গত ৩১ জানুয়ারি চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম দলিল প্রকাশিত হয়েছে। এটি হলো টানা দশমবারের মতো চীন সরকার প্রকাশিত এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কৃষি, গ্রাম ও কৃষকদের সমস্যা। চলতি বছরের প্রথম দলিলের কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে কৃষি সংস্কার। দলিলে আধুনিক কৃষি উন্নয়ন করা এবং নতুন ধরনের কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম কর্মগ্রুপের উপপ্রধান চেন সি ওয়েন ১ ফেব্রুয়ারি পেইচিংয়ে দেশি-বিদেশি তথ্যমাধ্যমকে বলেন, আধুনিক কৃষি প্রতিষ্ঠার গতি দ্রুততর করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পল্লী অঞ্চল ও কৃষকদের নিজের প্রাণশক্তি চাঙ্গা করা এবং কৃষকদের স্বার্থ নিশ্চিত করা। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।
কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম দলিল হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি বছর প্রকাশিত প্রথম দলিল। এ দলিল চীনের সারা বছরের কাজকর্মের নির্দেশনার ভূমিকা পালন করে।
এ বছরের প্রথম দলিলে আধুনিক কৃষি উন্নয়ন আর নতুন ধরনের কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা উত্থাপিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চীনের কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম কর্মগ্রুপের উপপ্রধান চেন সি ওয়েন বলেন, "আধুনিক কৃষি প্রতিষ্ঠার গতি দ্রুততর করতে চাইলে অর্থ, প্রযুক্তি আর সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সহায়তার মাত্রা জোরদার করা ছাড়াও কৃষি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনের ওপর মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবল পল্লী অঞ্চল আর কৃষকদের নিজের প্রাণশক্তি চাঙ্গা করার মধ্য দিয়েই গ্রামের টেকসই ও স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখা সম্ভব।"
গত দু'বছর চীনের কৃষি অপেক্ষাকৃত দ্রুত বিকশিত হয়েছে। গত বছর চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদনের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৯০ বিলিয়ন কেজি। চীন টানা নয় বছর ধরে প্রচুর ফলন অর্জন করেছে। শিল্পায়ন, তথ্যায়ন আর নগরায়ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীনের গ্রামেও অনেক নতুন পরিবর্তন ঘটেছে।
তবে নগরায়নের প্রক্রিয়া কিছু নতুন সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। এখন চীনের ২৬ কোটি তরুণ-তরুণী ও প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ার শহরে কর্মসংস্থান হওয়ার পর গ্রামাঞ্চলে শ্রমশক্তির অভাব সৃষ্টি হয়েছে। এটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ বছরের প্রথম দলিলে পারিবারিক খামার ও কৃষি সমবায় জমি ঠিকা প্রদানকে উত্সাহ দেওয়া হয়েছে বিশেষ ভাবে। 'পারিবারিক খামার' শব্দটি প্রথম বারের মতো চীনের এমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিলে স্থান পেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কয়েকটি অঞ্চলে 'জোর করে জমি ঘেরার' যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা সমাধানের উদ্দেশ্যে এ দলিলে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, যেসব শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান কৃষক পরিবারের ঠিকা করা আবাদি জমি ইজারা নিতে চায়, তাদের জন্য প্রবেশ-অনুমোদন ও তত্ত্বাবধানের কঠোর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ প্রবেশ-অনুমোদন ও তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা। চেন সি ওয়েন বলেন, "শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অর্থশক্তি দিয়ে দুর্বল কৃষক পরিবারের সঙ্গে সীমিত আবাদি জমির ব্যবস্থাপনার অধিকার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক আমরা সমর্থন করি না। আবাদি জমি কৃষক পরিবারের এখতিয়ারের মধ্যে রেখে শস্য উত্পাদনের জন্য ব্যবহার করা উচিত। তবে চাষাবাদ ও পশুপালন শিল্পে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত চাহিদা বেশি, সেগুলো কোম্পানি করলে ভালো। তবে এর আওতা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।"
এ বছরের 'প্রথম দলিল' অনুযায়ী, পরবর্তী পাঁচ বছর চীন মোটামুটিভাবে গ্রামের জমি ঠিকা ও ব্যবস্থাপনার অধিকার নিবন্ধন করার কাজ সম্পন্ন করবে। (ইয়ু/এসআর)