Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষরা কীভাবে নববর্ষ উদযাপন করে
  2013-02-11 18:26:07  cri

বিশ্বের অনেক দেশই নতুন বছরকে স্বাগত জানানো আর উত্সব উদযাপনে বিশেষ ধরনের খাবার বা খাওয়া-দাওয়ার রীতিনীতির ওপরও অনেক গুরুত্ব প্রদান করে। মজার বিষয় হচ্ছে প্রত্যেক জাতির তাদের নিজস্ব বৈশিষ্টমন্ডিত রীতিনীতি, ধর্ম, জীবনযাপনের অভ্যাস, ভৌগলিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতির ভিন্নতার কারনে বিশেষ খাবার ও খাদ্যাভাসের রীতিনীতিও আলাদা বৈচিত্রময় হয় থাকে।

পোল্যান্ডের তরুণীরা নববর্ষ উদযাপনের সময় খরগোশের মত কাপড় পরে এবং তারপর একত্রিত হয়ে খরগোশের মতকরে কুটুর কুটুর করে যত প্রকার আর যত পরিমান পারা যায় তত শাকসবজি খাবে। কারণ তারা মনে করেন যে, শাকসবজি খেয়ে নতুন বছর শুরু হলে নতুন বছরের সব কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

ফ্রান্সের নববর্ষের রীতিনীতিও কিন্তু বেশ মজার। নববর্ষে তাদের বাসায় থাকা সব মদ শেষ করতে হবেই হবে। কেন? তাদের মতে, বছরের শেষ দিনে যদি বাসায় পুরোনো মদ থাকে, তাহলে তা নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনবে না। তবে মদ ফেলে দিলেও চলবে না, ঘরে থাকা যত মদ সব খেয়ে শেষ করলেই তবে নতুন বছরটি সুন্দর আর শান্তিময় হয়ে উঠবে। যদি আপনি ফ্রান্সের নববর্ষের সময় সেখানে থাকেন, আপনার মনে হবে ফরাসিরা যেন সবাই মাতাল, আর সেটা যেন খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কারণ একটু বেশি পরিমান খেয়ে ফেলেছে তো তাই।

প্যারাগুয়ের মানুষরা বছরের ঠিক শেষ ৫ দিন "ঠান্ডা খাবার খাওয়ার দিন" হিসেবে পালন করে। এই ৫ দিনে দেশের শীর্ষ নেতা থেকে সাধারণ মানুষ কেউই কোনো নতুন খাবার রান্না করবে না, এ সময়ে তারা সবাই শুধু ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকবে। এবং নতুন বছরের ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠা মাত্রই তার চুলায় আগুন জ্বালাবে এবং মজার মজার সব নতুন খাবার রান্না করে সবাই মিলে খাবে।

নববর্ষের সময় খুব ভালো খাবার খাওয়া উচিত, কেননা সারা বছর যেন বেশ ভাল ভাল খাবার খেয়ে কাটানো যায়, তাই না? আর তাই নববর্ষের খাবারের তালিকায় ভিন্ন রকম মাংস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন, আফ্রিকার মাদাগাস্কারে নববর্ষের আগের ৭ দিন অর্থাত্ পুরোনো বছরের শেষ ৭ দিনের মধ্যে কোনো প্রকার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। কেবল নতুন বছরের প্রথম দিনে ঘরের দম্পতি উভয়ের বাবা মাকে মুরগির লেজ পরিবেশন করে মাংস খাওয়া শুরু করবে। ঐ সমাজে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের একটি বিশেষ-রীতি হচ্ছে বাবা মা'কে মুরগির লেজ পরিবেশন করা আর ভাই বোনকে মুরগির পা দিতে হয়। এর অর্থ হচ্ছে যত্ন আর মৈত্রীর বন্ধন।

এদিকে ভিয়েতনামের নববর্ষের খাবার রীতিনীতিও কিন্তু বেশ মজার আর বিশিষ্টমন্ডিত। ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু সংখ্যালঘু জাতি রয়েছে যারা, পুরোনো বছরের শেষদিনের রাতে যেখান থেকে তারা প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করে, দলবেধে সেখানে গিয়ে আগড়বাতি জ্বালাবে এবং মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করবে। এরপর সেই জলাধার থেকে নববর্ষের খাবার রান্না করার জন্য প্রত্যেকে এক কলসি করে পানি নিয়ে বাসায় ফিরে আসবে। এরপর সেই পানি দিয়ে তৈরী করা নবর্ষের খাবারের প্রথম পাত্র তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দ্যেশে উত্সর্গ করার পরই কেবল পরিবারের অন্যান্যরা খেতে পারবে। তবে এই খাবারের তালিকায় অবশ্যই স্যুপ জাতীয় কোনো খাবার থাকতে পারবে না, বা স্যুপ খাওয়া একদম নিষিদ্ধ। কারণ তাদের মতে স্যুপ খেলে নতুন বছরে মাঠের ফসল বন্নায় ভেসে যাবে।

যদি আপনি বুলগেরিয়দের বাসায় নববর্ষের খাবার খেতে আমন্ত্রিত হন, তাহলে আপনার জন্য বিস্মিয়ের অনেক কিছু অপেক্ষা করে থাকবে। প্রথমে আপনি অবাক হবেন এটা যেনে যে, আপনার হাঁচি না আসলেও আপনাকে হাঁচি দিতে হবে। কারণ, তাদের রীতি অনুযায়ী নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম হাঁচি দেওয়া নতুন মানুষটি পুরো পরিবারের জন্য সারা বছরের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। প্রথম হাঁচি দেওয়া মানুষটিকে অর্থাত আপনাকে পরিবারের কর্তা তাঁর নিজের খেতখামারে নিয়ে যাবেন, এবং যে গবাদি পশুটির ওপর তাঁর প্রথম চোখ পড়বে, সে পশুটিকে হাঁচি দেয়া অতিথি, মানে আপনাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে আপনার যদি কপাল মন্দ না হয় তবে আপনি একটি ঘোড়া পেয়ে যেতে পারেন। তবে নিদেন পক্ষে একটি ছাগল অথবা গরু তো অবশ্যই পাবেন। প্রিয় শ্রোতা জীবনে একবার হলেও বুলগেরিয়ায় ঘুরে আসুন অন্তত একটি হাঁচি দেবার জন্য হলেও, দেখলেন তো হাঁচি কত মূল্যবান!

পুরোনো বছরের শেষদিনে হাঙ্গেরিয়রা পক্ষীজাতের কোনো প্রাণী খাবে না। কারণ তারা মনেকরে যদি মুরগি, হাঁস বা কবুতর খায়, তাহলে নতুন বছরের সব সৌভাগ্য উড়ে যাবে। নববর্ষে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের তারাও উপহার দিয়ে থাকে, তবে এ উপহারে যদি চিমনি পরিস্কার করা শ্রমিকের ছবি ছাপানো থাকে, তবে উপহারটি তাদের কাছে অধিক বেশি পছন্দের। কারণ এর মানে হচ্ছে পুরোনো বছরের সব দুঃখ, দূর্দশা দূর হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক