Web bengali.cri.cn   
বিশ্বে কোনো বিমান কোম্পানী আদৌ আছে কি যা সবচেয়ে নিরাপদ?
  2013-08-12 15:55:59  cri


জার্মানির হামবার্গে অবস্থিত জেট বিমান দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ কেন্দ্র অর্থাত্ JACDEC ১৯৮৯ সাল থেকে বিমান দুর্ঘটনা এবং বিমান নিরাত্তার তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। এ সংস্থা প্রতি বছর এয়ার লাইন্স কোম্পানীর নিরাপত্তা সূচক ও ফ্লাইট নিরাপত্তা তালিকা প্রকাশ করে থাকে। যাতে লোকজন জানতে পারে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা অবস্থা কি পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি এ সংস্থা ২০১২ সালের এয়ার লাইন্স কোম্পানীর নিরাপত্তা তালিকা প্রকাশ করেছে।

এ তালিকায় বিশ্বের ৬০টি বড় এবং নামকরা আন্তর্জাতিক এয়ার লাইন্স কোম্পানীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আপনারা জানেন, কোন বিমান কোম্পানী এ তালিকার শীর্ষ স্থানে রয়েছে? এটা সে দেশ তথা সকল বিমান যাত্রীদের জন্যও খুব বড় একটি গর্বের ব্যপার বটে। কোম্পানীটি হল ফিনল্যান্ড এয়ারলাইন্স। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এয়ার নিউজিল্যান্ড। চীনের হংকং-এর ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আর এরপর হল এমারেজ এয়ারলাইন্স এবং এমারেজের ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ। ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীনের তাইওয়ানের ইভা এয়ারওয়েজ এবং তাপ এয়ার পর্তুগাল। চীনের হাইনান এয়ারলাইন্স অষ্টম স্থানে আর অস্ট্রেলিয়ার ভার্জিন আটলান্টিক এয়াওয়েজ এবং বৃটিশ এয়ারওয়েজ।

বিশ্বের দশটি সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারলাইন্সের নামগুলো। আসলে কোনো বিমানের বিরুদ্ধে বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমরা কেবল প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য প্রকাশ করছি মাত্র, আর তা আমাদের প্রত্যেকেরই যাতায়াত নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এগুলো হল: তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইন্স, ব্রাজিলের টাম এয়ারলাইন্স, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, ব্রাজিলের গোল এয়ারলাইন্স, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার, সৌদি এয়ারলাইন্স, তার্কিশ এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজ এবং অস্ট্রেলিয়ার স্কাইওয়েস্ট এয়ারলাইনস্। এসব এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা এবং যাত্রী নিহতের রেকর্ড রয়েছে।

এখন আমরা জানাবো শ্রেষ্ঠ বা সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারলাইন্স ফিনল্যান্ড এয়ারলাইন্সের কথা। এ কোম্পানী একটানা অনেক বছর ধরে JACDEC-এর নিরাপত্তা তালিকার শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। ১৯৬৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫০ বছরে এ কোম্পানীর কোনো বিমান দুর্ঘটনার শিকার বা এ কারণে যাত্রী নিহত হওয়ার মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ কোম্পানীটি সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রিত, এটা সে দেশের বৃহত্তম এয়ারলাইন্স। ১৯২৩ সালে কোম্পানীর প্রতিষ্ঠিত হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ ও এশিয়ায় এই কোম্পানীর ফ্লাইটের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কোম্পানী সবসময় ফ্লাইটের নিরাপত্তাকে শীর্ষ স্থানে রাখে। ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে ধারাবাকিভাবে ঝুঁকি পরিচালনা ব্যবস্থা, উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ, ভালো বিমান এবং উচ্চ মানের মেরামত ব্যবস্থার প্রয়োজন। কিছু কিছু যাত্রী হয়তো মেরামত ও পরীক্ষার কারণে সৃষ্ট ফ্লাইট স্থগিতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কিন্তু অন্যদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, এভাবে যান্ত্রিক পরীক্ষা ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারে।

এদিক থেকে Emirates এয়ারলাইন্সের কথা উল্লেখ করতে হয়। আসলে এটি একটি নতুন কোম্পানী, যার প্রতিষ্ঠা ১৯৮৫ সালে। ইতমধ্যে এ কোম্পানীটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এয়ারলাইন্সের পুরস্কারও অর্জন করে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ কোম্পানীর উন্নয়নের গতি অনেক দ্রুত। বর্তমানে এই কোম্পানীর ২ শ'রও বেশি বিমান রয়েছে। বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১৩০টিরও বেশি শহরে যায় এ কোম্পানীর ফ্লাইট। যদিও কোম্পানীটি নবীন এবং এর উন্নয়নের গতি অনেক দ্রুত, তবুও এ এয়ারলাইন্সটিকে শ্রেষ্ঠ এয়ারলাইন্স ও সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারলাইন্সের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যায়। কারণ এ কোম্পানীটিও ফিনল্যান্ড এয়ারলাইন্সের মতই নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ কোম্পানী নিজের নিরাপত্তা পরিচালনাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করেছে। যাতে ঝুঁকি কমানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। বিশ্বে এ কোম্পানীটির জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি। কেননা নিরপত্তার ক্ষেত্রে এ বিমানে রয়েছে বিশেষ সচেতনতামূলক বাণী-"নিরাপত্তা, আমার দায়িত্ব"।

আমরা অনিরাপদ বা বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এয়ারলাইন্সের কথাও একটু বলি। কেননা যাত্রীদের সচেতন করাও আমাদের কর্তব্য তাই না। প্রথমেই আমরা বলতে চাই ভারত এয়ারলাইন্সের কথা। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনার যথেষ্ট রেকর্ড রয়েছে। হাস্যকর হলেও ভয়াবহ একটি তথ্য শ্রোতাদের জানাতে চাই যে, ২০০৮ সালের জুন মাসে এ কোম্পানীর একটি ফ্লাইটের বিমানচালক বেশ ক্লান্তি বোধ করে এবং ঝিমাতে থাকে, আপনারা জানেন এরপর কি হয়েছে? বিমানটির গন্তব্য ছিল জয়পুর থেকে মুম্বাই, কিন্তু বিমানচালকের ঝিমানোর কারণে বিমানটি মুম্বাই পার হয়ে আরো সামনে চলে যায়। বিমানচালক জানতেই পারে না যে তার ফ্লাইটের অবতরনের সময় হয়েছে এবং নির্দিষ্ট গন্তব্য ছেড়ে বহুদূরে চলে গিয়েছে। তখন বিমানে ১ শ'রও বেশি যাত্রী ছিল। এ ছাড়া চলতি বছরের ১২ এপ্রিল, এই একই কোম্পানীর একটি ফ্লাইট থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে নয়াদিল্লী যাচ্ছিল এবং আবারও পাইলটের ঘুমানোর ঘটনা ঘটে এই ফ্লাইটে। ফ্লাইটের দু'জন চালকের দু'জনই ঘুমিয়ে যায়। ঘুমানোর আগে তারা বিমানকে অটো ড্রাইভ-এ করে দেয়, যাতে বিমানটি চালক ছাড়াই ঠিক মতো চলতে পারে। তারপর তারা দু'জন একজন বিমানবালাকে বিমান চালানো দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাত্রীদের বিজনিস ক্লাস-এ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। শ্রোতারা, হয়তো আপনারা জিজ্ঞেস করবেন, বিমানবালা কি ঠিকমতো বিমানটি চালাতে পারেছিল? এর উত্তর হল অবশ্যই না, বরং বিমানবালা ভুল করে কোনো একটি বাটন প্রেস করলে অটো ড্রাইভ-ম্যানুয়াল ড্রাইভে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অর্থাত্ তখন শুধু বিমানচালকের পক্ষেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এদিকে চালকতো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অবশেষে বিমানচালক দ্বয়কে ঘুম থেকে তুলে এনে বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছিল। কি

এসব কারনেই ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স JACDEC-এর নিরাপত্তা তালিকার পিছনে অবস্থান করছে। ২০১০ সালের মে মাসে এ কোম্পানীর বোয়িং-৭৩৭ বিমানটি দুবাই থেকে উড্ডয়ন করে কিন্তু অবতরণের সময় এটি বিধ্বংস হয়েছিল এবং ১৬৬ জন যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে শুধুমাত্র ৮ জন বেঁচে ছিল। এটি ভারতের গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং সবচেয়ে বেশি হতাহতের একটি দুর্ঘটনা। এর কারণও উপরক্ত দু'টি ঘটনার মতো একই, বিমানচালকের ঘুম বা ঝিমানো। কেন এমন ঘটনা বার বার ঘটে এবং বার বার তথ্য মাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়? কোম্পানীটি কি আদৌ নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেয় এবং সত্যি কি একই ভুল এড়াতে চায়?

নিরাপত্তা পরিচালনার ক্ষেত্রে চার উপদান খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হল মানুষ, বিমান, পরিবেশ এবং পরিচালনা। এখানে মানুষ মানে বিমানচালক এবং বিমানের সব কর্মী, বিমান মানে উন্নত মানের বিমান বা যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত বিমান, আর পরিবেশ মানে আবহাওয়া, পরিচালনা মানে বিমান কোম্পানীর পরিচালনার আদর্শ, নীতি এবং পদ্ধতি। আমরা আশা করি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা দেখে বিমান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল সত্যি সত্যি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কিছু করবে, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক