মালিকের খেলার ঘর
বৃদ্ধ মিগমার দোনদ্রুপ বলেন, আগে প্রতিদিন কেবল নাস্তা ও রাতের খাবার থাকতো। সকালে আমরা একটু চিপা অর্থাত্ চাল দিয়ে তৈরি পিঠা খাই, রাতে ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার খাই। আর কিছু নেই। খাবারের পরিমান খুব কম, কোনভাবেই পেট ভরে খেতে পারতাম না। কিন্তু খুব ভারি কাজ করতে হতো। সত্যি তখনকার জীবনের কথা কাছে বলা যায় না। তিনি আরো বলেন, ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার চালু হওয়ার পর তারা ক্রীতদাসের জীবন ত্যাগ করে ধাপে ধাপে ভালো সময় কাটাতে পারছেন। তিনি বলেন, 'এখন আমাদের জীবনে খাওয়াদাওয়া ও কাপড় পড়ার কোন চিন্তা নেই। যা ইচ্ছা তা খেতে পারি। আমাদের কাপড় ও অন্যান্য ঘরোয়া ব্যবহারিক জিনিসপত্র পেতেও কোন সমস্যা হয় না এখন।'
মিগমার দোনদ্রুপ বর্তমান নিজের বাড়িতে
১৯৫৯ সালে তিব্বতে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হয় এবং পুরনো সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথা উত্খাত হয়। ক্রীতদাসরা জমি, পশু ও উত্পাদনের যন্ত্রপাতি পেয়েছেন। আর তখন থেকেই তারা সমাজের মালিক, জমির মালিক ও নিজের মালিকে পরিণত হয়েছেন। তিব্বতের দশ লাখ কৃতদাস মুক্তি পেয়েছেন। বানচিউলোংবু গ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসী আগে পালা তালুকের গৃহ ক্রীতদাস ছিল, এখন তারা সবাই নতুন ধারায় জীবনযাপন করছেন।
অতীতে পালাতালুকে ক্রীতদাসের থাকার ঘর
বৃদ্ধা দ্রোলমা ও তার স্বামী মিমা সেরিং উভয়েই পালা তালুকের গৃহ ক্রীতদাস ছিলেন। এখন তারা ছেলেমেয়ে ও নাতীনাতনীর সঙ্গে ভাবনামুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন। এ পরিবারের এখন একটি সুন্দর দু'তলা ভবন রয়েছে। তাদের ৪০টি গবাদি পশু আছে। কৃষি কাজ করার জন্য ২০০২ সালে তারা একটি ট্র্যাক্টর কিনেছেন। এখন বৃদ্ধা দ্রোলমা ও তাঁর স্বামীর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে সুস্বাস্থ্য মানে ভালো থাকা। তাহলে তারা আরো কয়েক বছর সুখী জীবন উপভোগ করতে পারবেন। বর্তমান জীবন প্রসঙ্গে দ্রোলমা বলেন, 'গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর আগের মালিকের ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও চমরী গাই আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। জমি, গবাদি পশু ও চাষের যন্ত্রপাতি পেয়ে আমরা খুব খুশি। তখন আমি ভাবি, এখন থেকে আমি নিজের জন্য কাজ করতে পারবো। এর আগে আমি কখনো এ ধরনের জীবন উপভোগ করতে পারবো বলে ভাবতে পারি নি। এখন আমার দু'তলা বাড়িতে ১৫টি ঘর আর প্রসস্ত বারান্দা আছে। জানেন, আগে আমরা লাংশেং উদ্যানে ছয় জন একসাথে একটি ছোট ঘরে থাকতাম। এখন আমার পরিবারের আটজন সদস্যের প্রত্যেকের নিজের ঘর আছে।'
৫০ বছর পার হয়ে গেল। অতীতের কৃতদাস বর্তমান সমাজের মালিকে পরিণত হয়েছে। তারা অনেক বয়সী হলেও এখনো তিব্বতের উন্নয়নের জন্য নিজের অবদান রাখছেন। লাসা শহরের চেনকুয়ান অঞ্চলের সিয়াসাসু কমিউনিটির পাড়া কমিটির সদস্য ৭৩ বছর বয়সী ইয়েশে ব্লো গ্রোস পুরোনো তিব্বতের অভিজাত সম্প্রদায়ের তালুকের কৃতদাস ছিলেন। তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর তিনি চেনকুয়ান অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা হয়েছেন। তিন বছর আগে তিনি চেনকুয়ান অঞ্চলের গণ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নেয়ার অধিকার প্রয়োগ করছেন। তিন বছরের মধ্যে শহরের ব্যবস্থাপনা, শহর নির্মাণকাজ, স্বাস্থ্য ও জনগণের জীবনযাপন সম্পর্কে অনেক নতুন প্রস্তাব করেছেন।
গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে তিব্বতের বিভিন্ন জাতির জনগণ মুক্তি পেয়েছেন। তখন থেকে তিব্বত কালো থেকে আলো, পশ্চাত্পদতা থেকে অগ্রগতি, দরিদ্রতা থেকে সমৃদ্ধি, স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্র এবং রুদ্ধদ্বার থেকে উন্মুক্ত পথে এগিয়ে এসেছে। ৫০ বছরে তিব্বতের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতের আরো বিস্তীর্ণ বিকাশ হবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2 |