Web bengali.cri.cn   
চীনের থাং রাজবংশ আমলের কবি ওয়াং জি হুয়েন
  2012-09-18 20:25:21  cri
চীনের থাং রাজবংশ আমলে অনেক নামকরা কবি সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবন নিয়ে কবিতা লিখতেন। ওয়াং জি হুয়েন তাদের একজন। তিনি একটি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন। তার দাদা সুই রাজবংশ আমলের শেষ দিকের ও থাং রাজবংশের আমলের প্রথম দিকের কর্মকর্তা ছিলেন। বাবা ও চাচা থাং রাজবংশ আমলের রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও ছিলেন। ছোটবেলায় ওয়াং জি হুয়াং ছিলেন খুবই মেধাবী। মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই তিনি বই পড়তে শুরু করেন এবং কবিতা লিখতে শুরু করেন ৭ বছর বয়স থেকে। তখন স্থানীয় পন্ডিতরা তার মেধার খুব প্রশংসা করতেন। মাত্র দশ-বারো বছর বয়সেই চারদিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল। ২০ বছর বয়সে তিন একটি জেলার গর্ভনর পদে নিয়োগ পান। এসময় তার বাবাকে মিথ্যা অভিযোগ অভিযুক্ত করা হলে, তিনি গভর্ণর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজের জন্মস্থানে চলে যান। সেখানে দু'বছর অবস্থান করার পর, তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে শুরু করেন। ভ্রমণের সময় অনেক বিখ্যাত পন্ডিতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে ওয়াং জি হুয়াংয়ের লেখার হাত আরো ভালো হয়। পরে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর অনুরোধে তিনি আবারও রাজনীতি শুরু করেন এবং লোইয়াংয়ের একটি জেলার গর্ভনর পদে নিয়োগ পান। ইতিহাস বলছে, গভর্ণর হিসেবে তার শেষ কার্যমেয়াদে তিনি বেশ সফল ছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর পদোন্নতি হয়, ঠিক তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার যোগ্যতা দেখে, তাকে কর্তৃপক্ষ রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে তিনি মাত্র ৫৫ বছর বয়েস মারা যান।#

ওয়াং জি হুয়াংয়ের লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হারানো হয়েছে। বতর্মান সংক্ষরিত থাং রাজবংশ আমলের কবিতাগুলোতে ওয়াং জি হুয়াংয়ের লেখা কবিতা মাত্র দশ বারোটি রয়েছে। এ দশ-বারোটি কবিতা থাং রাজবংশের শেষ দিকের লেখা। আসলে ওয়াং জি হুয়াং তাঁর জীবনে অনেখ কবিতা লেখেছেন। তাঁর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বনর্নন করা হত সিমান্ত এলাকায় বসবাস-করা জনসাধারণের জীবন ও রীতি-নীতি সম্পর্কে । ওয়াং জি হুয়াং এক সময় দেশের অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। সুতরাং তাঁর কবিতাগুলোতে দেশের সুন্দর দৃশ্য এবং বিভিন্ন জায়গার রীতিনীতি সম্পর্কে বেশ বর্ননা করা হত। তাঁর সবচেয়ে নাম-কবিতার নাম: ' ওয়াহো ভবন আরোহন করা'। এই কবিতা প্রথম স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ হয়। যখন তিনি থাং রাজবংশ আমলের হোজন বতর্মান সেনসি প্রদেশের ইয়াংজি জেলার একটি তিন তলার ভবন আরোহন করেন তখন তিনি এই কবিতা রচনা করেন। এই ভবনের পিছনে হুওয়াংহো নদী। তার কবিতার মর্ম এমনি: ' সন্ধ্যাবেলার সুর্য পাহাড়ের ঢাল দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে, হুওয়াহো নদীর ধারা পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সবচেয়ে সাগরের সঙ্গে মিশে যাবে, সুদূরের সুন্দর দৃশ্য দেখতে চাইলে , উপরের আরেকটি তলায় আরোহন করতে হবে'। তাঁর কবিতার বাক্য পরর্বতীকালের প্রভাব হয়ে গেল। প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে তার লেখা কবিতা আরও অনেক ছিল। দু:খের ব্যাপার হল, সং রাজবংশ আমলে তাঁর লেখা অনেক কবিতা দেখা যেত না। তাঁর আরেকটি নাম-করা কবিতার নাম :' সিমান্ত এলাকার দু:খ'। এই কবিতায় তখনকার সিমান্ত এলাকায় বসবাস-করা জনসাধারণের কঠিন জীবন সম্পর্কে প্রানবন্তভাবে বর্ননা করা হয়। থাং রাজবংশ আমলে অনেক ভিন্নমতাবলম্বী বা অপরাধি দেশের সিমান্ত এলাকায় নির্বাসন জীবন যাপন করতো। তখনকার কতৃর্পক্ষ তাদের জীবনের উপর কোন মনোযোগ দিত না। সুতরাং তাদের জীবন অত্যন্ত কঠিন। ওয়াং জি হুয়াং ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু সিমান্ত এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার জনসাধারণের জীবন সম্পর্কে কবিতা লিখতেন। সেই সময় ওয়াং জি হুয়াংয়ের সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণের খুব বন্ধুত্ব ছিল। স্থানীয় জনসাধারণ তাদের দু:খ সম্পর্কে ওয়াং জি হুয়াংকে বলতে চেত। ওয়াং জি হুয়াং তাঁর কলম দিয়ে তাদের মনে কথা প্রকাশ করতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অনেক বছর ধরে পরিবারের স্বজন ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। সুতরাং ওয়াং জি হুয়াং তাঁর কবিতাগুলোতে এ সব লোকের গভীর আবেগ ব্যক্ত করতেন।

ওয়াং জি হুয়াং তাঁর জীবনে তখনকার বেশ কয়েক জন বিখ্যাত কবির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন। তারা এক সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতেন। তারা এক সঙ্গে কবিতা নিয়ে মত বিনিময় করতেন। তাদের কবিতাগুলোতে পরস্পরকে উল্লেখ করা হত। ওয়াং জি হুয়াংয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াং ছাং লিং থাং রাজবংশ আমলের একজন খুব বিখ্যাত কবি। কিন্তু হুয়াং ছাং লিং ওয়াং জি হুয়াংয়ের চেয়ে অনেক ছোট। ওয়াং জি হুয়াং মারা যাওয়ার পর , ওয়াং ছাং লিং ওয়াং জি হুয়াংয়ের স্মৃতিতে একটি কবিতা লিখলেন। কবিতায় তিনি ওয়াং জি হুয়াংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব আগেবের সঙ্গে বর্ননা করা হত।

থাং রাজবংশ আমলের অন্যান্য নাম-করা কবির মতো হয়াং জি হুয়াং চীনের থাং রাজবংশ আমলের সাহিত্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁর লেখা অধিকাংশ কবিতা সংরক্ষিত হয়নি । কিন্তু সত্ত্বেও যে কবিতাগুলো সংরক্ষিত হয়েছে সে সব কবিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর লেখা কবিতাগুলো এখনো চীনা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়।

মন্তব্য
মন্তব্য
লিঙ্ক