Web bengali.cri.cn   
রাজকুমারীর বিয়ে কি রকমের
  2013-06-21 19:38:00  cri

 


রূপকথায় রাজকুমারীর চেহারার বর্ণনায় প্রকৃতির এমন কোনো সুন্দর রঙ নেই যার সাথে তুলনা হয় না, এমন কোনো সদগুণ নেই যা তার মধ্যে থাকে না, মোদ্দা কথা মানুষের কল্পনায় যা কিছু সুন্দর এবং ভালো তার সবই থাকে রাজকুমারীর মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে তাদের প্রেম সবসময় মানুষের মনকে মুগ্ধ করে। বাস্তবেও বিভিন্ন দেশের রাজকুমারীর প্রেম আর ভালোবাসার জীবন সবসময় বিশেষভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। রাজ পরিবারের বিয়ে অনুষ্ঠান মানেই কয়েক সপ্তাহজুড়ে সারা বিশ্বের আগ্রহী মানুষদের বিশেষ আলোচনার একটি বিষয় হয়ে ওঠে। সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টিতেও এই অনুষ্ঠান প্রধান আকর্ষণের একটি বিষয়। সাধারণ জনগণ তাঁকে বিশেষ মর্যাদা আর সম্মান প্রদর্শন করে নিজেকেই যেন গৌরবান্বিত করে। আবার রাজকুমারীর প্রতি তাঁদের কৌতুহলেরও শেষ নেই, তাঁর পছন্দ, জীবনাচার, শিক্ষা, সমজাসেবা এ সব জানার আগ্রহ তো থাকেই, তবে সবচেয়ে যে বিষয়টির প্রতি জনগণে অধিক আগ্রহ আর কৌতুহল তা হলো রাজকুমারীর প্রেম আর ভালবাসার জীবন।

রূপকথায় যেমনটি দেখা যায় যে, "অবশেষে তাঁরা সুখে শান্তিতে বাসবাস করিতে লাগিল" অর্থাত্ যেকোনো মূল্যে গল্পের শেষে রাজকুমারী আর রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে হবে এবং তাঁরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে। যদিও আমরা এটাকে বলি রূপকথা, আসলে এটাই হচ্ছে সাধারণের কল্পনাপ্রসূত আকাঙ্খা, যেভাবে তাঁরা সমাজকে দেখতে চায়, সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়, সেটাই রূপকথার মধ্যদিয়ে ফুটিয়ে তোলে। বর্তমান সময়ের অনেক রাজকুমার আর কুমারীর প্রেম আর বিয়ের গল্পের সাথে আপনার জানা রূপকথার গল্পের সাথে নাও মিলতে পারে। আপনি ভীষণ রকম অবাক হতে পারেন যখন জানবেন যে, রাজকুমারীর প্রেম আর বিবাহ আকর্ষণের কেন্দ্রে অন্য কোনো রাজকুমার নয় একজন সাধারণ পুরুষ, ছা পোষা কর্মচারী। হ্যাঁ সম্প্রতি সুইডেনের রাজকুমার প্রিন্সেস মাডেলেন মার্কিন যুবক ও'নিল-কে বিয়ে করেছেন। ও'নিল একটি ব্যাংকে চাকুরি করেন এবং দেশ বিদেশের সব ধনী গ্রাহকদেরকে কন্সুলেট সেবা প্রদান করে থাকেন। অন্যদিকে রাজকুমারী মাডেলেনের বয়স ৩০ বছর। তাকে "সুইডেন তথা সারা ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দরী আর আকর্ষণীয় রাজকুমারী" হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। তার সম্পর্কে এমনও বলা হয়ে থাকে যে, তার আকর্ষণীয় নীল চোখ আর তাঁর হাসি দেখে মানুষের মাথায় ঝিমঝিম ধরে যায়। মধুমাখা হাসিতে এমনই মায়ার হাতছানি যার ঘোর কাটাতেই আপনার এক সপ্তাহ লেগে যাবে। শুধু কি সুন্দরী! রাজকুমারী মাডেলেন যেন সত্যিই রূপকথার অপরূপ সুন্দরী এবং অগাদ ধন সম্পদের মালিক। তাঁর বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দে কাটানোর জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের মূল্য ১৬৫ বিলিয়ন ইউরো। ২০০৫ সালে "বিশ্বের দশজন সবচেয়ে ধনী অবিবাহিত মহিলার" তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ফোবর্স ম্যাগাজিন তাঁকে "বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তরুণ রাজকুমারীর" তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।

এবছর তাঁর বিয়ে হয়েছে, বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী, আকর্ষণীয় অবিবাহিত ধনী মানুষটির বিয়ে হয়েছে, তাঁর স্বামী কত ভাগ্যবান এবং সুখী। কেননা সাধারণ একজন ব্যাংক কর্মচারী থেকে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় থাকা সুন্দরী রাজকুমারীর স্বামী হওয়া সত্যি একটি বিশেষ ঘটনাতো বটেই। তবে শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আজ তাঁকে যত আভিজাত্যের মর্যাদায় দেখা হচ্ছে, কৈশরের এ রাজকুমারী কিন্তু আচরণগত দিক থেকে ততটা নিখুঁত ছিলেন না। তার বাবা মা তাঁকে এতটাই আদর যত্নে লালন পালন করেন যে, রাজকুমারী ছোট বেলা থেকেই বেশ অনিয়ন্ত্রিত, অসংযত আচরণে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। যখন তিনি ব্রিটেনে লেখাপড়া করতেন, তখন সংবাদ মাধ্যম যেন নিয়মিত তাঁর সঙ্গী ছিল। কেননা সাংবাদিকদের ক্যামেরা সব সময় তাঁকে খুঁজে পেত পানশালায়, সিগারেট হাতে এক দঙ্গল বন্ধুর আড্ডায় অথবা বেশ sexy কাপড়ে শপিংমলে। তাঁর এসব আচরণের কারণে সুইডেনের রাজ পরিবার খুব বিব্রত বোধ করতেন। এছাড়া তার দু'টি বিশেষ শখ রয়েছে-ড্রাগ রেসিং এবং ঘোড়ায় চড়া। প্রতি বছর সড়কে রেসিং করার জন্য তাকে অনেক টাকা জরিমানা গুণতে হতো।

কিন্তু বলতে পারো কার কৈশর জীবনে দূরন্তপনা, আর যৌবনে crazyness ছিল না? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষও পরিপক্ক হয়। রাজকুমারী মাডেলেনও আস্তে আস্তে পরিপক্ক হয়েছে। এরপর তিনি সেবামূলক কাজে অংশ নিতে অনেক আগ্রহী হয়ে ওঠে, এবং ক্রমে ক্রমেই তাঁর আচরণ, তাঁর অভিব্যক্তি, শিক্ষা, জ্ঞান সবকিছুতেই রাজ পরিবারের আভিজাত্য ফুটে উঠতে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনটাকে পিছনে ফেলে দিয়ে তিনি সত্যিই রূপকথার রাজকুমারীর মতোই মানব প্রেমী হয়ে উঠলেন। তিনি নিয়মিত ভাবেই নিইউয়র্কে বিশ্ব শিশু তহবিলে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, তবে আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং শিশুদের জন্য সাহায্য করে যাবো। এর পাশাপাশি তাঁর প্রেম ও ভালোবাসার গল্পও সবসময় সংবাদ মাধ্যমের কাছে একটি হট সাবজেক্ট হয়ে থাকে। বিয়ের আগে তাঁর দু'টি প্রেম ছিল। ২০০২ সালে তিনি অতি সাধারণ একজন আইনজীবীর প্রেমে পড়েন। তাঁদের প্রেম ৭ বছর স্থায়ী হয় এবং এ সময়ে তারা দু'জন বেশ গভীর পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে বিয়ের আগে তাঁর ছেলেবন্ধুটির সাথে অন্য মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকার খবর প্রকাশিত হলে এই সম্পর্কের অবসান হয়ে যায়।

এরপর ২০১১ সালে তিনি তাঁর স্বামী, ক্রিস ও'নিলের সঙ্গে পরিচয় হয়। রাজকুমারীর চোখে ও'নিল খুব বুদ্ধিমান, খুব অতিথিপরায়ণ, টেনিস, গল্ফ খেলতে পছন্দ করেন এবং সঙ্গীত ও শিল্প অনুরাগী। যেন আপাদমস্তক নিখুঁত একজন প্রেমিক পুরুষ। অন্যদিকে ও'নিলের চোখেও মাডেলেনের মধ্যে রয়েছে মাথা খারাপ করা সৌন্দর্য, অসম্ভব মিষ্টি একটি মেয়ে, ভীষণ মিশুক আর দয়ালু। ও'নিল প্রথম দেখাতেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, মাডেলেনই তাঁর জীবনে unique।

গত ৮ জুন এক মহা ঝাকঝমকপূর্ণ ঐতিহ্য আর আরম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাডেলেন এবং ও'নীলের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এ যেন সত্যিই রূপকথার গল্পের মতো একটি জীবন-গল্প, যে গল্পের শুরুতে রাজকুমারী নানা প্রতিকুলতা, বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়, অবশেষে সাহসী বীর রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে এসে কুমারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং "অতপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল"। মাডেলেন আর ও'নীলে প্রেমকাহিনীও যেন ঠিক সেই রূপকথার মতো। কেননা রাজকুমারীর প্রথম জীবন আর ভালোবাসার গল্পে ছিল ভাঙ্গনের সুর, কিন্তু রূপকথার গল্পের শেষ পরিণতির মতোই ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার ও'নীল আসে তাঁর জীবনে এবং অতপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। আমরাও তাদের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন কামনা করি, তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভকামনা।

এখন আমরা তাকাই ব্রুনেই-এর দিকে। ব্রুনেই-এর রাজকুমারী হাফিজা বিয়ের আগ পর্যন্ত বিশ্বের দশজন সবচেয়ে ধনী রাজকুমারীর প্রথম স্থানে ছিলেন। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর বিয়ে হয়েছে। রাজকুমারী হাফিজাও খুব সাধারণ একজন সরকারি কর্মচারীকে বিয়ে করেছেন। রাজকুমারি হাফিজার বয়স ৩২ বছর। মহা আড়ম্বরপূর্ণ রাজকীয় এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি ৮ দিন ব্যাপী স্থায়ী ছিল। শ্রোতা, আপনারা অবাক হবেন জেনে যে, ব্রুনেই-এর সুলতান অর্থাত্ রাজকুমারির বাবা তাঁর মেয়ের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ২০০৭ সাল থেকে। কেননা এটি তাঁর পরিবারের প্রথম কোনো বিয়ে এবং সেটা যদি হয় মেয়ের বিয়ে তাহলে তো কথাই নাই। তাই হাফিজার বিয়েটা যেন সত্যিই স্বপ্নে দেখা কোনো রূপকথার নায়িকার বিয়ের মতোই মনে হবে।

যারা ব্রুনেই-এর রাজ প্রাসাদে সেদিনের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন কেবল তাঁরাই রূপকথার গল্পকে বাস্তবে উপভোগ করতে পেরেছেন। কেননা তাদের বর্ণনা অনুযায়ী রাজ প্রাসাদের সব জায়গায় সোনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এমনকি জলের কলটিও ছিল সোনার, কার্পেট সোনার সুতা দিয়ে বোনা, ভোজসভায় প্রত্যেক অতিথির সামনে ছিল একটি সোনা বাটি। শ্রোতা, সত্যিই কি এটা রূপকথা নয়?

তাই আমরা কল্পনা করতে পারি তাঁর মেয়ে অর্থাত্ রাজকুমারির বিয়ে অনুষ্ঠান কত বিলাশী হতে পারে, সত্যি রূপকথার মত, হয়ত রূপকথার চেয়েও আরো বিলাশী। এটা যেন প্রত্যেক মেয়ের স্বপ্নের মত বিয়ের অনুষ্ঠান।

এখন আমরা নেপালের দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। নেপালের তথ্য মাধ্যম সম্প্রতি আবিস্কার করেছে যে, দেশের রাজকুমারী একটি ডেটিং সাইটে-এ লগ ইন করে নিজের তথ্য দিয়েছেন। নিজের ছবি দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন তাঁর একবার বিয়ে হয়েছিল, বর্তমানে একা এবং একটি ছেলে আছে তাঁর। তিনি এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একজন পুরুষকে খুঁজছেন, তাঁর শর্ত হল: বিয়ে হয় নি, এ পুরুষের বয়স হতে হবে ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, দৈহিক উচ্চতা ১৮৩ সেন্টিমিটারের বেশি, চেহারা সুন্দর, আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল।

এরপর রাজকুমারী তথ্য মাধ্যমকে জানান, তিনি কখনই এমন ওয়েবসাইটে লগ ইন করেন নি এবং পাত্রে সন্ধান চেয়ে কোনো তথ্য প্রদান করেনি। তিনি বলেন, এমন কাজ করার সময় আমার নেই। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য এবং ছবি থেকে অনেকই ধারণা করে থাকেন যে, হয়ত রাজকুমারীর কোনো বন্ধু এ কাজ করে থাকবে। আর তাই খবর প্রকাশের পর পরই এই ওয়েবসাইট থেকে তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট সব তথ্য প্রত্যাহার করে নেয় হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক