Web bengali.cri.cn   
জোংজি বানাতে শিখার মাধ্যমে চীনের ঐতিহ্যবাহী তুয়ান উ উত্সব উদযাপন করেছেন আফগান ছাত্র
  2013-06-21 18:48:15  cri

গত ১২ জুন ছিল চীনের চান্দ্রবর্ষের পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিন, অর্থাত্ ঐতিহ্যবাহী তুয়ান উ বা ড্রাগন নৌকা উত্সব। শানসি প্রদেশের থাই ইউয়ান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও যোগাযোগ কলেজের ২১জন আফগান ছাত্রছাত্রী বিখ্যাত খাদ্য প্রতিষ্ঠান 'শুয়াং হো ছেং'-এ এসে জোং জি বানানোর আনন্দ এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি উপভোগ করেন।

বারো জুন সকালে শুয়াং হো ছেং-এর কারখানা ছিল হাসি-আনন্দে পরিপূর্ণ। এক দল আফগান ছাত্র জোং জি বানাতে শেখেন সেখানে। দেখতে খুবই সহজ কয়েকটি কাজ, কিন্তু তাদের কাছে খুবই কঠিন। ছাত্র মোহাম্মদ জিয়া সাহিল বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা চালান, কিন্তু একটা জোং জিও বানান পারেন না। তিনি বলেন,

"আমার মনে হয়, এটা অসাধারণ কঠিন। বানাতে পারবো না।"

জোং জি হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যবাহী তুয়ান উ উত্সবের একটি প্রতীক। চীনা পরিবারগুলো কয়েকটি জোং জি খেয়ে তুয়ান উ উত্সব উদযাপন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার আরো বেশি মানুষ চীনা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। তারা নিজেদের আহরিত পদ্ধতিতে চীনা সংস্কৃতি উপভোগের প্রত্যাশা করে। সেকারণে তুয়ান উ উত্সবের জোং জি অনেক বিদেশির খাবার টেবিলে দেখা যায়। জোং জির স্বাদ ভালো, কিন্তু সেটা বানানো সবার জন্য সহজ নয়। যদিও জোং জির উত্পত্তিস্থান চীন, তবে এটা ভালোভাবে বানাতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা চীনেও খুব বেশি না। আফগানদের জন্য তো সেটা আরো দূরের কথা। কিন্তু আফগান ছাত্ররা জোং জি তৈরিতে অংশ নিতে আগ্রহী। তাঁরা বার বার চেষ্টা করেন। ক্লাসের প্রধান মোহাম্মদ মাহদি আনওয়ারি বলেন,

"মনে হয় আমার বানানো জোং জির চারটি কোণ নেই। কোনো কোনোটির তিনটি কোণ। কোনো কোনোটির চারটি কোণ।"

এদিকে মাহাম্মদ ইশাক আহমাদি দু'টি জোং জি বানিয়ে ফেলেন। তিনি অন্য ছাত্রদের শিখিয়ে দেন। তাঁর পাশে একজন ছাত্রকে বলেন,

"প্রথমে দু'টো বাঁশের পাতা পেচিয়ে তার এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে একটি শঙ্কুসদৃশ পকেট বানানো হয়। তারপর আঠালো চাল ও খেজুরগুলি ভেতরে দিয়ে উপরের বাঁশের পাতা দিয়ে প্যাক করা হয়। তারপর সেটিকে চার কোণ করে সুতা দিয়ে পেচাতে হয়। এভাবে একটি প্রমাণ আকৃতির জোং জি তৈরি করা হয়।"

জোং জি বানানো হচ্ছে তুয়ান উ উত্সবের ঐতিহ্যবাহী রীতি। আফগান ছাত্রছাত্রীরা যাতে জোং জি বানানোর আনন্দ উপলব্ধি করতে পারেন, সেজন্য থাই ইউয়ান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবারের এ আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও আদান-প্রদান কলেজের উপ-প্রধান জাও এন ইউয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় আশা করে, এবারের আয়োজনের মাধ্যমে আফগান ছাত্রছাত্রীরা তুয়ান উ উত্সবের ঐতিহাসিক বিষয় এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি উপলব্ধি করবেন। তিনি বলেন,

"তুয়ান উ উত্সবের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দিকটি খুবই গভীর। জোং জি শুধু একটি খাবার নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কাজেই জোং জি তৈরিতে তাদের অনেক কৌতূহল হবে। সুতরাং প্রাকৃতিকভাবে চীনা সংস্কৃতির কিছু বিষয় ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে মনে রাখা হবে। এটা তাদেরকে চীনা সংস্কৃতি উপলব্ধি করিয়ে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায়।"

শিক্ষকের কথা শুনে পাশে থাকা রাহমাতুল্লাহ রেজাই উত্তেজনার সঙ্গে তুয়ান উ উত্সব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন,

"জোং জি সম্পর্কে আমি যেটা জানি, সেটা এ রকম: চীনে প্রাচীনকালে ছুই ইউয়ান নামে একজন লোক ছিলেন। তিনি দেশকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি নদীতে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ চাইতেন না নদীর মাছ তাঁর হাড় খেয়ে ফেলুক। সুতরাং জোং জি বানিয়ে নদীতে রেখে দিতেন। জোং জি পেয়ে মাছ ছুই ইউয়ানের হাড় খেতো না।"

আফগান ছাত্ররা জোং জি বানানোর মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা চীনা সাংস্কৃতিক উপাদানও আহরণ করেছেন। ক্লাসের প্রধান মোহাম্মদ মাহদি আনওয়ারি বলেন, ছোট জোং জির পিছনে বেশ হৃদয়গ্রাহী গল্প রয়েছে। চীনা মানুষেরা জোং জি বানানো ও খাওয়ার মাধ্যমে পিতৃপুরুষকে স্মরণ করে। এটা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান কাজ। তিনি বলেন,

গত বছরের তুয়ান উ উত্সবে আমি জোং জি খাইনি। কিন্তু চলতি বছর আমরা জোং জি বানাতে শিখে ফেলেছি। আমি নিজেই ৫ বা ৬টি জোং জি বানিয়েছি। আমার মনে হয়, আজকের আয়োজনের মাধ্যমে আমি চীনা সংস্কৃতিকে আরো বেশি উপলব্ধি করেছি।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক