Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষা
  2012-12-04 15:18:09  cri

চলতি বছরের চীনের রাষ্ট্রীয় সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন কাজ ২৪ অক্টোবর শেষ হয়েছে। পনর লাখেরও বেশি মানুষ এবার তাঁদের নাম নিবন্ধন করিয়েছেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ চাকরিতে পদের তুলনায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের হার৯৪১১:১।

শুধু চীনে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি চাকরি হচ্ছে ঈর্ষনীয় "লৌহ ধান বাটি" কিংবা "স্বর্ণ ধান বাটি"।

এখন আমি এশিয়ার কয়েকটি দেশ নিয়ে কিছু তথ্য দিচ্ছি।

দক্ষিণ কোরিয়া: পেশার স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু সামাজিক নিরাপত্তা এবং অবসরকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সরকারি চাকরিকে সে দেশে "স্বগীয় পেশা" বলে গণ্য করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষা, আইন পরীক্ষা এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি শীর্ষ জনপ্রিয় পরীক্ষা। ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষা (সরকারের অধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিভাগ)-এর ভর্তি হার অনুপাত ছিল ১১০০:১।

এর কারণ হলো সরকারি কর্মকর্তারা শুধু ভালো সুযোগ-সুবিধার অধিকারী তা নয়, বরং অবসর গ্রহণের পর তিন বছরের বেতনের ৭৬ শতাংশ বার্ষিক বেতন হিসেবে পান। কিন্তু সাধারণ চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের পর বার্ষিক বেতন মাত্র ৩ বছরের বেতনের ৫০ শতাংশ।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদেরকে প্রত্যেক মাসে মাসিক বেতনের ৩ শতাংশ অর্থ চিকিত্সা বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে দিতে হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের পত্নীরাও এ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। পুরুষ সরকারি কর্মকর্তা অবিবাহিত নারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজেই বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজে পান।

ভারত: দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত বছরে ৩শ' থেকে ৬শ' পর্যন্ত তরুণ কর্মকর্তা বাছাই করা হয়। ভারতের জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে প্রতি বছর কয়েক লাখ প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কিন্তু গ্রহণ করা হয় হাজারের মাত্র কয়েক ভাগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় খুবই তুমুল। ২০০৬ সালে বাছাইয়ের হার ছিল মাত্র ০.১ শতাংশ ছিল। ঠিক সে কারণেই এটা বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

ভারতে কোনো কোনো মানুষ মনে করে, সরকারি কর্মকর্তা হওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার এবং কেউ কেউ মনে করে, এটা 'পিতৃপুরুষের জন্য গৌরব' বয়ে আনে। সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা সাধারণ কাজের চেয়ে বেশি এবং তাদেরকে সমাজের শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের মানুষ বলে মনে করা হয়। এছাড়া তাদেরকে অনেক রকমের ভর্তুকি ও ভাতা দেওয়া হয়। যেমন পরিবহণ ভাতা, সুপ্রজননবিদ্যা ভাতা, খাদ্য ভর্তুকি, টেলিফোন ভাতা, বিশেষ দরিদ্র অঞ্চল বা তৃণমূল ভাতা ইত্যাদি।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় সাধারণত এক বছর সময় লাগে। পরীক্ষা প্রধানত দু'টি পর্যায় রয়েছে। একটি হচ্ছে রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষা। আরেকটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষা। পরীক্ষার দু'টি অংশ থাকে - লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাত্কার। লিখিত পরীক্ষার আবার দু'টি অংশ থাকে। এক হচ্ছে প্রাথমিক পরীক্ষা। প্রতি বছরের মার্চ মাসে সেটা অনুষ্ঠিত হয়। আরেকটি অংশ হচ্ছে আনুষ্ঠানিক লিখিত পরীক্ষা। প্রাথমিক পরীক্ষা পাশ করা প্রার্থীরাই কেবল এতে অংশ নিতে পারেন। প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে এটা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা পাশ করার পর পরবর্তী বছরের মার্চ মাসে সাক্ষাত্কারে অংশ নিতে হয়। সে সাক্ষাত্কার এবং লিখিত পরীক্ষার ফলাফল মিলিয়ে তৈরি করা হয় চূড়ান্ত ফলাফল।

থাইল্যান্ড: এ দেশেও সরকারি কর্মকর্তা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কম না। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক পৌর সরকার ৭৯জন নতুন সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচন করেছে। এর জন্য ৬৭ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পরীক্ষায় অংশ নেয়। থাইল্যান্ডের পরিস্থিতিও চীনের মতো। যদিও ব্যক্তিখাতের কোম্পানির বেতন কিছুটা বেশি। তবুও সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা স্পষ্টতই আরো ভালো। তারা বিনাখরচে চিকিত্সা সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

এশিয়ায় ক্ষমতার জন্য অর্চনা খুবই গভীর। এটা এশীয় দেশগুলোর সরকারের কার্যক্রমের মাত্রা ব্যাপক এবং ক্ষমতা বেশি হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, বেসরকারি সমাজে "সরকারি কর্মকর্তা হওয়া একটা বিশেষ অবস্থান এবং বিশেষ অধিকার।" সাধারণ মানুষ দুর্নীতিকে ঘৃণা করে। তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকেও ঘৃণাসহকারে পরিহার করে। কিন্তু এ ধরনের ঘৃণার কারণ শুধু অসন্তোষ ও নৈতিকতা নয়, বরং ঈর্ষাও।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক