Web bengali.cri.cn   
ভালো মানুষ সব সময় কাজের যথাযথ মর্যাদ পাবে
  2013-08-19 19:39:54  cri


প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানে প্রথমেইই আপনাদের জন্য রয়েছে বিশ্বের দু'টি খুব মজার খবর, এরপর আপনাদের জানাবো জিম্বাবুয়ের পুলিশ স্টেশনের কথা, কেন জিম্বাবুয়ের পুলিশ স্টেশনের কথা বেছে নিয়েছি? কারণ দেশটির পুলিশ স্টেশন সত্যি খুব অন্য রকমের এবং কৌতুহল উদ্দীপক, আজকের অনুষ্ঠান শুনে আপনারা তা বুঝতে পারবেন এবং নিশ্চয়ই মজা পাবেন।

ক: প্রিয় শ্রোতা, আগের কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমরা কিছুটা ভারী বা গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারি, আজকের অনুষ্ঠান খুব আনন্দের আর চিত্তাকর্ষক হবে। তাহলে এখন আমরা আপনাদের জানাচ্ছি বিশ্বের দু'টি মজার খবর। লিপন, চীনে এমন একটি কথা আছে যে, ভালো মানুষ সব সময় কাজের যথাযথ মর্যাদ পাবেই। এর অর্থ হচ্ছে তুমি যদি জীবন সত্ ও ন্যায়সংগত কাজ করো, যদি তুমি সবসময় অন্যের সাথে ভালো আচরণ করে অথবা অন্যকে সাহায্য করো বা সবসময় ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করো, তাহলে নিশ্চয়ই একদিন তুমি এ সব মঙ্গলকর কাজের মর্যাদা স্বরূপ বিরাট পুরস্কার পাবে।

ক: কিন্তু চীনে আরেকটি কথাও আছে, যদি মানুষ অতি ভালো হয়, তাহলে অন্যরা হয়তো তাকে সম্মন করবে না। তোমার কি মনে হয়?

খ: এটাও যুক্তিযুক্ত শুনতে। কিন্তু এ দু'টি বাক্য বিপরীতার্থক বাক্য। কিন্তু দুটোই শুনতে সঠিক মনে হয়। তাহলে কোন বাক্যটি বেশি সঠিক? এ ক্ষেত্রে জাপানিরা কিছু কাজ করেছে। সম্প্রতি জাপানের একটি গবেষণা সংস্থা কিন্ডার্গাটেনের ছোট শিশুদের আচরণ বিশ্লেষণ করেছে। তুমি জানো তাদের গবেষণা এবং বিশ্লেষণের ফলাফল কি? যে শিশু খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে, সে সহজেই অন্যান্য শিশুর বন্ধুত্ব লাভ করে। আর এটা প্রমাণ করেছে যে, অন্যকে ভালবাসলে বা অন্যের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে বা হৃদয়বান মানুষ ভালো হলে, ভালো পুরস্কার পাবে এ কথা ঠিক।

জাপানের এনএচকে টিভি চ্যানেলের ৯ আগস্টের খবরে প্রকাশ, জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "মানব জাতি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের" কর্মীরা ওসাকার ৭০ জন ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী কিন্ডার্গাটেন শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করেছে। এ থেকে জানা যায়, যদি একটি শিশু নিজের খেলনা অন্য শিশুকে ধার দেয়, অথবা খেলতে দেয়, তাহলে অন্য শিশুরাও তাকে সাহায্য করে অথবা বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। গবেষণা দল মনে করে, ছোটবেলা থেকেই মানব জাতি ভালো মানুষকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা আরো বলেন, ভালো মানুষের ভালো পুরস্কার পাওয়া এক রকমের অবচেতন মনের সচেতনতা, এটা মানব জাতির বিবর্তন ও বেঁচে থাকার প্রক্রিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,এবার গবেষণা বৈজ্ঞানিক দিক থেকে তা প্রমাণ করেছে।

ক: এখন আমরা শ্রোতাদেরকে একটি কাহিনী জানাতে চাই। এ গল্পের প্রধান চরিত্র বিনা পরিশ্রমে বা বলতে পারেন অনেক সহজেই অনেক সম্পদ অর্জন করার একটি কাহিনী। এটা কি উপরোক্ত তত্ত্বের আরেকটি প্রমাণ? তাহলে শুনুন শ্রোতারা।

যদিও আমরা সবাই জানি,আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো এমন সুন্দর এবং ভাগ্যবান ঘটনা খুব কমই ঘটে, কিন্তু কিছু কিছু লোক সত্যি খুব ভাগ্যবান হয়ে যায়। তাইওয়ানের এক তথ্য মাধ্যমের ১৩ আগস্টের খবরে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের একজন ১২ বছর বয়সী শিশু মাইক, সে আর্কানসাস রাজ্যের "Crater of Dia-monds State Park-এ শুধু মাত্র ১০ মিনিটের সময়ের মধ্যে ৫.১৬ কারাতের একটি হীরক খন্ড পেয়েছে।

ক: আর খবরে বলা হয়েছে, এ পার্কটি পূর্বে একটি হীরা আহরণের খনি ছিল। ১৯৭২ সালে এ জায়গাটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর তা পার্কে পরিণত হয়েছে, এবং এটিই হচ্ছে একমাত্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত হীরার পার্ক। প্রথম দিকে পার্কে বেড়াতে আসা মানুষ প্রতিদিনই কিছু না কিছু ছোট ছোট দু একটি হীরক খণ্ড খুঁজে পাওয়া যায়, এবং মাইক যে হীরা মাটি থেকে পেয়েছে, তা ২০১৩ সালের ৩২৮ নম্বর হীরা এবং এত বড় হীরা খুব কম পাওয়া যায়।

খ: মনে হয় মাইক নিশ্চয়ই খুব মিষ্টি হাসিখুশী বন্ধুবত্সল্য একটি শিশু, নিশ্চয়ই তার অনেক বন্ধু রয়েছে, আর তাই ভালো শিশুর ভালো পুরস্কার পাওয়া হলো, তাই না?

ক: আমিও তাই মনে করছি। আর শ্রোতারা আপনারা জানেন, এ পার্ক থেকে পাওয়া বৃহত্তম হীরার ওজন কত? এবং তা কোন সালের কথা? তা হল ১৯২৪ সালের কথা, তখন ৪০.২৩ কারাতের একটি বিরাট হীরা পাওয়া গিয়েছিল এখানে। এ হীরা নিঃসন্দেহে একটি অমূল্য সম্পদ। হয়তো বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর বিত্তশালী কেউ তা কিনতে সক্ষম হবে।

ক: জিম্বাবুয়ের পুলিশ সম্পর্কে এমন একটি হাসির গল্প আছে-একটি পরিবারে রাতে চোর ঢুকেছে। তখন পরিবার প্রধান পুলিশকে ফোন করে তাদের সাহয্য প্রার্থনা করে এবং পুলিশকে দ্রুত আসতে বলে। কিন্তু পুলিশ উল্টো তাদেরকে বলে, আপনারা কি আমাদেরকে একটু সাহায্য করবেন? আমাদের আপনার ওখানে দ্রুত যেতে একটু অসুবিধা আছে, কারণ আমাদের পুলিশ গাড়ি নেই, আপনাদের যদি গাড়ি থাকে তাহলে দয়া করে দ্রুত আসুন আর আমাদের নিয়ে যান, যাতে চোর ধরতে পারি। শ্রোতারা, হাসবেন না কিন্তু, এটা সত্যি কথা, এটা গল্প নয়।

খ: হ্যাঁ। জিম্বাবুয়ে পুলিশের গাড়ির অভাব রয়েছে, এটা সত্য। আর এমন অবস্থার পিছনে মূল কারণ দেশের অর্থনীতির একটানা দশ বছর ধরে মন্দা অবস্থায় থাকা। দেশের অর্থনীতির অবস্থা প্রতি বছর খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে, এ কারণে পুলিশ কর্তৃপক্ষের হাতে প্রয়োজনীয় গাড়ি কেনার মতো যথেষ্ট অর্থ থাকে না। এর ফলে এ দেশে খুব হাস্যকর ঘটনা ঘটছে অহরহ। যেমন মাঝে মাঝে কিছু ড্রাইভার সড়ক আইন ও নিয়ম লঙ্ঘন করে, পুলিশ অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দেবে এবং তাদেরকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাবে। কিন্তু মাঝে মাঝে পুলিশ নিজেই আইন লঙ্ঘন করা ড্রাইভারের জিম্মি হয়ে যায়, কেন? কারণ পুলিশের নিজের গাড়ি নেই, তাই ড্রাইভারের গাড়ি ব্যবহার করে মানে, ওই আইন লঙ্ঘন করা ড্রাইভার নিজেই পুলিশকে সঙ্গে করে গাড়ি চালিয়ে পুলিশ স্টেশনে জরিমানা দিতে যায়। আবার কখনো কিছু কিছু ড্রাইভার পুলিশকে সাথে নিয়ে স্টেশনের পথে কোনো নির্জন স্থানে গিয়ে পুলিশকে মারধর করে রেখে পালিয়ে যায়। কি বেচারা।

ক: সেখানের একজন পুলিশ জানিয়েছেন, তার পুলিশ স্টেশনে ২০ জন পুলিশ আছে, কিন্তু একটি গাড়িও নেই, তাই তাদের দৃষ্টিতে বাসে করে দুস্কৃতিকারী বা সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে পাবলিক বাসে করে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যদিও এ দেশে পুলিশ স্টেশন গাড়ি কিনতে সক্ষম নয়, তবে তাদের সাইকেলের সংখ্যা যথেষ্ট। এখন সরকার চেষ্টা করছে যে রাজধানীর পুলিশ স্টেশনের প্রত্যেক পুলিশের জন্য অন্তত একটি করে সাইকেল দেয়া যায় কিনা সে ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন, যদি সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে, তাহলে কিভাবে তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাবে, কি প্রেমিক প্রেমিকার মত সন্দেহভাজন সাইকেলের পিছনের আসনে পুলিশের কোমড় ধরে বসে থাকবে আর পুলিশ তাকে নিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাবে? কি রম্যান্টিক।

খ: সত্যি খুব মজার, তবে গাড়ি না থাকায় সত্যি সে দেশের পুলিশের জন্য দারুন অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা আশা করি সে দেশের পুলিশের অবস্থা ভবিষ্যতে উন্নত হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক