শিশু কক্ষের আসবাবপত্র উপাহার স্বরূপ প্রদান করতে হবে। আর পাত্রী পক্ষকে রান্না ঘর, ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আর গালিচা প্রস্তুত করতে হবে।

এ ছাড়া বিয়ের আগে দু'পক্ষ আরেকটি বিষয়ে সমাধান করে নেয়, সেটি হচ্ছে যদি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, তাহলে স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ অর্থদন্ড দিতে হয়, এক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ হাজার মিশরীয় মুদ্রা প্রদান করতে হয়। এ বিষয়টি ঠিক হওয়ার পরই দু'পক্ষ বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এরপর যদি পাত্রী পক্ষ কোনো কারণে এই বিয়েতে অসম্মতি প্রকাশ করে তাহলে পাত্র পক্ষ বাগদান স্বরূপ প্রদান করা সকল উপাহার ফেরত নিতে পারে। তবে যদি পাত্র পক্ষ অসম্মতি প্রকাশ করে, তাহলে পাত্রপক্ষ এই উপহার ফেরত নিতে পারবে না।

বর্তমানে আরব দেশের তরুণ তরুণীদের মধ্যে ফ্রি লাভ-এর ধারণা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও ধর্মীয় অনুশাসনের কারনে কারণে মেয়েরা প্রকাশ্য স্থানে পর্দা পরতে বাধ্য হয়, তবে কিছু কিছু বিশেষ স্থানে তাদের পর্দা পরার দরকার নেই। যেমন মহিলা খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সময়, এবং সুপার মার্কেটের কেশিয়ার, বিমানের কর্মী, বিমানবালা এবং সাংবাদিক ইত্যাদি। ফলে ক্রমশই ফ্রি লাভের ধারণা ও চর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক