Web bengali.cri.cn   
শ্রীলঙ্কার বন্ধু হো থাইস্যুইর 'চীনা স্বপ্ন'
  2013-09-06 14:52:20  cri

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো একটি শব্দগুচ্ছ 'চীনা স্বপ্ন' দেশের তথ্যমাধ্যম এবং জনসাধারণের জীবনে আরও প্রাণবন্ত হয়ে হাজির হয়েছে। একজন চীনা মানুষের জন্য 'চীনা স্বপ্ন' সম্ভবত আরো ভালো চাকরির পরিবেশ, আরো সুসংহত সামাজিক নিশ্চয়তা, অথবা আরো সম্প্রীতিময় সামাজিক পরিবেশ। কিন্তু বিদেশি বন্ধুদের চোখে চীনা স্বপ্নের অর্থ কী? তাঁদের নিজেদের চীনা স্বপ্ন কী? এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি চীনে অধ্যয়নরত শ্রীলঙ্কার বন্ধু হো থাইস্যুইর সঙ্গে।

সময়টা গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝিতে চলে এসেছে। আবহাওয়া গুমট গরম। পড়ন্ত বেলায় কিচিরমিচির করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ঘুর্ঘুরে পোকারা। কিন্তু আমাদের সংবাদদাতা যখন নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট আগেই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছান, তখন দেখতে পান হো থাইস্যুই আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছেন। চেহারায় তাঁর সহৃদ হাসি। তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ হৃদয়ে সংবাদদাতাকে অভিবাদন জানান। আমেজটা সেই মুহূর্তে উদ্বেগহীন ও সুরেলা হয়ে ওঠে।

সংবাদদাতা প্রথমে তাঁর নামের ব্যাপারে কৌতূহল প্রকাশ করেন। হো থাইস্যুই বলেন, তাঁর চীনা ভাষা ভালো না। তাঁর বন্ধু তাঁকে এ নাম দিয়েছেন। থাই স্যুই-এর অর্থ তাঁর সিংহলি নামের মতো।

হো থাইস্যুই চীনে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিষয়ে পড়েন। চীনে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি খোলামেলাভাবে চীনা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানান।

তিনি চীনে ১ বছর ধরে আছেন। বর্তমানে চীনা ভাষা শেখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিজে নিজে চীনা ভাষা শিখা তাঁর জন্য কঠিন। তিনি বলেন, যদি এভাবে চীনা ভাষা শেখা না হয়, তাহলে আগামী বছর তিনি অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।

যদিও চীনা ভাষা হো থাই স্যুই বেশি বোঝেন না, তবে যখন সংবাদদাতা চীনা স্বপ্নের কথা বলেন, তার উত্তরে তাঁর কোনো দ্বিধা ছিল না। তিনি মনে করেন, চীনা স্বপ্ন খুব ভালো একটি পরিকল্পনা। চীনের জন্য হোক অথবা চীনা মানুষের জন্য হোক এটা একটা উদযাপনীয় ব্যাপার। চীনা স্বপ্ন উদ্যোগের প্রশংসা করা ছাড়াও হো থাইস্যুই চীনা স্বপ্ন সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মতামত নিয়ে নিজের ধারণা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,

"কেউ কেউ বলে, চীনা স্বপ্ন হচ্ছে আমেরিকান স্বপ্নের প্রতিরূপ। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। প্রত্যেক মানুষের নিজের স্বপ্ন আছে। আমাদেরও নিজের স্বপ্ন আছে। আমি মনে করি, চীনা স্বপ্নের মতো নিজের স্বপ্ন থাকা একটি ভালো ব্যাপার।"

চীনা স্বপ্ন সম্পর্কে ভালভাবে অবগত একজন বিদেশি হিসেবে হো থাইস্যুইর নিজেরও চীনা স্বপ্ন আছে।

চীনের সঙ্গে তার যোগসূত্র ২০০৫ সাল থেকে। সে বছর এক কাকতালীয় সুযোগে তিনি ইয়ুননান প্রদেশে বেড়াতে আসেন। মাত্র এক সপ্তাহের ভ্রমণে তিনি প্রাদেশিক রাজধানী খুনমিং, তা লি এবং সি শুয়াং বান নাসহ বিভিন্ন জায়গায় যান। ইয়ুননানে তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করেন যে, সেখানে নিজের দেশের মতো ধর্ম ও একই ধরনের সংস্কৃতি আছে। তিনি বলেন,

"সি শুয়াং বান নার অধিবাসীরা শ্রীলঙ্কার মতোই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। এসব মিল আমার কাছে খুব বিস্ময়কর লাগে। সি শুয়াং বান না আমার নিজের বাড়ির মতো।"

ইয়ুননান সফর হো থাইস্যুইর মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলে। তখন থেকে তিনি চীন ও চীনা সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহ বোধ করেন এবং আবার চীনে আসার প্রত্যাশা করেন।

হো থাইস্যুই দ্বিতীয় বার চীন সফর করেন ২০১১ সালে। সে বছর তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের আমন্ত্রণে বেতারের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসেন। তার পর তিনি ফু চিয়ান প্রদেশে যান। দ্বিতীয় বার তিনি চীনের নগরের নতুন পরিবর্তন উপলব্ধি করেন। তিনি মনে করেন, চীনের শহরের উন্নয়ন ও নির্মাণ খুবই দ্রুত। সব সময় নতুন চেহারায় দেখা যাচ্ছে শহরকে। কিন্তু এসব পরিবর্তনের মধ্যেও কিছু জিনিস পরিবর্তিত হয় না। তিনি বলেন,

"চীনের শহরে পরিবর্তন ব্যাপক। গ্রামের উন্নয়নও দ্রুত। চীনের নিজের উন্নয়নের রূপ আছে। আমরা দেখেছি অনেক জিনিস পরিবর্তনীয়। কিন্তু আমার মনে হয়, সংস্কৃতি হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যেটা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় না।"

চীন সফরের মধ্য দিয়ে হো থাইস্যুইর চীনে লেখাপড়ার স্বপ্ন আরো জোরালে হয়।

এখন হো থাইস্যুই চীনে লেখাপড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। চীনে এসে নিজের স্বপ্ন সন্ধান করা একটি সহজ ব্যাপার নয়। হো থাই স্যুই সংবাদদাতাকে জানান, তিনি শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি করেন। যদিও দেশে ফিরে যাওয়ার পর তিনি আগের চাকরি করবেন, যেটার সঙ্গে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও তিনি চীনে পড়াশোনার সুযোগকে মুল্য দেন। কারণ এটা তাঁর চীনা স্বপ্ন। তিনি ভালোভাবে সেটা ব্যবহার করবেন।

নিজের চীনা স্বপ্নের কথা শেষ করে নিজের দেশের স্বপ্নের কথা মাথায় আসে হো থাইস্যুইর । তিনি বলেন,

"আমরা নিজের দেশে ভালো উন্নয়ন দেখতে চাই। আমাদের এক ধরনের ভালো রূপ দরকার। পাশাপাশি নিজের উন্নয়নের রূপ নবায়ন করা দরকার। অর্থাত্ শ্রীলঙ্কাকে নিজের মাধ্যমে নিজের উন্নয়নের রূপ খুঁজে বের করতে হবে। চীনও নিজের ওপর নির্ভর করবে। যদি নিজের যুক্তিযুক্ত রূপ থাকে, তাহলে মানুষের জীবনে আরো সুখ-শান্তি আসবে। এটা আমার প্রত্যাশা।"

তিনি মনে করেন, চীনা স্বপ্ন উত্থাপন বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে। তিনি আশা করেন, চীনের আরো উন্মুক্ততার প্রেক্ষাপটে চীন ও শ্রীলঙ্কার যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হবে।

এবারের সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে সংবাদদাতা বিদেশি বন্ধু হো থাইস্যুইর কাছ থেকে তাঁর স্বপ্ন সম্পর্কে জেনেছেন এবং দেখেছেন বিদেশির চোখে চীনা স্বপ্ন। হো থাইস্যুই বলেন, তিনি নিজের স্বপ্নকে ধরার দৌঁড়ের গতি কমাবেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি স্বপ্ন ধেয়ে আরো ওপরে উঠবেন।

**প্রশ্ন: কোন বছর হো থাইস্যুই প্রথমবারের মতো চীনে আসেন?

খোং চিয়া চিয়া

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক