Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী দশ জন মানুষ
  2013-04-15 16:04:41  cri

প্রথমে আমরা আপনাদেরকে আই কিউ অর্থাত্ তাত্ক্ষণিক বুদ্ধির কয়েকটি গ্রেড বা স্তর নিয়ে একটু ব্যাখ্যা করবো। বহুবছরের আই কিউ গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় অর্ধেক লোকের আই কিউ ৯০ থেকে ১১০-এর মধ্যে। তাই এ সংখ্যাকে স্বাভাবিক পর্যায় হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আর যদি আপনার আই কিউ'র সংখ্যা ১৩০-এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে আপনাকে একজন খুব বুধিমান মানুষ বলা যায়, এবং বিশ্বের শুধু মাত্র ২.৫ শতাংশের মানুষের আই কিউ সংখ্যা ১৩০-এর উপরে। আর যদি আপনার আই কিউ সংখ্যা ১৪০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তো congratulations, আপনাকে, কেননা তখন আপনি রীতিমত একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠত হয়েছেন। শ্রোতা, বিশ্বে এই ধরনের মেধাবির সংখ্যা মাত্র ০.৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপট তথ্য জানার পর এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী কয়েক জন ব্যক্তির কথা নিয়ে আমাদের শ্রোতাদের সাথে মজার কিছুটা সময় কাটাতে পারি তাই না? এক্ষেত্রে প্রথমে যার নাম বলবো তিনি থাও চে সুয়ান, তাঁর বয়স ৩৭ বছর, তিনি হলেন চীনা বংশদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান। তাঁর আই কিউর সংখ্যা ২৩০, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী দশ জনের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন।

তাঁর বাবা শাংহাইবাসী, তার মান কুয়াং তুংবাসী। দু'জনেই হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ধারী। থাও চে সুয়ানের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায় এবং তিনি হলেন বড়। ছোটবেলা থেকেই অঙ্গ ও ভাষা ক্ষেত্রে তাঁর সহজাত প্রতিভা বুঝা যায়। এখানে একটি ছোট গল্প আছে এবং এ গল্প থেকেই বোঝা যায় তার সহজাত প্রতিভা কত উচ্চমানের। একবার তার পরিবার একটি পার্টি আয়োজন করেছে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু অনেকেই এসেছে, এ ছাড়াও অনেক ছোট শিশুও তাদের বাবা মার সঙ্গে এ পার্টিতে এসেছে। আপনারা কি জানেন, তখন থাও-এর বয়স শুধুমাত্র ২ বছর, তবে সে পার্টিতে তিনি ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং ইংরেজি ভাষা শেখায়, সবাই ওর এই গুণ দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায় এবং থাওকে বিশেষ প্রশংসা করে।

মাত্র ২ বছর বয়স কিন্তু শরীরের অঙ্গ ও ইংরেজী সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান সে ইতমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছে। সাধারণত ২ বছর বয়সের শিশুরাতো কেবল খেলাধুলা আর আনন্দ ফূর্তি করেই সময় কাটায়। তাহলে থাও কিভাবে এত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারলো? বিশ্বাস করি অনেক শ্রোতাও এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। থাও-এর বাবা জানান, আসলে ছোট থাও শিশু টিভি অনুষ্ঠান "seasame street" থেকে শিখেছে।

তাঁর আই কিউ'র আরো বেশি প্রমাণ আছে। যখন থাও-এর বয়স ৮ বছর, তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা অর্থাত্ এস এ টি'র গণিতবিদ্যা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এবং তুমি জানো তার পরীক্ষা ফলাফল কত? ৭৬০ পয়েন্ট, আর তুমি জানো এ পরীক্ষার full mark কত? ৮০০ পয়েন্ট। তিনি ৯ বছর বয়স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ্যা শিখতে শুরু করেন, এবং ১০ বছর বয়স থেকে একটানা তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক গণিতবিদ্যা অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন, তিনি যথাক্রমে ব্রোঞ্জ, রৌপ্য এবং স্বর্ণপদক পেয়েছেন। তিনি এ প্রতিযোগিতার ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ অংশগ্রহণকারী, তিনিও এ প্রতিযোগিতার ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ পুরস্কার অর্জনকারী মানুষ।

এপর্যন্ত তিনি ২৩০টিরও বেশি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছন এবং ২০০৬ সালে তিনি গণিতের সর্বোচ্চ পুরস্কার "fields" পেয়েছেন। দেখো, তাঁর ৩৭ বছরের জীবনে কত বড় সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

যদি কেউ ৬ মাস বয়সে কথা বলতে পারে, তাকে কি বলবে, আর এটাকে কি তুমি বিশ্বাস করবে?কিন্তু বিশ্বাস তোমাকে করতেই হবে। কেননা এই মানুষটিকেও সবচেয়ে মেধাবী মানুষের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম কিম উং ইয়ুং, এখন তাঁর বয়স ৫০ বছর।

তাঁর আই কিউ ২১০। তাঁর বাবা মায়ের যত্ন আর ভালবাসায় এই শিশু ছয় মাসের মধ্যেই কথা বলতে শুরু করে। আর যখন তাঁর বয়স ৩ বছর, তখন সে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন ও জার্মান ভাষা পড়তে এবং লিখতে পারে। এরপর সে কোরিয় ভাষা ও চীনা ভাষায় কবিতাও লিখতে শুরু করে দেয়।

আরো বিস্ময়ের কথা হল, গণিতবিদ্যা ক্ষেত্রেও শিশুটি খুব প্রতিভাবান ছিল। ৩ বছর বয়স থেকেই সে খুব জটিল ও কঠিন ক্যালকুলাস সমস্যা সমাধান করতে পারতো।

কেবল নিজ দেশ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রও তাঁর বিষয়ে বিশেষ উত্সাহ দেখিয়েছে। লস এ্যাঞ্জেলেসের একটি হাই স্কুল চার বছর বয়সী কিম উং ইয়ুংকে যুক্তরাষ্ট্র পড়াশোনার আমন্ত্রণ জানায়। দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ভর্তি করতে চেয়েছিল। তার যখন তাঁর বয়স ৮ বছর, তখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় মহাকাশ ব্যুরো অর্থাত্ নাসা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করার আমন্ত্রণও জানিয়েছে। এরপর সে নাসার জন্য ১০ বছর কাজ করেছে।

তিনি ১৫ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় ডক্তরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর হয়ত অনেকেই মনে করবেন, তিনি নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রে থাবেন এবং তাঁর ভবিষ্যত্ নিশ্চয়ই অনেক অনেক উজ্জ্বল এবং অসাধারণ হবে। কিন্তু তা নয়। তিনি ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তিনি একটি খুব সাধারণ কোম্পানীতে সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেশি বেতন নেই, উচ্চ পদ নেই। অতি সাধারণ একটি চাকরি।

তাঁর দেশের অনেকেই বলেছিল, মেধাবী শিশুর রূপকথা ভেঙে গেছে। আসলে তিনি মনে করেন, আগে তাঁর জীবন যেন একটি মেশিনের মত, অন্যের চাহিদা মত আমি জীপনযাপন করেছি এবং কাজ করেছি। আসলে আমি শুধু একজন সাধারণ মানুষ হতে চাই। আমি আনন্দ চাই। এটাই হল আমার নিজের জীবন, আর আমি আমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবন উপভোগ করতে চাই।

এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একজন অভিনেত্রীর কথা বলবো। তিনি দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম, তাঁর অভিনয় সবাই পছন্দ করে, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তিনি খুবই বুধিবান এবং মেধাবী, তার আই কিউ ১৮০। তিনি হলেন মার্কিন অভিনেত্রী জেমস উজ।

তিনি ছোটবেলা থেকেই শ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিলেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা অর্থাত্ এস এ টি পরীক্ষায় তিনি full mark পেয়েছেন। অনেক প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্পূর্ণ বৃত্তি দিয়েছিল। কিন্তু তিনি অবশেষে এম আই টি অর্থাত্ তে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে উজ অভিনয় করতে এত পছন্দ করেন যে ১৯৬৯ সালে তিনি এম আই টির লেখাপড়া বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছন এবং অভিনয় জগতের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত তিনি golden globe-এর একবার মনোনয়ন, অস্কারে দু'বার মনোনয়ন এবং তিন বার এমী পুরস্কার পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক