আপনার পরিবারে কি একটি ফুটফুটে বাচ্চা আছে? ছোট বাচ্চাকে কিভাবে শিক্ষা দেবেন এবং আপনার বাচ্চাকে কিভাবে লালনপালন করবেন? বাবা কিংবা মা হিসেবে আপনি অবশ্যই এ-বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করেছেন। সম্প্রতি আমি একটি রিপোর্ট দেখেছি। এ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট বাচ্চাকে বই পড়ে শোনানো তার মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে সবেমাত্র জন্মগ্রহণকারী বাচ্চাকেও বই পড়ে শোনানো উচিত। জন্মগ্রহণের পর থেকেই বাচ্চাদের প্রবল জ্ঞানের তৃষ্ণা থাকে। অনেকে মনে করেন, ছোট বাচ্চা কেবল দুধ খেতে, ঘুমাতে এবং খেলতে জানে। আসলে তা নয়। জন্মগ্রহণের পরপরই বাচ্চারা ভাষা শিখতে শুরু করে। যদি আপনি বাড়িতে চীনা ও ইংরেজি বলতে থাকেন, তাহলে বাচ্চা শিগগরই তা শিখে ফেলবে। জন্মগ্রহণের প্রথম বছর বাচ্চাদের ভাষা দক্ষতার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শুরুতেই আপনি কোন ধরনের বই পড়ে শোনাচ্ছন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। উপন্যাস বা পত্রিকা যা-ই হোক না কেন, আপনার কণ্ঠ ও টোন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাসের পর থেকেই যেসব বাচ্চা গল্পের বই শুনতে থাকে, সে বাচ্চারা তাদের আঙ্গুল দিয়ে তাদের প্রিয় গল্পে বইটি দেখিয়ে দিতে পারে। সে বইগুলোর কাভার পরিবর্তন করলেও, বাচ্চারা তা ঠিকই চিহ্নিত করতে পারে।

তাহলে প্রতিদিন কত সময় বাচ্চাদেরকে বই পড়ে শুনাবেন বাবা-মারা?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে জোরে জোরে বাচ্চাদেরকে বই পড়ে শুনান।

বাচ্চাদেরকে জোরে জোরে বই পড়ে শুনালে তারা সহজে শব্দ, ক্রিয়া শব্দ এবং বাক্য শিখতে পারে। এছাড়া আপনার কণ্ঠ থেকে ভালোবাসাও অনুভব করতে পারবে বাচ্চারা। বাচ্চারা মনে করবে যে, আপনার কাছে সে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে যেসব বাচ্চা বই থেকে যথেষ্ট পাঠ শোনেনি বা নিজেরা পড়েনি, তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে বই পড়তে আগ্রহী হয় না। এটা তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বই পড়ার সময় আপনি যদি ভালোভাবে খেয়াল করেন, তাহলে আপনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, বাচ্চাদের চোখ আনন্দে চিক চিক করছে।

তাহলে আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, বাচ্চাদের কী ধরনের বই পড়ে শুনাবেন?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে-কোনো ধরনের বই পড়ে বাচ্চাদের শোনানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য লিখিত বইই সবচে ভালো।

যে-কোনো বই পড়ে শুনাতে পারেন বাবা-মা। রাস্তার শ্লোগান, টেলিফোন নম্বর, পোস্টকার্ডসহ সবধরণের তথ্য বাচ্চাদের পড়ার অভ্যাস গঠনে অনুকূল হয়। কিন্তু বিস্ময়কর গল্পের বই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো।

গল্পের বইয়ে থাকে সহজ ব্যাকরণ। সেজন্য সে বইগুলো পড়ার সময় মনোযোগ দিতে হয় বেশি। যেমন, যখন চোর গোপনে বাড়িতে ঢুকতে যাচ্ছে, তখন আপনি এ দৃশ্য বর্ণনা করবেন ফিস ফিস করে। বজ্রপাতের কোনো দৃশ্যের বর্ণনা অবশ্যই জোরে জোরে পড়তে হবে। দৃশ্য অনুযায়ী পড়ার ভঙ্গি ও সুর পরিবর্তন করলে, বাচ্চাদের গল্প শোনার আগ্রহ বাড়বে।

এক বছর পর বাচ্চা আপনার পড়া শব্দ মুখস্ত করতে আগ্রহী হয়। বারবার এক বই পড়া খুব ভালো ধারণা। অবশেষ বাচ্চারা বইয়ের মধ্যের শব্দ এবং এ-গল্প মুখস্ত করতে শুরু করতে পারে। যার মানে বাচ্চাদের জীবনে বই পড়ার প্রক্রিয়া শুরু।