Web bengali.cri.cn   
দূষণ-মুক্ত বায়ু কর্মসূচি, ২০১৩-২০১৭
  2013-10-16 18:52:24  cri


শরত্কালে পেইচিংয়ের নীল আকাশ দেখে নাগরিকরা খুব আনন্দিত হন। কিন্তু গত কয়েক বছরে পেইচিংয়ের আকাশ অধিকাংশ সময় ধোয়াশায় ঢাকা থাকায় সেই নীল আকাশ আর সহসা দেখা যায় না। পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর যান্ত্রিক বাহনের বিষাক্ত গ্যাস নির্গমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান লি কুন সেং বলেন, বর্তমানে পেইচিংয়ে 'পি এম ২.৫'-এর গড় ঘনত্ব প্রতি বর্গমিটারে ৯০-১০০ মাইক্রোগ্রাম, যা শিল্পোন্নত দেশগুলোর বড় শহরের তুলনায় অনেক বেশি।

লে খুন সেং বলেন

"শিল্পোন্নত দেশগুলোর বড় শহরে প্রতি বছর'পি এম ২.৫'-এর গড় ঘনত্ব যেখানে দশ থেকে মাইক্রোগ্রাম থাকে, সেখানে পেইচিংয়ে তা ৯০-১০০। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে 'পি এম ২.৫'-এর গড় ঘনত্ব ৩৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। 'দূষণ-মুক্ত বায়ু কর্মসূচি, ২০১৩-২০১৭'অনুসারে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, 'পি এম ২.৫'-এর গড় ঘনত্ব ৬০তে নামিয়ে আনা। অবশ্য সেক্ষেত্রেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুসারে আমরা পিছিয়েই থাকব। "

'দূষণ-মুক্ত বায়ু কর্মসূচি, ২০১৩-২০১৭'তে দুষণ নিয়ন্ত্রণের যে ৮০টি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ২২টি যান্ত্রিক বাহন থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন সম্পর্কিত। লি খুন সেং ব্যাখ্যা করে বলেন, যান্ত্রিক বাহনের বিষাক্ত গ্যাসে রয়েছে ১০০টিরও বেশি কার্সিনোজেনিক পদার্থ। এ পদার্থ সহজে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং এতে তাদের শ্বাসতন্ত্র সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যান্ত্রিক বাহনের বিষাক্ত গ্যাস নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি একটি ব্যাপার। লি খুন সেং বলেন

"বর্তমানে পেইচিংয়ে ৫৩.৫ লাখ গাড়ি আছে এবং প্রতি বছর ৭০ লাখ টন গ্যাসোলিন ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর বায়ুতে ৯ লাখ টন দূষিত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দূষিত বায়ু ফুসফুসের ক্যান্সারের মূল কারণগুলোর অন্যতম। "

পেইচিং যোগাযোগ কমিটির সদস্য রোং চুন মনে করেন, যান্ত্রিক বাহনের বিষাক্ত গ্যাস নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ খুব প্রয়োজনীয়। সংশ্লিষ্ট উপাত্ত থেকে জানা গেছে, যখন গাড়ি ঘন্টায় ৬০ কিলোমাটার গতিতে চলে, তখন সবচেয়ে কম দূষিত গ্যাস নির্গত হয় এবং যখন গতি ৬০ কিলোমাটারের চেয়ে কম হয় তখন তুলনামূলকভাবে বেশি দূষিত গ্যাস নির্গত হয়। বর্তমানে পেচিংয়ে সকাল ও বিকেলে ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়ির গড় গতি থাকে ঘন্টায় মাত্র ২৫ কিলোমিটার। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে রোং চুন গাড়ি ব্যবহারের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন "দূষণ-মুক্ত বায়ু কর্মসূচি, ২০১৩-২০১৭'তে বলা হয়েছে যে, পেইচিং পরিবহন কমিটি ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ নতুন নিম্ন-নির্গত অঞ্চল নির্মাণ এবং ট্রাফিক জ্যাম চার্জ সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন করবে এবং সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। "

সম্প্রতি কয়েক বছরে পেইচিং সরকার ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে পেইচিংয়ে পরিবহন পরিস্থিতি এখনও খুব খারাপ এবং পার্কিং ফি বাড়ানোর নীতি নাগরিকের পছন্দ হয়নি। এ বিষয় নিয়ে রোং চুন বলেন, বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ শোনার পর এ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য উপায়ও বের করতে হবে। রোং চুন বলেন

"ভবিষ্যতে পেইচিং পাতাল রেলের দৈঘ্য বেড়ে ৬৬০ কিলোমিটার হবে। আমরা শহরে বাস স্টপের সংখ্যা বাড়াবো এবং যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর মাধ্যমে নাগরিকদেরকে অধিক হারে পাবলিক বাস ব্যবহারে উত্সাহিত করবো। তা ছাড়া, হাটাপথ ও সাইকেল পথগুলোও উন্নত করা হবে।"

রোং চুন আরো বলেন, ২০১৭ সাল নাগাদ পেইচিংয়ে গাড়ির সংখ্যা ৬০ লাখে সীমিত রাখা হবে। এসময়ের্ মধ্যে পেইচিংয়ে ২ লাখ নতুন ধরনের দূষণমুক্ত জ্বালানিচালিত গাড়ি দেখা যাবে এবং ৭০ শতাংশ বাস চলবে নতুন ধরনের দূষণমুক্ত জ্বালানিতে। ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে এবং বেশি বেশি পাবলিক বাস পরিচালনার মাধ্যমে বায়দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক