Web bengali.cri.cn   
বিদেশে কিভাবে ড্রাইভার লাইসেন্স পাওয়া যায়
  2013-02-25 18:50:09  cri

প্রথমে আমরা জার্মানির কোনো মহাসড়কে লং ড্রাইভ করে এই সড়ক নিয়মের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসি। শুরুতেই বলে রাখি জার্মানীতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ও দূরহ একটি বিষয়। আপনারা এখন নিশ্চিত ভাবেই আতংকিত হয়ে উঠবেন এটা যেনে যে, আমরা জার্মানির যে সড়কে আছি সেখানে কয়কজন আনকোরা নবীন শিক্ষার্থী তাদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের প্রথম দিন থেকেই গাড়ি নিয়ে সড়কে উঠে এসেছে। লক্ষ্য করুন, এটা আসল সড়ক মানে ব্যস্ততম সড়ক, কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিতরের সড়ক নয়। নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় সড়কে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষাও আসল সড়কে দিতে হয়।

জার্মানির ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের শুরুতে শহরের অভ্যন্তরের প্রধান প্রধান সড়কে কিছুক্ষণ গাড়ি চালাতে হয়, তারপর শহরের অদূরের মহা সড়ক বা হাইওয়েতে প্রবেশ করতে হয়, এরপর আবার শহরের কেন্দ্রস্থলে ফিরে যেতে হয়।

জার্মানিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া সহজ নয়। এবং পরীক্ষার পথও পূর্ব-নির্ধারিত নয়, মানে পরীক্ষা দেয়ার আগে কেউ জানে না পরীক্ষার রোড ম্যাপ কেমন হবে। পরীক্ষার সময় হয়তো পুলিশ কর্মী হঠাত্ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার পথ পরিবর্তন করবে। তাই এটাও শিক্ষার্থীর জন্য খুব বড় চাপ সৃষ্টি করে। পরীক্ষার সময় যদি একজন ড্রাইভারের অবশ্য পালনীয় কিছু আচরণ বা মৌলিক আচরণে ভুল হয় সাথে সাথেই পরীক্ষায় আনুতীর্ণ ঘোষণা করা হবে। আর যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তাহলে অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীর নির্ধারিত ঠিকানায় তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেয়া হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়াটাই চূড়ান্ত কথা নয়, সকল নবীন ড্রাইভারের জন্য দু'বছরের শিক্ষানবিস সময় আছে। এ দু'বছরের মধ্যে ড্রাইভার কোনোভাবেই সড়ক যোগাযোগ নিয়ম লঙ্খন করতে পারবে না। যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে শিক্ষানবিস সময় আরও দু বছর বাড়িয়ে চার বছর করা এবং পূণরায় শুরু থেকে সড়ক যোগাযোগের সকল নিয়ম শিখতে হবে।

চলো তাহলে স্পেনের কোনো রাস্তায় লং ড্রাইভ করে আসি আর দেখি সেখানের নিয়ম কানুনগুল কেমন। আমি যতদূর শুনেছি সে দেশের নিয়ম কানুনের সাথে চীনের সঙ্গে কিছু মিল আছে। দু'দেশই প্রথমে ড্রাইভিং-এর নিয়মগুলো শিখতে হয়, তারপর গাড়ি চালানোর পদ্ধতি শেখানো হয়। স্পেনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের ড্রাইভিং-এর নিয়ম শেখানোর জন্য তিনটি বড় বড় তত্ত্বীয় অনুশীলন করতে দেয়া হয়। আর এর সবটাই পুরোপুরি মুখস্ত রাখতে হবে।

স্পেনে তত্ত্বীয় নিয়ম শেখার পর একটি চুড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হয় আর এতে উত্তীর্ণ হলেই কেবল ব্যবহারিক ভাবে গাড়ি চালানো প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। স্পেনে গাড়ি চালানো শেখার জন্য বিশেষ কোনো চত্বর বা জায়গা নেই। সরাসরি শহরের প্রধান সড়ক পথে শিখতে শুরু করে দেয়। তবে চীনে কিন্তু বিশেষ ড্রাইভিং স্কুল আছে এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষনের জন্য বিশেষ জায়গাও আছে। চীনে শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষার আগে আসল সড়ক পথে কিছু দিন গাড়ি চালাতে দেওয়া হয়। চীনের এমন নিয়ম সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রনয়ণ করা হয়েছে। কারন স্পেনের তুলনায় চীনের সড়কে গাড়ির সংখ্যা এবং প্রশিক্ষনার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই যদি সবাই প্রধান সড়কেই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে দেয় তাহলে সড়কের স্বাভাবিক চলাচল ব্যবস্থা ব্যহত হয়ে ব্যপক সমস্যা সৃষ্টি করবে।

এক এক দেশের অবস্থা ভিন্ন, তাই নিজ নিজ দেশের অবস্থা অনুযায়ী নিয়ম নির্ধারণ করাটাই সঠিক। আমিও স্পেনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা সম্পর্কে কিছুটা জানি। নিয়ম শেখার বিষয়টি সবার জন্যই এক, কিন্তু গাড়ি চালানোর পদ্ধতিতে রয়ছে বিরাট পার্থক্য। কেউ কেউ শুধু একটি বা দুইটি ক্লাসের মধ্যেই খুব ভালোভাবে শিখতে পারে, আবার কারো কারো দশ বা বিশটি ক্লাস লেগে যায়। যদি সব কিছু ঠিকঠাক মত এগোয় তাহলে একজন শিক্ষার্থী তিন থেকে চার সপ্তাহ বা এক মাসের সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যায়।

আবার চীনের মতই স্পেনেও গাড়ি ধরন অনুযায়ী লাইসেন্স ক্যাটাগরী নির্ধারণ করা হয়। যেমন ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য "বি" শ্রেণীর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়। প্রথমে লাইসেন্সের কার্যমেয়াদ দশ বছর থাকে।

এখন আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা ৫ কোটি, গাড়ির সংখ্যা ৮০ লাখেরও বেশি। অবকাঠামো উন্নত মানের, গাড়ি শিল্পের উন্নয়নও খুব দ্রুত। তবুও সেখানে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়াও খুব কঠিন ব্যাপার। আপনারা কি জানেন সে দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশ নেয়া কত কঠিন? প্রথমে আপনার এ দেশে থাকার প্রমাণ, ব্যাংক এ্যকাউন্ট নং, পানি ও বিদ্যুত্ বিল জমা দেয়ার রশিদ নিয়ে সড়ক যোগাযোগ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে কেবল একটি নম্বর পাওয়ার জন্য, তাপর সেই নাম্বার অনুসারে সড়ক যোগাযোগ ব্যুরোয় আপনার নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। অতপর আপনি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হতে পারেন, অথবা নিজেই বই কিনে সড়ক যোগাযোগ বা ড্রাইভিং-এর সকল নিয়ম শিখতে পারেন। সেখানে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর জন্যও "বি" শ্রেণীর লাইসেন্স দেয়া হয়। "বি" টাইপ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য ৮০টি অনুশীলন আছে আর পরীক্ষার সময় মাত্র ২ ঘন্টা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রাথমিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়, যার কার্যমেয়াদ মাত্র ১৮ মাস।

এই আঠারো মাসের প্রাথমিক লাইসেন্সটি হল সড়কে প্রশিক্ষণ গ্রহন করার লাইসেন্স মাত্র। অর্থাত্ এটি হচ্ছে শিক্ষকের সঙ্গে করে শহরের সড়কগুলোতে গাড়ি চালানোর অনুমতি পত্র। তাই দক্ষিন আফ্রিকায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে আপনি কতটা সফল বা দক্ষতা অর্জন করবেন তা নির্ভার করছে আপনার শিক্ষকের ওপর। তাই আপনাকে অবশ্যই খুব ভালো একজন শিক্ষক খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ড্রাইভিং স্কুল বা বন্ধুদের কাছ থেকেও সাহায্য পেতে পারেন। তাই পরীক্ষার সময় সব কিছুই সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হয়, ছোট খাটো একটি মাত্র ভুল-ই আপনার এতদিনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিবে, অর্থাত্ আপনার পাস করা হবে না। তাই সে দেশে প্রথমবারের পরীক্ষায় পাস করা লোকের সংখ্যাও খুব কম। কারণ পরীক্ষার নিয়ম অনেক কঠিন। অনেকেই দুই বা তিন বার পরীক্ষা দিয়ে তবেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে থাকে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দু'সপ্তাহের মধ্যে আপনি ৫ বছর মেয়াদের একটি আনুষ্ঠানিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক