Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ঐতিহ্য, রীতিনীতি
  2013-06-03 16:12:07  cri



ভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কারণে বিভিন্ন দেশের ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতিও ভিন্ন। কেবল প্রেমানুভূতি বা ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেই নয়, প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন এবং বেশ মজার মজার রীতি নীতি রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের একজন শ্রোতার ফোন সাক্ষাত্কারও নিয়েছি, তিনি হলেন এস এম আনোয়ার কবীর, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, জোনাল কার্যালয় ,সিরাজগঞ্জ।

তিনি বাংলাদেশে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার রীতিনীতির বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাহলে প্রথমে আমরা একসাথে শুনি তার কথা।



বলা যায় মানব সভ্যতার যে আজকের যে ক্রমাগ্রসরতা তার মূলেও কিন্তু রয়েছে এই রোমান্টিক বিষয়টি। আর সে বিষয়টি হল প্রেম ও প্রেমের প্রস্তাব। আজকে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারী পুরুষ বা প্রেমিক প্রেমিকা অথবা স্বামী স্ত্রী কিভাবে একে অন্যকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে তাই নিয়ে আলোচনা করতে চাই। মানব মানবীর জীবনে প্রেম এক অনিবার্য সত্য, কিন্তু কিভাবে একে অন্যকে প্রেম বা ভালবাসার কথা প্রকাশ করা হয় বা প্রস্তাব করা হয় তার পদ্ধতি, রীতি নীতি একেক দেশে একেক রকম। আজকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ঐতিহ্য, রীতিনীতি নিয়ে আপনাদের সাথে মজার কিছু সময় কাটাতে চাই।

একটি ছেলে একটি মেয়েকে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে ছেলেটি কিভাবে তার প্রেমের বা পছন্দের কথা ব্যক্ত করছে। কেননা এ সময়ে তাকে কথায় হোক বা আচরনে হোক বা অন্যকোনো উপায়ে হোক নানান উপায়ে মেয়েটিকে প্রেমের কথা প্রকাশ করতে হয়। শুধু তাই নয় বিয়ের পরও স্ত্রীকে প্রেমের কথা বলা এবং তাকে কত ভালোবাসে তার প্রকাশ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই আমরা বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্বামীরা কিভাবে স্ত্রীকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে তার পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলবো। রাশিয়ার স্বামীরা যেন ছোট শিশুর মত, যখন তার মন ভালো এবং খুশি, তখন সে যে কোনো কাজ করতে তিনি এক কথায় রাজি। এমনকি রাস্তায় হাটতে গিয়ে সামান্য পায়ের ব্যথায় স্ত্রীকে কাঁধে করে বয়ে বেড়াতেও সানন্দে রাজি হবেন। কিন্তু যখন তার মন ভালো না, সাবধান, তাকে বাড়তি কথাতো দূরে থাক এমনকি প্রয়োজনের কথাটিও ভেবে চিন্তে বলুন। আসলে রুশ স্বামীদের বিশেষ গুণ হচ্ছে তারা প্রেমিকা বা স্ত্রীদের সাথে বেশ রসিকতা করতে পছন্দ করে। এ ছাড়া আরেকটি বিশেষ গুণ হচ্ছে তারা খুব ভালো রান্না করতে পারে। কিন্তু.....কিন্তু, তারা খুব কম রান্না করে।

তাহলে এ ক্ষেত্রে মার্কিনীদের সাথে রুশ স্বামীদের মিল আছে। মার্কিন স্বামীদের সম্পর্কে এমন একটি কথা আছে যে- "ছোট স্বামী, বড় শিশু"। অর্থাত্ তারা খেলাধুলা পছন্দ করে, শিশুর মতো হৃদয় এবং আন্তরিক। প্রকাশ্যে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে বান্ধবী বা স্ত্রীদের প্রতি গভীর শ্রোদ্ধা আর সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তবে মার্কিন পুরুষেরা আইনগত বিবাহ বন্ধনে জড়াতে বেশি পছন্দ করে না।

যদি রোমান্টিকের কথা বলো তাহলে এমন কোনো দেশের কথা বলতে পারো যে দেশের মানুষ ফরাসীদের চেয়ে বেশি রোমান্টিক হতে পারে? এর উত্তর হল নেই। বলা হয়ে থাকে, ফরাসি মানুষ বিশ্বের সবেচেয়ে রোমান্টিক। তাদের মতে, জীবন হল সবকিছু উপভোগ করার একটি বিষয়। ফরাসি পুরুষদের মনে নারীই হচ্ছে জগতে সকল আনন্দ আর নির্ভরতার একমাত্র আশ্রয়স্থল। ফরাসী পুরুষদের চোখে হিংসা, খামখেয়ালি, সহজেই রাগ করা, এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নারীর সৌদর্যের প্রতীক। যদি বাসায় খাবার জন্য কেবল একটি রুটি থাকে, তাহলে আপনারা কি অনুমান করতে পারেন যে স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ফরাসী স্বামী কি কি করতে পারে? তারা একটি সুন্দর গোলাপ ফুলের সাথে রুটির বিনিময় করবে এবং গভীর মমতার সাথে ফুলটি স্ত্রীর চুলে গুঁজে দিবে।

তাহলে আমি ফরাসি স্বামীদের ঠিক বিপরীত বৃটিশ স্বামীদের প্রেমাচরণের কথা বলবো। ব্রিটিশরা খুব স্বল্পভাষী, খুব ঠান্ডা মাথা, রক্ষণশীলএবং ধৈর্য । বৃটিশদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল খুব তাড়াতাড়ি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে কিন্তু সহজে নিজের মনের অনুভূতি অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না। তাই মনের কথা বা প্রমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রেও তারা খুব রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকে। ফরাসিদের মত বৃটিশরা রোমান্টিক নয় একেবারেই, যদিও মাঝে মাঝে স্ত্রীকে "dear" নামে ডেকে থাকে, তবে নিস্প্রাণ নিস্পৃহ সেই 'ডিয়ার' ডাকের মধ্যে তেতো, অম্ল, টক বা ঝাল থাক বা না থাক মিষ্টি পাবেন না কিছুতেই।

প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাবের রীতি নীতি নিয়ে জানার জন্য প্রথমে আমরা বৃটেন থেকেই শুরু করতে পারি কি বলো? আপনারা জানেন, ব্রিটেনের York শহরে ভারী মজার ঐতিহ্যবাহী একটি রীতি রয়েছে। এই রীতির কারণে এ শহরে ছেলেদেরকে তার পছন্দের নারীকে খুঁজে পেতে এতটুকু বেগ পেতে হয় না। কারণ এ শহরের মেয়েরা তাদের প্রেমে পড়া বা বিয়ের সিদ্ধান্তকে বিশেষ পদ্ধতিতে জানান দিয়ে থাকে। ভারী মজার এই পদ্ধতিকে আপনি ট্রাফিক লাইটের সিগন্যাল পদ্ধতির সাথে তুলনা করতে পারেন। অর্থাত্ মেয়েরা বিশেষ সিগন্যাল ব্যবহার করে শহরের ছেলেদেরকে জানিয়ে দিবে যে তিনি এখন প্রেম বা বিয়ের জন্য প্রস্তুত। যেমন যদি কোনো মেয়ে সবুজ রং-এর কাপড় পরে, ঠিক যেন ট্রাফিক লাইটের সিগন্যালের মত যার মানে, "হ্যাঁ, আমি এখন প্রেমের গাড়ি চালাতে প্রস্তুত"। যদি কোনো মেয়েকে হলুদ রং-এর কাপড়ে দেখেন, তাহলে মানে "হ্যাঁ, সম্ভব, ঠিক সিগন্যালের মতোই সতর্কতামূলক মানে প্রেমের পড়া না পড়ায় ফিফটি ফিফটি সুযোগ আছে"। আর যদি কোনো মেয়েকে লাল রং-এর কাপড়ে দেখেন তাহলে ভুলেও বঙ্গ ললনাদের ন্যায় মনে রঙ লেগেছে ভেবে বসবেন না যেন, বরং ঠিক সিগন্যালের মতো বা ফুটবল মাঠের লাল কার্ড প্রদর্শন অর্থেই ধরে নিতে হবে, অর্থাত্ এর মানে "না বন্ধু, আমার প্রেমের দুয়ার বন্ধ করে রেখেছি, সেখানে তোমার প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই'।

মহা প্রশান্ত মহাসাগরের trobiand দ্বীপপুঞ্জে নারী পুরুষদের প্রেম প্রকাশের রীতিকে আপনি ভয়ঙ্কর প্রেম বলতে পারেন তবে ভারি মিস্টি বলতেই হবে। এখানে যদি একটি মেয়ে কোনো ছেলেকে খুব জোরে কামড়ে দেয়, congratulations, এর মানে যত জোরে কামড় তত গভীর প্রেম, অর্থাত্ মেয়েটি ছেলেটিকে গভীর ভাবে ভালোবাসে কামড়ে দিয়ে তা জানিয়ে দিল।

এবার তাহলে এখন আমরা কঙ্গো'র দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। সে দেশে যখন একটি ছেলে যদি কোনো মেয়েকে প্রস্তাব দিতে চায়, সাধারণত এ সময়ে মেয়েকে একটি রোস্টেড পাখি বা ঝলসানো পাখি উপহার দিয়ে থাকে এবং মেয়েকে বলে যে, এ পাখি আমার নিজের শিকার করা। আর যদি মেয়ে রাজি হয়, তাহলে সে ছেলেকে একটি সিদ্ধ ভুট্টা উপহার দিয়ে বলবে এ ভুট্টা আমার চাষ করা।

এ ক্ষেত্রে মেক্সিকোর ছেলেরা বেশ রোমান্টিক। যদি কোনো মেয়েকে পছন্দ করে তাহলে ছেলেটি তাঁর প্রেমের প্রস্তাব স্বরূপ একটি সঙ্গীত ব্যান্ড নিয়ে মেয়ের ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রেমের সুর আর সঙ্গীত বাজাতে থাকবে। এমন ও হয়ে থাকে যে সারা রাত ধরে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে একটানা সুর বাজিয়ে যেতে থাকবে। ভীষণ রোমান্টিক তাই না?

খ: আর তান্জানিয়ার কিছু সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী কোনো ছেলে যদি তাঁর প্রেমীকাকে খুঁজতে চায়, তাহলে তাকে প্রথমে সিংহ'র মত বড় এবং বিপদজনক কোনো পশুকে হত্যা করতে হয়, এর মানে প্রেমের জন্য তাঁর সাহসের প্রকাশ করতে হয়, যেন মেয়েটি তার সাহস দেখে তাকে ভালোবাসে।

আর আফগানিস্তানের কিছু উপজাতি এলাকার ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি ছেলে যখন একটি মেয়েকে ভালোবার প্রস্তাব করতে চায়, তখন ছেলেটি মেয়ের বাসার সামনে দাড়িয়ে আকাশের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে থাকবে, এর অর্থ হল আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু এটা শুনতে বেশ একটু আতঙ্কাজনক, তাই না?

এর তুলনায় হল্যান্ডে প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার রীতিনীতি বেশ রোমান্টিক এবং কবিতার মত। যদি আপনি কোখনো দেখেন যে, কোনো ঘরের জানালার গোবরাটে গোলাপ ফুল রাখা আছে, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, ঐ ঘরের মেয়েটি আপনাকে বলতে চাচ্ছে, 'হে তরুন পথিক, এই দেখো আমি এখানে, আমাকে প্রস্তাব দাও, আমিতো প্রেমের জন্য প্রস্তুত। বাহ! বাহ!

আজকে আমরা বেশ মিষ্টি একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করলাম। জানি না আপনার বিয়ে হয়েছে কি না, জানিনা আপনি এখনো প্রেমে পড়েছেন কিনা, যদি দুটির কোনোটিই আপনার জীবনে না এসে থাকে, আমি নিশ্চিত করে বলে পারি, আপনার মনের প্রিয় মানুষটিকে ভালবাসার কথা বলার জন্য উপরক্ত রোমান্টিক রীতি কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে আইডিয়া পেতে সহায়তা করবে। তবে শ্রোতা বন্ধু লাল রঙের অর্থ সব সময়ে মনের রঙ নয়, লাল কার্ড অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে, ভালবাসার কথা বলা ক্ষেত্রে এই সত্যটি ভুলে যাবেন না কিন্তু।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক