Web bengali.cri.cn   
সহজ কর্মসংস্থানের জন্য কোন কোন সাবজেক্ট অধিক কার্যকর
  2013-07-01 15:27:36  cri

 


প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে তাদের শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন অথবা উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। তাই এক অর্থে বছরে এ সময়কে বলা হয়: "স্নাতক ঋতু"।

আর স্নাতক হওয়া মানে চাকুরির যোগ্যতা অর্জন করা, বলতে পারো 'চাকুরি' নামের ৫০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। তাইতো স্নাতকধারী ছাত্রছাত্রীরা সব সময়ে চলতি বছরটিকে "ইতিহাসে চাকুরি খোঁজার সবচেয়ে কঠিনতম বছর" হিসেবে চিন্হিত করে থাকে। কেননা এ প্রতিযোগিতা যেন সত্যিই ৫০ মিটার দৌঁড়ের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। এ সময়ে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের চাপ অনেক অনেক বেশি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কর্মসংস্থান আসলে দেশে অর্থনীতির অবস্থা, শিল্পের বিস্তার বা ক্রমাগত উন্নয়ন প্রবণতা এবং ছাত্রছাত্রী কোন ধরণের বিষয় বা সাবজেক্ট নিয়ে লেখাপড়া করেছে এ তিনটি উপাদানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যেমন, আর্থিক সংকট সত্ত্বেও জার্মানির উত্পাদন শিল্প ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আর্টস্ এবং শিক্ষা বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য চাকুরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। তবে প্রকৌশল বিষয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো চাকুরি এবং উচ্চ বেতন পেতে পারে অনেক সহজেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের আগে দেশ এবং অঞ্চলের কর্মসংস্থানের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে কোনো বিষয়ের কদর বেশি হতে পারে সে অবস্থা একটু জেনে নিয়ে সাবজেক্ট বাছাই করলে সহজে চাকুরি পেতে সহায়ক হবে বলে মনেকরি। তাই আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সহজ কর্মসংস্থানের জন্য কোন কোন সাবজেক্ট অধিক কার্যকর, এ বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কিছু আলাপ করবো।

প্রথমে আমরা দেখি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা কেমন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বর্হিভূত বিভাগের বেকারত্বের হার ৭.৫ শতাংশ। যা ২০০৯ সালের তুলনায় অনেক কমেছে। এ থেকে বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের অবস্থা উন্নতি হচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের অবস্থার উন্নতিও হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১২ সালে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর বেকারত্বের হার ৬.৩ শতাংশ। যা ২০১১ সালের ৮.৩ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্ন সাবজেক্টের বেতন কাঠামোও ভিন্ন হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের জনসংখ্যা জরিপ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিষয়ের দিক থেকে, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েশনের বেতন সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ও গণিতবিদ্যা দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এরপর হল বিজনেস, পদার্থবিদ্যা, সমাজবিদ্যা ইত্যাদি। আপনারা জানেন কি, কোন সাবজেক্টের ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাকুরির বাজার সবচেয়ে কঠিন? তা হল শিল্প ও শিক্ষা।

আসলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, তাই না? যদি কর্মসংস্থানকে একটি বড় গাছ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি হল এ গাছের শিকড়। চাকুরি খোঁজা প্রত্যেক শিক্ষার্থী হল এ গাছের এক একটি পাতা। পাতা নিজের আলোকসংশ্লেষণের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এ গাছ কতটা সমৃদ্ধ বা কতটা ভার বহন করার ক্ষমতা রাখে, তা নির্ভর করে এ গাছের শিকড়ের ওপর,

চীনে একটি কথা, গণিতবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যা ভালোভাবে শিখলে বিশ্বের যে কোনো দেশে চাকুরি খুঁজতে এতটুকু সমস্যা হবে না। আসলে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় চীন ও ভারতীয় ডাক্তারের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন শিক্ষার্থীদেরকে সবসময় ভালোভাবে এ তিনটি সাবজেক্টে পড়াশুনায় উত্সাহ দিয়ে আসছেন।

এখন আমরা জার্মানির দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। জার্মানির ফেডারেল শ্রমিক ব্যুরোর প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা গেছে, মেশিন টুলস্ ও ইলেক্ট্রোনিক বিষয়ে স্নাতক জার্মানির শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এ ব্যুরোর মুখপাত্র পোল এবসেন জানিয়েছেন, "ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাসের মতো এমন কিছু সাবজেক্টের তুলনায় ইলেক্ট্রোনিক ও কম্পিউটার বিসয়ে স্নাতকরা আরো সহজেই চাকুরি পেতে পারবে। কারণ উত্পাদন শিল্প অধিক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়"।

এখানে একটি পরিসংখ্যান আছে এবং তা এ কথার প্রমাণ করতে পারে। ২০১২ সালে জার্মানির সংযোজিত মূল্যের মধ্যে ২৫ শতাংশেরও বেশি উত্পাদন শিল্পের অবদান। আর্থিক সংকটের সময় দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি যদিও হ্রাস পেয়েছে, তবে রপ্তানীর মূল্য এবং জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে উত্পাদন শিল্পের শক্ত অবস্থানই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। এছাড়া দেশটি বিদেশের পেশাদার প্রযুক্তিবিদদের আকর্ষণের জন্য বেশ ভালো বেতনের অফার দেয়। যেমন বিদেশী প্রযুক্তিবিদদের আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মানি শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে জার্মানি সরকার তাদের জন্য ৬ মাসের বিনা খরচে থাকা-খাওয়াসহ জার্মানি ভাষা শিক্ষার সুবিধা প্রদান করে।

বোঝা যায়, জার্মানি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সত্যি অনেক কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। আচ্ছা, এখন আমরা এশিয়ার দেশগুলোর দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন একটি কথা খুব প্রচলতি রয়েছে যে, "ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেয়ে ভালো সাবজেক্ট বাছাই করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ"। সিউল বিশ্ববিদ্যালয়, কোরিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীদের ভাগ্যেই জোটে। তাই ভালো সাবজেক্ট বাছাই করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষক, ডাক্তার ও আইনজীবী এ তিনটি পেশায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক স্নাতকদের আকর্ষণ করছে। বোঝা যায়, যদিও এসব পেশা ঐতিহ্য, প্রাচীণকাল থেকে ভালো পেশা হিসেবে মনে করা হয়, তাই এগুলো আধুনিক যুগেও ভাল স্থান দখল করে আছে। ঐতিহ্যবাহী কনফুসিয়াস মতবাদের প্রভাবে দক্ষিণ কোরিয় মানুষ শিক্ষককে খুব সম্মান করে। একজন স্থানীয় পর্যটক ঠাট্টা করে বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবিবাহিত নারী শিক্ষক সবচেয়ে জনপ্রিয়, এরপর হল বিবাহিত নারী শিক্ষক, তারপর হল বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী শিক্ষক। যদিও এটা একটা ঠাট্টা, তবে তা থেকে বোঝা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষকতা কতটা জনপ্রিয় একটি পেশা।

এছাড়া ডাক্তার ও আইনজীবী পেশাও দক্ষিণ কোরীয় মানুষের চোখে খুবই ভালো পেশা এবং সম্মানজনক। এ পেশা স্থিতিশীল এবং এতে ভালো বেতন আছে, তাছাড়া সামাজিক মর্যাদাও খুব ভালো। তাই এর প্রতিদ্বন্দ্বিতাও তুমুল। যেমন আইনজীবী হতে চাইলে আইন পরীক্ষায় পাস করতে হয়। প্রতি বছর শুধু ৩ শতাংশের অধিক মানুষ এ পরীক্ষায় পাস করে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

অন্যদিকে অনেকেই হয়তো জানেনা যে, বিদেশি ভাষার মানব সম্পদ দক্ষিণ কোরিয়ায় কতটা জনপ্রিয় এবং ভালো বেতন পায়। দক্ষিণ কোরিয় মানুষ যারা খুব ভালোভাবে ইংরেজী ভাষা বলতে পারে, তাদেরকে খুব সম্মান করে।

এ ছাড়া চীনা ভাষা এখন দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রামগতভাবে হট সাবজেক্টে পরিণত হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি বিদেশ নির্ভর এবং চীন দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম অংশীদার। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিময় ইতোমধ্যেই রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য চীনা ভাষা বলতে পারে, এমন স্নাতকের জন্য কার্যকর একটি বাজারে পরিণত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক