Web bengali.cri.cn   
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে 'আড়িপাতা শিলা'
  2012-10-02 18:09:39  cri

রাশিয়ার আরটি টিভি এবং অস্ট্রেলিয়ার 'ডেইলি টেলিগ্রাফ' পত্রিকার ২৩ সেপ্টেম্বরের খবরে জানা গেছে, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আগস্ট মাসে দেশটির উত্তরাঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে শিলার আদলে তৈরি আড়িপাতা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে।

ফদর পারমাণবিক কেন্দ্রে শিলা ও তেলে ঢাকা ৮০ মিটার গভীরে ভূগর্ভে সেটি রাখা হয়েছিল।

একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রিটেনের 'দি সানডে টাইমস' পত্রিকাকে জানায়, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কওম শহরের পাশে ফদর পারমাণবিক কেন্দ্রে টার্মিনাল যোগাযোগ স্থাপনা পরীক্ষা করার সময় 'শিলা'র মতো একটি জিনিস আবিষ্কার করে। যখন একজন সৈন্য 'শিলা'টি নাড়ানোর চেষ্টা করে, তখন সেটি বিস্ফোরিত হয়।

তারপর বিশেষজ্ঞরা 'শিলা'র টুকরো পরীক্ষা করে আবিষ্কার করেন যে, এতে লুকানো ছিল পারমাণবিক কেন্দ্রের কম্পিউটার উপাত্ত।

ফদর পারমাণবিক কেন্দ্রে ইরান ২০শতাংশ ঘনত্বসমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ যখন ইউরেনিয়ামের ঘনত্ব ৯০ শতাংশ হয়, তখন তা দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা যায়।

এছাড়া ইসরায়েলি তথ্যমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে ইরান অভিযোগ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি লঙ্ঘন করেছে। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীর গুপ্তহত্যা এবং পারমাণবিক স্থাপনা নষ্ট করার জন্য কম্পিউটার ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া।

ইরানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশনের চেয়ারম্যান আলাদ্দিন বরুজার্দি বলেন, জার্মানির নির্মাণ শিল্পের বড় কোম্পানি সিমেনস ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করার সময় 'ভেল্কি দেখিয়ে' ওই আড়িপাতা যন্ত্র লুকিয়ে রেখেছিল।

তবে জার্মানির মিউনিখে সিমেনসের সদরদপ্তরের একজন মুখপাত্র ২৩ সেপ্টেম্বর এ সম্পর্কে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের সঙ্গে সিমেনস কোম্পানির কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই এবং কোনো প্রযুক্তিগত স্থাপনা সেখানে সরবরাহ করে নি।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে সিমেনস কোম্পানি ইরানে একটি পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে যোগ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান শান্তপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ইরান সব সময় বলে আসছে যে, পারমাণবিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কেবল চিকিত্সা এবং জ্বালানি উত্পাদন।

তেইশ সেপ্টেম্বর ইরানি পার্লামেন্টের একজন প্রবীণ সদস্য অভিযোগ করেন যে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ'র মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলকে গোপনীয় তথ্য দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ইরান আইএইএ'র সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করলে, এর সকল দায়িত্ব বর্তাবে আমানোর ওপর।

একই দিন ইরানের বিপ্লবী গার্ড দলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

ইরানি পার্লামেন্টের স্পিকার প্যানেলের সদস্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশনের সদস্য জাভেদ জাহাঙ্গির চাদ ইরানের প্রেস টিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ইউকিয়া আমানো বেশ কয়েক বার ইসরায়েলি শহর তেল আবিবে গিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদেরকে ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা পরীক্ষা করার কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান, 'আইএইএ'র আচরণে ইরান যদি তার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে, তাহলে তার সকল দায়িত্ব নিতে হবে আমানোকে।

আপাতত আইএইএ জাভেদ জাহাঙ্গির চাদের অভিযোগের ব্যাপারে আমানো তথ্যমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া জানান নি। রয়টার্সের খবরে জানা গেছে, আমানো কেবল ২০১০ সালের আগস্ট মাসে একবার আইএইএ মহাপরিচালক হিসেবে ইসরায়েল সফর করেছিলেন। গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার চেয়ারম্যান দাওয়ানি আইএইএ-এর কাছে অভিযোগ করেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত অনেক স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়েছে। কেউ কেউ তা নিজেদের কাজে লাগাবে। তিনি বলেন, আইএইএ-তে 'সন্ত্রাসী ও নাশকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি'র অনুপ্রবেশ করেছে।

মন্তব্য
মন্তব্য
লিঙ্ক