এই দেশগুলো ইন্টারনেটকে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে চাইছে। তারা জাতিসংঘের সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন' বা আইটিইউ'র মতো একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের পক্ষে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। ডিসেম্বরে দুবাইয়ে যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে সেখানেও বিষয়টা গুরুত্ব পাবে। কেননা ঐ সম্মেলনের আলোচনার মূল বিষয়ই হচ্ছে, টেলিযোগাযোগের জন্য বর্তমানে যে নীতিমালা রয়েছে, সেটার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা। কেননা ১৯৮৮ সালে এই নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল। সে সময় ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা ছিল শুধুমাত্র শিক্ষাবিদদের মধ্যে। ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু এখন ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে 'নেটওয়ার্ক অফ নেটওয়ার্কস'। সেটা যেমন সত্য সামাজিক বিবেচনায়, তেমনি সত্য রানৈতিকভাবেও। এছাড়া ইন্টারনেটকে ঘিরে এখন ই-কমাসের্র পরিমাণ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইন্টারনেট এখন কোন কোন দেশে সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। যেমন 'আরব বসন্ত'এ মূল ভূমিকা ছিল ফেসবুক তথাআ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলোর-এমন কথা এখন পায় সবাই স্বীকার করেন। কেননা অতীতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের নাগরিকরা সন্তুষ্ট না হলে তা থেকে যেতো শুধু তাদের মনের ভেতর। কেউ কারও ক্ষোভের কথা জানতো না। কিন্তু ইন্টারনেট তথা ফেসবুক, টুইটার আসায় এখন এই ক্ষোভ আর শুধু নিজের ভেতরই থাকছে না, সেটা ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মধ্যে। জেনেভা ভিত্তিক সংস্তা 'ইন্টারনেট সোসাইটি'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মার্কুস কুমেয়া বলছেন, ইন্টারনেট মানুষকে বিশাল তথ্যভান্ডারের সন্ধান দেয় এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বাধীনভাবে তথ্য আদানপ্রদানের সুযোগ করে দেয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো পরিচালিত হয় 'আপ-বটাম' ভিত্তিতে। কিন্তু ইন্টারনেটটা চলছে 'বটাম-আপ' পদ্ধতিতে। এখানে তদারকির কেউ নেই। তাই হয়তো অনেক সরকার ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলছে। টোকিও ভিত্তিক সংস্থা' সেন্টার ফর গোবাল কমিউনিকেশনস' এর গবেষক অ্যাডাম পেকে বলচেন, কয়েকটি দেশ দুবাই সম্মেলনে ইন্টারনেটের স্বাধীনতার উপর রাশ টেনে ধরার প্রস্তাব উত্থাপনের পরিকল্পনা করছে। তারা চায় আইটিইউ এর মতো কোনো বৈশ্বিক সংস্থা, যেটা ইন্টারনেটের তথ্য ও ব্যবসায়িক মডেল নিয়ন্ত্রণ করবে; অথবা আইটিইউ এর কর্তৃত্ব বাড়াতে যেন সংস্থাটি নিজেই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কেননা এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের এই সংস্থাটি শুধু টেলিযোগাযোগ ও বেতার নিয়ে কাজ করছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এখন পর্যন্ত, ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ার মতো কোনো ইচ্ছার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি আইটিইউ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সংস্থা মহাপরিচালক হামাদুন টুরে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্র বলতে শুধু 'ডোমেইন নেম' আর' অ্যাড্রেস' এর কথা বলেছেন। তবে গবেষক অ্যাডাম পেকে বলছেন, আইটিইউ অন্য উপায়েও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় যেতে পারে। তিনি বলেন, আইটিইউ'র পরামর্শ মানতে দেশগুলো বাধ্য হবে-এমন প্রস্তাবের কথা বলা হচ্ছে। এটা যদি হয় তাহলে আইটিইউ অনেক বড় ক্ষমতা পেয়ে যাবে বলে মনে করছেন পেকে। ইন্টারনেট সোসাইটির পল রেন্ডেক মনে করেন, দুবাই সম্মেলনে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্র নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে।