সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হওয়ার ফলে গাড়ি ক্রয়ের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে এবছর আফ্রিকার বাজারে মোট ১০ লাখ গাড়ি বিক্রি হবে এবং আগামী এক দশকের মধ্যে আফ্রিকার গাড়ি-শিল্প উন্নয়নের নবাগত শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করা যাবে। গাড়ি-শিল্পের এই অপার সম্ভাবনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চীনের বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইতমধ্যেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আফ্রিকায় গাড়ি উত্পাদন শুরু করেছে।
২০১১ সালে কেনিয়ায়, ফোটন গাড়ির উত্পাদন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে আফ্রিকায় এ শিল্পের বানিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে চিলি আর মিশরের কোম্পানির সাথে গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা এবং মিশরে গাড়ি-সংযোজন কারখানা ও বিক্রির বিষয়ে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার বাজারে চীনের গাড়ি-শিল্প প্রবেশের প্রথম পর্যায়ের ইতিহাস। একই সালে চীন-আফ্রিকা উন্নয়ন তহবিল আর চীনের প্রথম-গাড়ি, হুয়াচেন, চেরি এবং উত্তরাঞ্চল-গাড়ি কোম্পানির মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতামূলক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চীনের উত্তরাঞ্চল-গাড়ি কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ব্যবস্থাপক ওয়াং সিয়াও ছুন সংবাদদাতাকে জানান, আফ্রিকার বাজারে এই কোম্পানিটি যথেষ্ট আস্থা ও মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন,"আমরা মনে করি, আফ্রিকার বাজারে চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সুযোগ পাবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কেবল উত্তরাঞ্চলের গাড়ি নয়, চীনের অন্যান্য অঞ্চলের ভারি ও হালকা গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যথেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করবে।"
জানা গেছে, চীনের ভারি ট্রাক প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর আফ্রিকার বাজারে রপ্তানির পরিমান ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চল-গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারি ট্রাক সংযোজন আর বিক্রয়ের কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়াং সিয়াও ছুন বলেন, "চীনের গাড়ি বিশ্ব বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকান দেশগুলোর তুলনায় এ সকল দেশের বাজারগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণীর বাজার বলা যায়। তবে এ দেশগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপিত বিধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গ্যাস সরবরাহ সহ নানাবিধ শর্ত বিষয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার মতো প্রথম শ্রেণীর বাজারের চেয়ে অনেক নমনীয়। তুলনামূলকভাবে চীনা গাড়ির গুণগতমান উন্নত। এমনকি বাণিজ্যিক উত্পাদনের দিক দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ির তুলনায়ও চীন যথেষ্ট এগিয়ে আছে।"
চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে এজেন্টের মাধ্যমে প্রবেশের করে। এবং গত বছর থেকে উত্পাদন ও বাণিজ্য প্রক্রিয়াকে পর্যায়ক্রমে সহজ ও উন্নত করা শুরু করেছে। পাশাপাশি আফ্রিকান দেশগুলোও বিদেশী পুঁজির ওপর দিন দিন গুরুত্ব আরোপ করছে। অনেক আফ্রিকান দেশ বিনিয়োগ-বান্ধব নানা সহায়তা-নীতি চালু করেছে। যেমন বিনিয়োগ অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করা, সহজ শুল্ক হার নির্ধারণ করা আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করা ইত্যাদি। এ সকল সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে চীনের বেশকিছু গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আফ্রিকায় তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সেখানে উত্পাদন শুরু করেছে।
উত্পাদনের দক্ষতা আর বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করে। ওয়াং সিয়াও ছুন বলেন, "চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আফ্রিকার বাজারে প্রবেশের সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চীনের নিজস্ব জাতীয় ব্র্যান্ড ব্যবহার করেছে। এখন চীনের প্রধান গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশে নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা এবং তার মান সু-রক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গাড়ির গুণগতমানের শ্রেষ্ঠত্ব সুরক্ষা করা; মূল্যমানে সহজলভ্যতা অর্জন করা; কার্যকর ব্যবসা-কৌশল গ্রহণ এবং আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে চীনের গাড়ি শিল্প আফ্রিকার বাজারে দ্রুত বিস্তার লাভ করতে সক্ষম।"(ইয়ু/ লিপন)