পালা তালুক
৫০ বছর আগে তিব্বত ছিল রাজনীতি ও ধর্মের সমন্বয়ে সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথার সমাজ। অভিজাত সম্প্রদায়, স্থানীয় সরকার ও উর্ধতন সন্ন্যাসীরা ছিলেন তিব্বতের তিনটি প্রধান ভূম্যধিকারী। তাদের জনসংখ্যা তিব্বতের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম। তবে তাদের হাতে ছিল তিব্বতের ৯৫ শতাংশ জমি ও উত্পাদনের উপকরণের অধিকার। তিব্বতের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষজন ছিলেন কৃতদাস। তাদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। মালিকরা ইচ্ছা করলেই কৃতদাসদের বিক্রি করতে পারতো। কৃততাসরা অতি কঠোর ও কষ্টকর জীবনযাপন করতেন। তিব্বতের শিকাজে অঞ্চলের চিয়াংজি জেলায় পালা তালুক নামে একটি সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাসের মালিকের তালুক সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এ তালুকটিতে আমাদেরকে পুরোনো তিব্বতের অভিজাত সম্প্রদায় আর কৃতদাসদের অভিন্ন জীবনের দৃশ্যের বর্ণনা রয়েছে। পালা তালুকের পথনির্দেশক ফুর্বু সেরিং জানিয়েছেন, 'পালা বংশের ইতিহাস ৩০০ বছরের। তিব্বতে এ পরিবারের বিরাট প্রভাব ছিল। পালা বংশ চিয়াংজে জেলা, লাসা শহর, পাইলাং জেলা, ইয়াংতোং জেলা ও শাননানসহ নানা অঞ্চলে মোট ৩৭টি তালুক, ১২টি চারণভূমি, ৩০ হাজার মু জমি ও ৩ হাজার কৃতদাস ছিল। পালা তালুকের আয়তন ৫ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি ছিল। তিন তলা একটি ভবনেই রয়েছে ৮২টি ঘর।'
পালা তালুকের বৈঠকখানা
পালা তালুকের ভবন উঁচু ও মহিমাময়। এ স্থাপত্যকর্মের মধ্যে বৈঠকখানা, শয়নকক্ষ, প্রার্থণা কক্ষ ও খেলাধুলার মিলনায়তনসহ নানা স্থান অন্তর্ভুক্ত আছে। তালুকদারের আমদানীকৃত খাদ্য ও বাসনপত্র, মূল্যবান লোমযুক্ত চামড়ার পোশাক, রেশমী কাপড় ও বিনোদনের নানা সাজসরঞ্জামও আছে। তারা অতি বিলাসী-জীবন কাটাতো। তাদের জীবন আর তালুকের মধ্যে কৃতদাসদের জীবনের আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। তালুকে ক্রীতদাসরা 'লাংশেং' নামে স্থানে থাকেন। তালুকদার তাদের অধিনস্থ কৃতদাসদের মধ্য থেকে জোর করে গৃহ ক্রীতদাস নিয়োগ করে। গৃহ ক্রীতদাসরা তালুকে রান্না করা, মদ তৈরি, ঘোড়াকে খাওয়ানো, কম্বল ও কাপড় তৈরিসহ যাবতীয় কাজ করে। ১৫০.৬৬ বর্গমিটার আয়তনের লাংশেং উদ্যানে ১৪টি পরিবারের ৬০ জনেরও বেশি লোক থাকে। মাথাপিছু থাকার আয়তন আড়াই বর্গমিটারেরও কম। লাংশেং উদ্যানে থাকার গৃহ ক্রীতদাসরা বংশপরম্পরায় নিম্ন মানের কালো স্যাতসেতে ঘরে থাকতে হয়। ৭৫ বছর বয়সী মিগমার দোনদ্রুপ পালা তালুকের গৃহ ক্রীতদাস ছিলেন। আগের দুঃখজনক জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'আমি ১৩ বছর বয়সে পালা তালুকের গৃহ ক্রীতদাসে পরিণত হই। সেখানে আমি সেলাই করি। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কাজ করতাম। দুপুর বেলা কোন বিশ্রামের সময় ছিল না। এক মাস ছুটি ছাড়া কাজ করলেও কেবল ১৪ কেজি চাল দিয়ে তৈরি খাবার পেতাম। এটা হলো পুরো পরিবারের খাবার। আগে আমি পালা তালুকের লাংশেং উদ্যানে সবচেয়ে ছোট ঘরে থাকতাম। আমার এতটুকুও মানবাধিকার ছিল না।'
1 2 |