Web bengali.cri.cn   
স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস
  2013-03-14 20:08:25  cri

খাবারের পুষ্টি এবং পুষ্টি গ্রহণের অভ্যাস বিষয়ে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। কিন্তু খাবার খাওয়া বা গ্রহণের সময় বা পদ্ধতিও আপনার শরীর সুস্থ্য ও সুন্দর রাখতে পারে সে সম্পর্কে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি? তাহলে শুনুন, সম্প্রতি চীনের থিয়ান চিন পুষ্টি সোসাইটির বোর্ড অব চেয়ার‌ম্যান ফু চিন রু এবং প্রথাগত চীনা মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাং হু তেসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খাবার খাওয়ার সময়ে পালনীয় স্বাস্থ্যসম্মত দশটিরও বেশি টিপস প্রদান করেছেন। বন্ধুরা, আসুন তাহলে, আজকের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস নিয়ে আপানাদের সঙ্গে সময় কাটানো যেতে পারে।

খাওয়ার সময় কোমর ও পিঠ সোজা রাখুন। খাওয়ার সময় অনেকেই শরীরটাকে বেশ একটু হেলেদুলে আরাম করে রাখতে পছন্দ করেন। এটা কিন্তু অন্ননালী ও পেটের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে এবং তা হজমে সমস্যা সৃষ্ট করে। এছাড়া ছোটখাটো টেবিল বা সোফায় দীর্ঘক্ষণ ধরে খেতে থাকলে পেটের ওপর চাপ পড়বে এবং এ অভ্যাসও ঠিকঠাক মত হজমে সমস্যা করে। খাওয়ার সময় আপনার শরীরের সঠিক অবস্থান হবে: কোমর ও পিঠ সোজা রাখা, যাতে অন্ননালী ও পেটের ওপর কোনো চাপ না পড়ে।

বেশি ক্ষুধা লাগলে পরিমানে বেশি নয় এবং নরম জাতীয় খাবার যেমন, পরিজ, স্যুপ বা জাউ খান। সাধারণত খুব বেশি ক্ষুধা লাগলে আমারা সামনে যে খাবার পাই সেটাই খেয়ে ফেলতে চাই। আসলে মনে রাখতে হবে, এ সময় পেটের হজমের ক্ষমতা ইত্যোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বেশি করে খেলে পেট এবং হজমশক্তি উভয়ের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য অনেক ক্ষুধা লাগলে প্রথমে অল্প পরিমানে স্যুপ, পরিজ বা নুডুলস্ জাতীয় খাবার খান। তারপর পছন্দের যে কোনো খাবার আপনার অভ্যাস মত খেতে পারেন। মনে রাখবেন খালি পেটে দুধ, দই এবং রাঙা আলু না খাওয়াই উত্তম।

৪ থেকে ৬ ঘন্টার পরপর খাবার খান। এর সময়ের বেশি বা অনেক লম্বা সময় না খেয়ে থাকলে অথবা এসময়ের অতিরিক্ত কম বা ঘন ঘন খেলে সেটা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কেননা বেশি সময় ধরে না খেয়ে থাকলে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগবে এবং তা হজম শক্তি ও শরীরের কার্যক্ষমতার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে। আবার ঘন ঘন খেলেও হজম প্রক্রিয়া পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারে না। এর ফলে খাওয়ার ইচ্ছা ও হজমের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত নানা জাতীয় মিশ্র খাবার পেটে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মত কার্যকর থাকে।

যেটা খেতে পছন্দ করেন, সেটা প্রথমে খান। আপনার পছন্দ ও অপছন্দের খাবার আছে। প্রথমে কোনটা খাবেন? বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথমে পছন্দের খাবার খান। যা আপনার মুড ভালো করতে পারে। আবার মুড ভালো হওয়ার কারণে পেট দ্রুত ভরে যায়। এভাবে আপনি বেশি বেশি পরিমান খাওয়ার অভ্যাস এড়াতে পারেন।

খাওয়ার পরপরই কিছু সময় বিশ্রামে থাকুন এবং মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ার পর শরীরের রক্ত চলাচল, পরিমান এবং এর কার্যকারিতা হজম প্রক্রিয়ার কাজে ব্যবহৃত বেশি ব্যবহৃত হয়। ফলে মস্তিষ্ক প্রয়োজনের থেকে কম রক্ত পেয়ে থাকে, তাই এ সময় মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ করলে তা মাসনিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে তুলতে পারে। সেজন্য খাওয়ার আধা ঘন্টার পর কাজ করতে যান। খাওয়ার পর সংগীত শোনা ও হালকা মেজাজে হাঁটাহাটি করা সবচেয়ে উত্তম।

খাওয়ার সময় দুঃখের কথা বলবেন না। চীনে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে,-"খাওয়া ও ঘুমের সময়ে কথা বলা ঠিক না। খাওয়ার সময় কথা বললে খাদ্য চর্বণে কম সময় পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এক গবেষণায় দেখা যায়, খাওয়ার সময় জটিল ও দুঃখের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তা মানুষের হজমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

নাস্তার সময়ে হালকা গরম বা উষ্ণ খাবার খান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের নার্ভ ও ধমনী সংকোচিত অবস্থায় থাকে। এ সময় ঠান্ডা কিছু খেলে আকস্মিক খিচুনি জাতীয় সমস্যা হতে পারে। চীনের ঐতিহ্যবাহী ডাক্টারের মতে নাস্তায় কিছু গরম খাবার খাওয়া উচিত, যা পেট ভাল রাখতে পারে। নাস্তায় আপনি পরিজ, গরম ওটমিল বা ডাল খেতে পারেন।

খাওয়ার আধা ঘণ্টার পর চা পান করুন। খাওয়ার পরপরই চা পান করা ঠিক নয়। এ সময় চা পান করলে পাচকরস তরলিত হবে এবং তাতে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হবে। কিন্তু আধা ঘন্টার পর চা পান করলে তা হজমের জন্য সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি পেটের জীবাণুমুক্ত করতেও সহায়তা করতে পারে।

রাতে ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে বিপাক প্রক্রিয়া নিস্তেজ হতে শুরু করে। এ সময় ঠান্ডা কিছু খেলে তা ক্লান্ত দূর করার ক্ষেত্রে বা ঘুমের গুণগতমানের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক