বন্ধুরা, খাং নি পা সাং , তিনি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলি এলাকার পু লান জেলার চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের একজন সদস্য। এখন তার বয়স ৬৮ বছর । তিনি হান ভাষা বলতে পারেন না , এমন কি শুনে বুঝতেও পারেন না । এ কারণে আমাদের সংবাদদাতাদের সামনে খাং নি পা সাং সবসময় হাসি মুখে ছিলেন। এ দিকে আমাদের সংবাদদাতারা তিব্বতী ভাষায়ও কথা বলতে পারেন না । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমাদের এ সাক্ষাত্কারটি নিতে অন্য তিব্বতী সদস্যের সাহায্য নিতে হয়েছিল।
তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার সময় খাং নি পা সাংয়ের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর । সুতরাং, তিব্বতের সংস্কার প্রক্রিয়াকে তিনি খুব কাছে থেকে অনুভব করেছেন বলে খাং নি পা সাং জন্মস্থানের অতীত এবং চলমান পরিবর্তনে মুগ্ধতার সঙ্গে গৌরব বোধ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন " ১৯৫৯ সালের গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর আগে তিব্বতের সামাজিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তিব্বতীদের তখনকার জীবন যাত্রা সম্পর্কে এমন কোন ভাষা নেই যা দিয়ে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা যায়। পুরানো তিব্বতে আমি আর আমার আপনজনরা কখনোই পেট ভরে খেতে পারতাম না এবং নূণ্যতম ভালো কোন পোষাকও পড়তে পারতাম না। এমন কি জুতো না থাকায় আমরা সবসময় খালি পায়ে হাটতাম।"
তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, সে সময় সাধারণ তিব্বতীদের নিজের কোন জমি ছিল না। সবাইকে অভিজাত ধনী পরিবারের কাছ থেকে বার্লি ধার নিতে হতো। তখন আমাদের উচ্চ সুদে ধার করতে হতো। বহু বছর পরও উচ্চ সুদের কারণে আমরা কোনদিনই ধার পরিশোধ করতে পারিনি। ধার শোধনা করতে পারার কারণে আমাদের ক্রীতদাসে পরিণত হতে হতো।
সুতরাং, ক্রীতদাস হয়ে যাওয়া একটি পরিবার হিসেবে আমাদের কোনো উত্পাদনের উপকরণ ছিল না। লেশমাত্র ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও ছিল না। ক্রীতদাসের জীবন যে কত কষ্টকর জানতে চাইলে তাদের ছেলে-মেয়েদের অবস্থার দিকে তাকানেই সব বুঝা যেতো । অভিজাত পরিবারের কাছ থেকে বার্লি ধার নিয়েছে এমন ক্রীতদাসদের তাদের নিজের সন্তানের নাম দেয়ার অধিকারও ছিল না।
এমন কি, ক্রীতদাসের ছেলে-মেয়েরা যেন সাধারণ জিনিসের মতোই মালিকের লাভের জন্য বিনিময় করতে হতো।৬৮ বছর বয়সী তিব্বতী সদস্য খাং নি পা সাং তার অতীতের কথা স্মরণ করে বলেছেন, তার মনে এখনও সেসময়কার তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার দৃশ্য স্পষ্টভাবে রয়েছে। এ
সম্পর্কে তিনি বলেন: " ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর, তিব্বতে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তিব্বতী অধিবাসীরা দুঃসহ যন্ত্রনা আর ক্রীতদাস প্রথা থেকে মুক্তির পাশাপাশি নিজেদের জমিও হাতে পেয়েছে।" অতীত ও চলমান তিব্বতের পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনায় তিব্বতের রাজধানী লা সা শহরের ' না চিন' থানার ' থা মা' গ্রামের জাতীয় গণ কংগ্রেসের তিব্বতী প্রতিনিধি কে সাং চু কাও এ সম্পর্কে বেশ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, তিনি নিজেই ক্রীতদাসের জীবনে দিন না কাটা হলেও একটি ক্রীতদাসের পরিবারের একজন বংশোদ্ভুত হিসেবে তিনি বহুবার তাঁর মা'র কাছ থেকে ক্রীতদাসদের কষ্টকর জীবনের নির্মম কাহিনী শুনেছেন। তিনি বলেন, তাঁর মা তাকে বারবার বলেছেন যে, সেসময় ক্রীতদাসরা বাড়িঘর এবং জমি সব ছিল না , মানুষের অধিকারও ছিল না। রাতে শুধু মাত্র পশু-পালকের সাথে ঘুমিয়ে থাকে। তাঁর মা তাকে আরও জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে, গণতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া এবং পুরানো তিব্বতের নিষ্ঠুর ক্রীতদাস ব্যবস্থা বাতিল না করা হলে আজকের তিব্বতের এ অবস্থা অর্থাত্ মানুষ হিসেবে ন্যুনতম স্বাধীনতা নিয়োত্ত বেচে থাকতে পারতেনা। তিদ্বতী জনগণ কখনও সুখের জীবন কাটাবে এমন স্বপ্রত্ত দেখতে পারতো না। তিব্বতী প্রতিনিধি কে সাং চু কাও বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার ৫০ বছরে তিব্বতের অর্জিত ব্যাপক সাফল্যতাঁর চোখে উজ্জ্বলতার মতই জ্বল করছে। এর আগে টেলিফোন যে কি জিনিস আমি কিছুই জানতাম না। এখন আমার গ্রামে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই টেলিফোন, টেলিভিশন মোবাইল ফোন সব চালু হয়েছে। শিশুরাও
কম্পিউটার ব্যবহার করেছে। এ সব কিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের ফসল।
বর্তমানে খাং নি পা সাংয়ের পরিবারের সব সদস্যই সুখী জীবনে দিন কাটাচ্ছেন। খাং নি পা সাংয়ের আটটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই কৃষি জমিতে কাজ করেন। এ সম্পর্কে খাং নি পা সাং আনন্দের সঙ্গে বলেন: " পুরানো তিব্বতে বিদ্যালয় ছিল না। গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর তিব্বতের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে স্কুল , মাধ্যমিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। শিক্ষাদানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়াও, চিকিত্সা ক্ষেত্রে পুরানো তিব্বতে হাসপাতাল ছিল না। তবে বর্তমানে কেবল যে হাসপাতাল এবং চিকিত্সক কর্মী রয়েছেন তা নয়, তা হাসপাতালের সাজ-সরঞ্জামও অনেক বেশি রয়েছে।
ব্যাপক জনগণের জীবন-যাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাও নিশ্চিতভাবে করা হয়েছে।" ১৯৫১ সালে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির আগ পর্যন্ত তিব্বতী চিকিত্সার কোন বিকাশই হয়নি। খাং নি পা সাং বলেন, পুরানো তিব্বতে শুধু মাত্র তিনটি ছোট আকারের সরকারী তিব্বতী চিকিত্সা পদ্ধিতির প্রতিষ্ঠান ছিল। তখন তিব্বতে একটি রুগীর জন্য একটি বেড়ও ছিল না। চিকিত্সা কর্মীদের সংখ্যা এক শ'রও কম ছিল। তার মধ্যে লাসার দু'টি চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন মাত্র বিশ থেকে ত্রিশজন রুগী চিকিত্সা নিতে আসতেন। বেসরকারী পর্যায়ে তিব্বতী চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো কম ছিল।
1 2 |