Web bengali.cri.cn   
দুর্ঘটনায় কোন ধরনের ত্রাণ কার্যক্রমকে বলা যায় কার্যকর?
  2013-05-20 18:33:37  cri

সম্প্রতি বাংলাদেশের রানা প্লাজার দুর্ঘটনা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সারা বিশ্ব এ জন্য মর্মাহত। যদিও আমরা চীনে, তবে আমরা সবসময় এ ঘটনার ওপর দৃষ্টি রেখেছি এবং যত বেশি ও দ্রুততম সময়ে সম্ভব জিবিত শ্রমিকদের উদ্ধার হওয়া কামনা করেছি।

দুর্ঘটনা শুধু দেশ ও জনগণের ক্ষতি সৃষ্টি করবে তা নয়, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরিহ মানুষের হতাহত, সুখী পরিবারের ধ্বংস হওয়া। সম্প্রতি চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের লু শানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছে। এতেও অনেক হতাহত হয়। এমন দুর্ঘটনার সামনে আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই, কোন ধরনের ত্রাণ কার্যক্রমকে বলা যায় কার্যকর? এ ক্ষেত্রে সরকার আর কি কি করতে পারে? আরো বেশি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কিভাবে ত্রাণ কাজ চালালে ভালো হত? আমাদের অনেক বেশি প্রশ্ন আছে এ বিষয়ে। কারণ তা অসংখ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত।

ভূমিকম্প, সুনামি অথবা বিভিন্ন দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করলে আমরা প্রথমে "উদ্ধার ও ত্রাণের" কথা ভাবি। এখন রাশিয়া, ও জাপান ইতোমধ্যেই দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী খুব কার্যকর একটি ত্রাণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। দেশের বাহিনী হোক, ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবক হোক, তাদের পেশাদার ত্রাণের কারণে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমে যায়। তাই এ দুটি দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে বা এখান থেকে হাতে কলমে শিখতে বিভিন্ন দেশ বেশ আগ্রহী।

রাশিয়ার ভূখন্ড অনেক বড়, প্রাকৃতিক পরিবেশ বৈচিত্রময়। এ দেশে বেশি বেশি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সমাজে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রাবাদের হুমকিও দেখা যায়। তাই এসব ব্যবস্থা মোকাবিলার জন্য রাশিয়া দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী একটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এ ব্যবস্থার নাম হল " জরুরী পরিস্থিত মোকাবেলা ও দূরীকরণ ব্যবস্থা"। ফেডারেশন থেকে গ্রাম পর্যন্ত পাঁচটি স্তরে ত্রাণ ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এভাবেই দুর্ঘটনা ঘটলে খুব তাড়াতাড়ি সব সম্পদ একসাথে সংগ্রহণ এবং কাজে লাগাতে পারে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রাশিয়ার জরুরী অবস্থা মোকাবিলা বিভাগ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ শক্তি কেন্দ্র। এ বিভাগের প্রতি রাশিয়ায় সুনাম রয়েছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে এ বিভাগের শক্তি মত্তা ও কার্যকরিতা সম্পর্কে অনুধাবন করা যেতে পারে। ২০১২ সালে অগ্নিকান্ড ও বিমান দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এ বিভাগ ২ লাখ ১৪ হাজার জনকে উদ্ধার করেছে। এ বিভাগ দেশের অর্ধেকেরও বেশি গাড়ি দুর্ঘটনা মোকাবিলা করেছে। এ ছাড়া ১.৫ লাখ লোকজনকে উদ্ধার ও ত্রাণ সেবা দিয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রুশ প্রেসিডেন্ট সরাসরি এ বিভাগের নেতৃত্ব দেন।

এখন আমরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে রাশিয়ার ত্রাণ শক্তি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। ২০০৭ সালে চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে নিখোঁজ কয়েকজন নাগরিককে উদ্ধার অভিযান চালায়। রাশিয়ার জরুরী অবস্থা মোকাবিলা বিভাগ ৪০ জনেরও বেশি ত্রাণ বিশেষজ্ঞ দলের সাথে পাহাড়ি এলাকায় উড়তে উপযোগী দু'টি হেলিকপ্টার এবং বিভিন্ন ধরনের জাহাজ ও নানা ধরনে উদ্ধার সামগ্রী, সাজসরঞ্জাম পাঠায়। তাদের মধ্যে ডুবুরি আছে, পর্বতারোহী আছে, ডাক্তারও আছে। বলা যায়, ত্রাণ কাজ চলাকালে যে কোনো আকষ্মিক অবস্থা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তাদের এই ত্রাণ দল।

এখন আমরা জাপানের দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। আমরা জানি, জাপানে ঘন ঘন ভূমিকম্প ঘটে। ভূমিকম্পের সৃষ্ট সুনামিও এ দেশের জন্য বিরাট ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য জাপান খুব কার্যকর ত্রাণ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে এবং এ দেশের বিভিন্ন ধরনের উদ্ধার ও ত্রাণ ব্যবস্থা রয়েছে। জাপানে জাতীয় দমকল বিভাগ এবং আঞ্চলিক দমকল বিভাগ হল ভূমিকম্প পরবতীঋ উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযানের কেন্দ্রীয় বিভাগ। এই বিভাগ নিয়মিত ভাবে উদ্ধার অভিযান সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করে থাকে। যাতে সত্যি দুর্ঘটনা ঘটলে দমকল কর্মীরা কার্যকরভাবে উদ্ধার কাজ চালাতে পারে।

জাপানের দমকল আইন অনুযায়ী বিভিন্ন শহর বা জেলায় দমকল বাহিনী রয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এ বাহিনী। কিছু কিছু আঞ্চলিক সরকার তাদের নিজস্ব পেশাদার উদ্ধার কর্মী বা দল রয়েছে এবং আঞ্চলিক সরকার এদেরকে বেতন প্রদানও করে থাকে। আবার বেশ কিছু কিছু অঞ্চলে লোকজন শুধু স্বেচ্ছায় এমন কাজ করে থাকে, কোনো বেতন বরাদ্দ নেই তাদের জন্য। ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাপানে এমন স্বেচ্ছাসেবক দলের সংখ্যা ২৪৭৪টি। দমকল দলের সদস্যের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮.৯ লাখেরও বেশি। এরা প্রত্যেকেই পেশাদার কর্মীদের মতোই উদ্ধার ও ত্রাণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। ফলে যে কোনো দুর্ঘটনার সময় এরা বিশেষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

জাপানের প্রতিরক্ষা বাহিনীও উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের খুব গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। এই বাহিনী বিশেষ দুর্যোগ কবলিত এলাকায় সরকারের নির্দেশে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নিয়ে থাকে। জাপানের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইন অনুযায়ী বাহিনী প্রধানত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প ও আণবিক দুর্ঘটনা এ তিন রকমের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নিতে পারে। ২০১১ সালে জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় প্রায় ১ লাখেরও বেশি সৈন্য দুর্যোগ এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণ করে।

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকরাও কিন্তু দুর্ঘটনা কবলিত অঞ্চলে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে বিশেষ অবদান রেখে থাকে। জাপানে দূযোর্গকালীন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দলের অংশ নেয়ার ইতিহাস সুদীর্ঘ। সরকার এ ক্ষেত্রেও বিশেষ আইন প্রণয়ন করেছে, যাতে স্বেচ্ছাসেবকের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি জাপানে হইয়োগোকেন নানবুতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর জাপানে প্রায় ১৩ লাখেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নিয়েছিল। সেই বছরকে জাপানের "স্বেচ্ছাসেবক" দলের নবযুগের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিভিন্ন স্তরের আঞ্চলিক সরকারের সমন্বয়ে গঠিত "স্বেচ্ছাসেবক কেন্দ্র" হল স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা। স্বেচ্ছাসেবকরা কেন্দ্রের কাছে আবেদন করার পর কেন্দ্র প্রথমে তাদেরকে দুর্যোগ এলাকার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়, এরপর তাদেরকে দূর্গত এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য-সামগ্রী দিয়ে উদ্ধার অভিযানের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয় এবং সবশেষে, তাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক বীমা ক্রয় করার পরই কেবল তাদেরকে ঐ সকল দুর্গত এলাকায় পাঠানো যাবে। এছাড়া এ কেন্দ্র সবসময় সাধারণ নাগরিকের জন্য দুর্ঘটনার সময় নিজের নিরাপত্তা রক্ষার পদ্ধতিও শিখিয়ে থাকে।

জাপানের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের অনেক অভিজ্ঞতা আছে, তাই জাপানের আন্তর্জাতিক উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মীদের সুনাম বিশ্বখ্যাত। তারা সেচ্ছায় এবং সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দেশের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নিয়ে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক