Web bengali.cri.cn   
ফার্স্ট লেডি
  2013-04-01 16:02:00  cri

ফার্স্ট লেডি কূটনীতি হচ্ছে একটি দেশের শীর্ষ নেতার কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফার্স্ট লেডির সুন্দর-সদাচরণ এবং তাঁর প্রবল ব্যক্তিত্ব একটি দেশের সার্বিক কূটনীতি-আচরনের ওপরও প্রভূত প্রভাব বিস্তার করে। কিছু কিছু দেশে ফার্স্ট লেডির কূটনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করা যেন ইতোমধ্যেই যেন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি সবসময় প্রেসিডেন্টের ছুটি কাটানোর জায়গা "ডেভিড ক্যাম্পে" সফররত বিদেশি নেতাদের পরিবারে অভ্যর্থনা করেন। বিষয়টি ইতোমধ্যেই একটি রীতি বা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কথা যখন বললে তখন এক সময়ের ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিন্টনের কথা না বললে আজকের আসরটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই লেডি সবচেয়ে আগ্রহের বা পছন্দের বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত স্বামী বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে হোয়াইটহাউসে ছিলেন। এই সময়কালে তিনি সবসময় স্বামীর সঙ্গে বিদেশ সফর করতেন আবার কখনো কখনো নিজেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। যেমন, ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে তিনি ক্লিন্টনের সঙ্গে জাপানে গিয়ে জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে নরওয়ে-এ অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেসিডেন্ট নিলসন মানদেলার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

ঠিক তাঁর নিজের কথার মত, তিনি বলেছিলেন যে, আমি সবসময় ক্লিন্টনের কূটনীতি দলকে ত্যাগ করে নিজেই কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেই। আসলে একটি দেশ কতটা সমৃদ্ধ তার অনেকটাই নির্ভর করে সে দেশের নারী কতটা শিক্ষিত এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ আচরণে সমৃদ্ধ তার ওপর। হিলারি নিজে একটি বইও লিখেছেন, বই-এর নাম হল "ইতিহাসকে স্বচোখে দেখি"। কেন তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বছরগুলোতে আমি ফার্স্ট লেডি ছিলাম, সে সময়ে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি শিখেছি তা হল: দেশের বিভিন্ন কুটনৈতিক ব্যাপারাদির ভালমন্দ আসলে নেতাদের পারস্পরিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। আর সম্পর্কের উন্নয়ন এবং তা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক সংলাপ খুব প্রয়োজন। বলা যায় এটাই একমাত্র পথ যা সহজেই সমস্যার সমাধান আর সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো হলে দেশের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। যদি আমরা জিজ্ঞেস করি, আপনার দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ফ্যাশনাবল ফার্স্ট লেডি কে? আপনার উত্তর কি হবে?

যদি আমরা বলি হিলারি একজন খুব ক্ষমতাধর নারী, তাহলে ব্রুনি তার তুলনায় একদম ভিন্ন। তিনি সবসময় সবচেয়ে নতুন স্টাইলের কাপড় পরতে পছন্দ করেন। যতবার তিনি স্বামী সার্কোজির সঙ্গে বিদেশ সফর করেন ততবারই সকল মিডিয়া যেনো তাঁর ওপরেই বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকে।

তিনি খুব ভালো করে ফার্স্ট লেডির ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন ২০০৮ সালে যখন তিনি সার্কোজির সঙ্গে ব্রিটেন সফর করেন, তিনি ব্রিটেনের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি অনুযায়ীই কাপড় বাছাই করেন। মাথায় ধূসর রংয়ের টুপি, গায়ে একই রংয়ের ড্রেস, হাতে কালো রংয়ের দস্তানা। ব্রিটেনের তথ্য মাধ্যম তাঁকে প্রশংসা করে বলেছে, তিনি যেন প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়নার মত অমায়িক আর রুচিশীল। ফেইফেই, তুমি জানো ঐ সফরের এক সন্ধ্যায় একটি ভোজসভায় রাষ্ট্রপ্রধান দম্পতিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। সে অনুষ্ঠানে যোগদিতে তিনি নিজেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে ছিলেন। আর তা দেখে একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেই ফেলেছেন যে, কেউই যেন আর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা আলোচনা করতে আগ্রহী নয়, ব্রুনি-ই যেন এই একমাত্র আলোচ্য টপিক।

আসলে চীনের নতুন ফার্স্ট লেডিও বিভিন্ন মহলের প্রশংসা পেয়েছেন এবং সবাই তাঁকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় বলেছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি জিনপিংয়ের প্রথম বিদেশ সফর নিয়ে গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচনা হয়—এটাই স্বাভাবিক। তবে মজার বিষয় হচ্ছে তাঁকে নিয়ে নয় বরং বেশ মাতামাতি চলছে ফার্স্ট লেডি ভেং লিইউয়ানকে নিয়ে।

লাস্যময়ী ভেং লিইউয়ান অবশ্য আগে থেকেই নিজ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। গায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। আর যখন তিনি সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁদের সফরের প্রথম পর্যায়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বিমান থেকে নামার পর থেকেই চীনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভেং লিইউয়ানের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে।

আসলে সাধারণত চীনের গণমাধ্যমে দেশের ফার্স্ট লেডিকে নিয়ে তেমন আলোকপাত করা হয় না। তবে এবার এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। চীনের প্রায় সব রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রে প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং ও ভেং লিইউয়ানের ছবি ফলাও করে ছাপানো হয়।

গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার সম্পাদক হু শিজিংয়ের মতে, এই দৃশ্য চীনাদের খুশি করেছে। কারণ, এমন দৃশ্যের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষা করছিল। রাশিয়ায় যখন রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছিল, তখন লিইউয়ানের মুখে হাসি লেগে ছিল। মূলত লিইউয়ানের এই হাসি এবং স্টাইল ছিল চীনের সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহারকারীদের প্রধান আকর্ষণ। একজন লিখেছেন, 'কী রুচিবোধ!' আরেকজন লিখেছেন, 'কী দারুণ সৌন্দর্য!'। লিপন, তুমি কি জানো, বিদেশ সফরকালে ভেং লিইউয়ান যে কাপড় পরেছেন এবং যে ব্যাগ হাতে নিয়েছেন, তা এখন চীনা ক্রাতাদের মধ্যে, বিশেষত নারী ক্রেতাদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়, সবাই একই রকমের কাপড় কিনতে চায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক