


বিশেষজ্ঞদের মতে বয়ঃপ্রাপ্ত প্রতিজন মানুষের উচিত প্রতিরাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো। কিন্তু অনেককেই গভীর ঘুমের সময়টায় বিছানা ছাড়তে হয়। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে বা কাজের জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়। তাই তারা প্রায়ই পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অনুভব করেন। এটা কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিকূল। সেজন্যও দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার আসুন জেনে নিই দুপুরের স্বল্পসময়ের ঘুমের উপকারিতাসমূহ:
এক: দুপুরের সময় কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলে আপনি বিকেলে নিজের কাজে আরো বেশি মনোযোগী হতে পারেন। সকাল থেকে একটানা কাজের পর, দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলে আপনি আবার শক্তিশালী এবং সতেজ হয়ে উঠবেন।
দুপুরের বিশ্রাম আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনি দুপুরে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
দুই: দুপুরের ঘুম হৃদরোগের ঝুকি কমাতে পারে।
ঘুম আপনার মুড ও মাথার কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া, তা আপনার হার্ট-এর স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
মনস্তত্ত্ববিদ সারাহ কনকলিন বলছেন, "গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, প্রতিরাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা করে ঘুমালে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে যায়। সেজন্য দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলে শরীরে ঘুমের অভাবজনিত কুপ্রভাব তুলনামূলকভাবে কম পড়বে।"
তিন: স্পেনের লোকেরা লাঞ্চের পর নিয়ম করে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, স্প্যানিশরা দুপুর দুটো থেকে বেলা চারটার মধ্যে বিশ্রাম নেয়।
স্পেনের মতো অনেক দেশে দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয়ার রীতি প্রচলিত। এ-রীতি খুবই ভালো এবং যুক্তিসংগত। অনেকে মনে করেন, দিনের বেলা ঘুমালে রাতের ঘুম নষ্ট হবে। আসলে একথা ঠিক নয়। দিনের বেলায় সঠিক সময়ে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলে, তা রাতের ঘুমের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তবে, সন্ধ্যা ৫ বা ৬টায় না-ঘুমানো ভালো।
চার: অ্যালার্ম ব্যবহার করুন
অনেকে সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন। ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়া দিনের বেলায়ও জরুরি। সময়মতো ঘুম থেকে জেগে উঠতে না-পারলে কাজের ক্ষতি হবে---এই ভয়ে অনেকে দিনের বেলায় ঘুমাতে ভয় পান। তাদের জন্য ঘুম বিশেষজ্ঞদের উপদেশ হচ্ছে: দিনের বেলায় ঘুমাতে যাবার আগে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন। অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে ঘুমানোর সময় আপনি সময়মতো ঘুম থেকে ওঠার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং আপনার ভালো ঘুম হবে।
৫: যথেষ্ট ঘুমের পরেও যদি আপনার ক্লান্ত লাগে, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
আগেই বলেছি, যারা রাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পান না, তাদের জন্য দুপুরের ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যারা রাতে পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোর পরও দিনের বেলায় ক্লান্ত বোধ করেন, তাদেরকে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। টমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফারসন ঘুম ডিসঅর্ডারস কেন্দ্রের চিকিত্সক কার্ল ডগরামজি বলেন, "এ-ধরণের ঘুমের গুণগত মান ভালো নয়। ঘুমজনিত রোগের কারণেই এ-ধরণের লোক পর্যাপ্ত সময় ঘুমিয়েও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পায় না। তাদের প্রয়োজন যথাযথ চিকিত্সা।"
৬: দুপুরে শুয়ে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করুন
রাতের ঘুমের জন্য বিশেষ পরিবেশ প্রয়োজন হয়। দিনের ঘুমের জন্যও চাই উপযুক্ত পরিবেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুপুরে বিশ্রামের ঘর অন্ধকার ও শান্ত থাকতে হবে। বিছানা না-থাকলে, চেয়ারে বসে কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়াও খারাপ না। টেবিলে উপুর হয়ে না-ঘুমানোই ভালো। বিশ্রামস্থলের তাপমাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।




