0705yin
|
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, নতুন জীবনযাপনের পদ্ধতি অন্বেষণ করা, সামাজিক দায়িত্ব এড়ানো, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং পত্নীর বিশ্বাসঘাতকতাকে ভয় করা, নারীবাদের উত্থান এবং জেন্ডার সমতা প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইরানি তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের দের বিয়েভীতি বা দেরিতে বিয়ে করার প্রধান সামাজিক কারণ। পাশাপাশি হলিউড চলচ্চিত্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ভালোবাসা বিষয়ক টিভিনাটক ব্যক্তিখাতের স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে ইরানের হাজার হাজার ঘরে প্রবেশ করেছে এবং দ্রুত গতিতে ইরানি তরুণ-তরুণী ও যুবত-যুবতীরা সেগুলো গ্রহণ করেছে। বহির্বিশ্বের এ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ঐতিহ্যবাহী ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে তীব্র ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ইরানের অনেক বেশি তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতী মুক্ত ভালোবাসা এবং নিজেদের জীবনের তাত্পর্য ও মূল্য অন্বেষণ করে এখন। পাশাপাশি তাড়াতাড়ি বিয়ে করা এবং ধর্মীয় সামাজিক দায়িত্ব পালন করা - এ রকম প্রথাগত ধারণার প্রতি তাদের বিরক্তিভাব সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বৈরিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরান দফায় দফায় অর্থনৈতিক অবরোধের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হয়ে যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হচ্ছে, কর্মচ্যুতির হার বেড়ে চলেছে, নাগরিকদের আয় কমে যাচ্ছে এবং জনগণের জীবন যাত্রার মানের অবনতির ধারা চলছে। এর ফলে তরুণ-তরুণীদের ওপর চাপ বাড়ছে এবং কিছু মাত্রায় তাদের বিয়ে করার আকাঙ্খা কমে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইরানের সামাজিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, বিয়ের সময় কনে পক্ষকে বর পক্ষের দেনমোহর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। দেনমোহরের অর্থ বিয়ের সময় বা অব্যবহিত পরে না দিতে হলেও, পরে বৈবাহিক জীবনের যে কোনো সময় স্ত্রীর দাবি মতো সেটা পরিশোধ করতে হয়। দেনমোহর পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্বামীর কারাদণ্ডও হতে পারে। বর্তমানে ইরানের শহুরে পরিবারের দেনমোহর গড়ে প্রায় ১ লাখ ডলার। এছাড়া বিবাহভোজসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ অনেক পরিবারের জন্য সত্যিই একটি বাড়তি চাপ।
ইরানি তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা এখন বিয়ের উপযুক্ত সময় বিয়ে করে না। আবার যারা বিয়ে করে, তারা বিভিন্ন কারণে বাচ্চা নেয় না। এটা অবশ্য ইরানের জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার নিয়ন্ত্রণ করছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইরানের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ বেড়েছে। বার্ষিক বৃদ্ধি হার ছিল ৩.৫ থেকে ৪ শতাংশ। এরপর সরকার 'দুই বাচ্চা নিলে ভালো' শীর্ষক জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকর করার পর দেশটিতে জন্মহার কমতে থাকে এবং ২০১০ সালে এ হার ১.১৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১২ সালে ইরানের জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার ছিল ১.৩ শতাংশ। এটা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য মুসলমান দেশের চেয়ে অনেক কম।
২০১২ সালে ইরান দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কার্যকর থাকা জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি বাতিল করে। সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ এ ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে তিনি সক্ষম যুবক-যুবতীদের তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে এবং বাচ্চা নিতে উত্সাহ দেন, যাতে জনসংখ্যায় বয়স্ক মানুষের অনুপাত কমে। তিনি প্রকাশ্যে ইরানি যুবতীদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিয়ে করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের উচিত পুরুষদের ২০ বছর বয়সে এবং নারীদের ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করা। বর্তমানে পুরুষ ও নারীদের গড় বিয়ের বয়স ২৬ বছর ও ২৪ বছর। যুবক-যুবতীদেরকে বিয়ে ও বাচ্চা নিতে উত্সাহ দেওয়ার জন্য পদে বহাল থাকার সময় নেজাদ বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যেমন তাদেরকে বিবাহঋণ এবং সদ্যোজাত শিশুদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আর্থিক সহায়তার মাত্রা সীমিত হওয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এর ফলাফল দেখা যায়নি।
***প্রশ্ন: "ইরান কী ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকর করেছিল, যে কারণে সেখানে জন্মহার ১.১৬ শতাংশে নেমে গিয়েছিল ২০১০ সালে?"