Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশকে সতর্ক করলো পোশাক ক্রেতারা
  2012-12-11 14:09:04  cri

বাংলাদেশি পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুকে এক ধরনের সতর্কসংকেত মনে করছেন। ক্রেতারা কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার দ্রুত মানোন্নয়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও চেয়েছেন।

অগ্নিনিরাপত্তা তৈরিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আর ক্রেতারা এ টাস্কফোর্সে বিদেশি অডিট প্রতিষ্ঠান, আইনজ্ঞ, স্থপতি ও প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিজিএমইএর আয়োজনে তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতাদের এক বৈঠকে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসব মতামত দেন। ক্রেতারা সভায় কারখানা চলাকালে ভবনের সব ধরনের দরজা উন্মুক্ত রাখা এবং ভবন নির্মাণবিধি ও অগ্নিনির্বাপণ প্রত্যয়নপত্র নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন। কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দীর্ঘ মেয়াদে টাস্কফোর্সের সুপারিশ ধরে শ্রমিকের মজুরি বা শ্রমমূল্য বাড়ানোর তাগিদ দেন।

অন্যদিকে বিজিএমইএ ক্রেতাদের কাছে পোশাকের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। জবাবে ক্রেতারা বলেন, ভালো প্রস্তাব। তবে এটা ক্রেতা-বিক্রেতার নিজেদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়।

অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি পোশাকের ক্রেতাদের কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরতে বিজিএমইএ ওই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। শুরুতেই সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন পরিস্থিতির বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসের ভবনের কাঠামোর মধ্যেই সমস্যা আছে। এখানে তিনটি সিঁড়ি ঠিকই ছিল, কিন্তু পথ এসে শেষ হয়েছে গুদামে। আর গুদামে ছিল পেট্রোলিয়াম বায়ো-প্রোডাক্ট, যার কারণে শ্রমিকেরা নামতে বা ওপরে উঠতে পারেননি। তিনি একই সঙ্গে কারখানায় আগুন লাগার পর মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার আচরণ নিয়ে তাঁর সন্দেহের কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোনো কিছু গোপন করছি না। সব স্বীকার করে দায়ও নিচ্ছি।'

লি অ্যান্ড ফাং-এর প্রতিনিধি লাল উদেগেদারা টাস্কফোর্সের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের সুপারিশ ও তার বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।

এইচঅ্যান্ডএমের পায়েল জৈন সরকারের কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডসংক্রান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিষ্কার অঙ্গীকার চান। তিনি বলেন, পোশাক কারখানাতে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা এ শিল্পে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রধানত ঘটে বৈদ্যুতিক বিভ্রাট থেকে।

লিভাইসের জুবায়ের আসলাম বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনার পর টাস্কফোর্স করা হয়েছে এটা ঠিকই আছে। বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ঠিক করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক খাতে প্রকৃত ইস্যু হচ্ছে শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি। তিনি দীর্ঘ মেয়াদে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। তিনি জানতে চান, অগ্নিদুর্ঘটনা যে প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে, তার মালিককে কোনো জরিমানা করা হবে কি না।

বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সস্তা পোশাক তৈরির প্রতিযোগিতায় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা কষ্টকর।

লি অ্যান্ড ফাংয়ের রজার হুবার্ট বলেন, বাংলাদেশে অনেক ভালো মানের কারখানা আছে। এটা নয় যে এখানে ভারত, পাকিস্তান, চীন ও ভিয়েতনাম বাংলাদেশের প্রতিযোগী। এগুলো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা। খারাপ কারখানাগুলো কম দামে পোশাক দেয় বলেই ক্রেতারা কম দামে তা কিনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নেক্সটের প্রতিনিধি শহিদুল আলম সংবাদমাধ্যমের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনার সময় কারখানার বিভিন্ন দরজাতে তালা দেওয়া থাকে। তিনি নিশ্চিত করার দাবি করেন যে, কারখানা চলাকালে ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত সমস্ত দরজা উম্মুক্ত থাকবে।

জেসিপেনির আঞ্চলিক পরিচালক জেনিফার কে জব্বার অগ্নিনিরাপত্তা প্রত্যয়নপত্র নিশ্চিত করতে বলেন। তিনি সবার জন্য ফায়ার ড্রিল নিশ্চিত করতে বলেন। এ পর্যায়ে বিজিএমইএর পরিচালক আতিকুল ইসলাম মালিক থেকে শুরু করে ১০০ ভাগ মানুষের ড্রিল নিশ্চিত করতে তাঁদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

পিভিএইচ করপোরেশনের জিয়া আহাদ বলেন, এখানে সবাই মালিকপক্ষীয় মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা কীভাবে তাঁদের নিরাপত্তা দিকটা ভাবেন, তা আসা দরকার।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক