Web bengali.cri.cn   
জাপান ও ভারতের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি পরিস্থিতি
  2013-09-28 19:13:22  cri

সময় আসছে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির। এখন বাচ্চাদেরকে কিন্ডারগার্টেনের ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে তাদেরকে জীবনের প্রথম 'পরীক্ষা'য় অবতীর্ণ করতে হবে। এ পরিস্থিতি শুধু চীনে নয়। অন্য দেশগুলোর অনেক কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি পরীক্ষা আছে। সবচেয়ে উঁচু মানের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি পরীক্ষা আরো কড়া। সাম্প্রতিক এক খবর থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো উঁচুমানের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির হার প্রার্থীদের মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ ভূবনবিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার প্রার্থীদের ৬.৯ শতাংশ। ভারত ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা একই। এসব কিন্ডারর্গাটেনে ভর্তির প্রক্রিয়া একটি যুদ্ধের মতো। এ অবস্থা সত্ত্বেও নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত আরো উজ্জ্বল করার জন্য মা-বাবারা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালান; সাহায্য করেন ছেলেমেয়েদেরকে জীবনের প্রথম পরীক্ষায় পাস করাতে।

আজ আমরা জাপান ও ভারতে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা বলবো।

জাপান

জাপানে গৃহকর্মী অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার এবং সরকার-প্রতিষ্ঠিত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো উন্নত না হওয়ার কারণে বর্তমানে দেশটির প্রায় ৯০ লাখ প্রাক-স্কুল বয়সী শিশুর মধ্যে মাত্র ১৯ লাখ সরকার-স্বীকৃত কিন্ডারগার্টেনে যায়।

সেকারণে জাপানে কিছু খুবই ব্যয়বহুল ব্যক্তিখাতের অতি উঁচু মানের কিন্ডারগার্টেনের আবির্ভাব ঘটেছে। এসব কিন্ডারগার্টেন ভর্তির জন্য ২ বছর বয়সী শিশুদের কঠোর পরীক্ষা নেয়। কারণ এসব কিন্ডারগার্টেন শিশুদেরকে অভিজাত প্রাথমিক বিদ্যালয় এমনকি অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। এই পথ ধরে শিশুরা শেষমেষ সমাজের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

এ ধরনের অভিজাত কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার জন্য শিশুদের মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে হয়। এখানে সাধারণ দুটো পদক্ষেপ থাকে।

প্রথমত, শিক্ষক শিশুদের এক সেট ইউনিফর্ম দেন। শিশুদের নিজেদেরকেই এটা পরতে হয়। শিক্ষকরা দেখেন শিশুরা সুষ্ঠুভাবে বোতাম লাগাতে পারে কিনা অথবা জুতা ও মোজা পরতে পারে কিনা। অথবা কয়েকটি শিশুকে টেবিল সরানোর কাজ দিয়ে তাদের সামর্থ্য ও দলীয় মনোভাব দেখেন।

এছাড়া কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ মৌখিক পরীক্ষায় শিশুদের কিছু দলীয় কার্যক্রম দেখে। যেমন সিঁড়ি আরোহণ করা বা এক-তক্তার সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটা। এর মাধ্যমে শিশুদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। সবশেষে একটি ছোট মৌখিক পরীক্ষা থাকে। শিশুর নাম বা শখ ও আগ্রহ জিজ্ঞাস করা হয় সে পরীক্ষায়।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে পরিবারিক পরীক্ষা। এখানে কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছু শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে। পরীক্ষক মা-বাবার কাছে জানতে চান, তাঁদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে কী হবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন? কিন্ডারগার্টেনের থেকে তাদের কী কী প্রত্যাশা আছে। শিশুর ব্যাপারে তাদের কী ধরনের ভাবনা আছে ইত্যাদি।

শ্রোতাবন্ধু, এবার ভারত প্রসঙ্গ।

ভারতে ১২ বছরের সুশৃঙ্খল পদ্ধতির শিক্ষাদান ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে স্কুল পরিবর্তন না করলে বা ঝরে না পড়লে কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত একই স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে। মাঝখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি অথবা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিসহ 'ক্রমাগত যন্ত্রণার' মধ্যে দিয়ে যাওয়ার দরকার হয় না। ভবিষ্যতে একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক মা-বাবা শিশুদের কিন্ডারগার্টেনের সময় থেকে সেরা স্কুলে ভর্তি করানো চেষ্টা করেন।

সোনিতা একটি অভিজাত কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করেন। তাঁর ৩ বছর বয়সী মেয়েকে একটি ভাল কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা অংশ নিতে হবে। পরীক্ষার বিষয়গুলো রয়েছে কবিতা আবৃত্তি, মার্জিত অঙ্গবিন্যাসে হাঁটা এবং 'মৌখিক পরীক্ষা'। প্রতিদিন বিকেলে সোনিতা মেয়েকে কবিতা আবৃত্তি শেখান। তারপর তাকে একটি পার্কে নিয়ে কিছু সাধারণ পাখি দেখান এবং সেগুলোর নাম শেখান। এমনকি তিনি পরীক্ষার মহড়ার মাধ্যমে মেয়েকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে উপযুক্ত করে তোলেন। সোনিতা বলেন, "আমি এবং আমার স্বামী শিক্ষিত মানুষ। বর্তমানে বাচ্চাকে ভালো স্কুলে পাঠানো খুব কঠিন। ছয় মাস হয়ে গেছে - আমরা নিশ্চিন্তে মেয়ের সঙ্গে খেলতে পারি না। সময় পেলে আমাদের তাকে ভর্তি পরীক্ষায় প্রস্তুত করতে হয়। এসব সত্ত্বেও সে যে নিশ্চিতভাবে ব্যক্তিখাতের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নাই।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক