অর্ধ শতাব্দীর মধ্যেই তিব্বতের আকাশ চুম্বী পরিবর্তন হয়েছে। সেদিনের তিব্বতে আজ সড়ক যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ এবং চাহিদাতিরিক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তিব্বতী জনগণের জীবনযাত্রায় অনেক সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি করেছে। যা তাদের জীবন বোধের স্বাদকে উপলদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
৫৯ বছর বয়সী জাম্পা দাইন্দা হচ্ছেন তিব্বতের 'রি কা জে' অঞ্চলের একজন অবসর-প্রাপ্ত সাধারণ শিক্ষক। সম্প্রতি দাইন্দা একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। আসলে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর, দাইন্দার পরিবার চা বিক্রীর ব্যবসা করে স্থানীয় অঞ্চলের একটি বেশ ধনী পরিবারে পরিণত হয়েছে। তবে দাইন্দার এবারের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হচ্ছে রি কা জে অঞ্চলে একটি বৃহত্তম মদ তৈরির কারখানা স্থাপন করা। যাতে স্থানীয় বিখ্যাত তিব্বতী মদ দেশি-বিদেশি বাজারে রপ্তানি করা যায়।
'রি কা জে' হচ্ছে তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ শহরটির সুদীর্ঘকালের মদ উত্পাদনের ঐতিহ্য রয়েছে। ' ছিং কে' সাদা মদ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে তৈরী সকল মদের মধ্যে একটি সবচে' বিখ্যাত ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মদ। কারণ এ মদ শুধু প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ ও খাদ্যশস্যের সংমিশ্রণে তৈরী করা হয়। যা ছিলো অতীতকালে তিব্বতের রাজপরিবারের একটি প্রয়োজনীয় ও উপাদেয় পাণীয় । এতো সুস্বাদু মদ আরো বেশি দেশ বিদেশের বাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে দাইন্দা পুঁজি বিনিয়োগ করে একটি ৪ হাজার ৫ শ'রও বেশি বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি মদের কারখানা স্থাপন করেছেন। গত বছর তিনি নিজের কারখানার তৈরী ' চিয়াং লুও খাং সা' নামক মদ নিয়ে চীনের শাং হাই'র দেশব্যাপী পর্যটন পণ্যের প্রদর্শনীতে অংশ নেন। তাঁর এ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিব্বতী মদ অংশগ্রহণকারী সকল ব্যবসায়ীর দারুণ প্রশংসা পেয়েছে। এ সম্পর্কে দাইন্দা বলেন:
" শাং হাই'র প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার পর, আমার মোবাইল ফোন সবসময় মদ ব্যবসায়ের জন্য ব্যস্ত থাকছে। সে সময় প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান করে বিক্রি করেছিলাম। তবে ধীরে ধীরে আমি একটি সমস্যা আবিষ্কার করেছি তা হলো মূল্যভূভাগের চাহিদা খুব বেশি, আমাদের মদ উত্পাদনের পরিমান তার চেয়ে কিছুটা কম ।"
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাইন্দা মদ উত্পাদনের সাজ-সরঞ্জাম কেনা এবং সংশ্লিষ্ট পেশাগত প্রযুক্তিবিদদের আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেন। তিব্বতী মদের গুণগত মান যাতে অন্য কিছুর প্রভাবে প্রভাবিত না হয় এ পূর্বশর্তে মদ উত্পাদনের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি থেকে একটি শিল্পসম্মত উত্পাদন পদ্ধতিতে পরিণত করা হবে। এ জন্যে দাইন্দা ইতোমধ্যেই ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ ইউয়ান ঋণ নিয়েছেন।
আসলে দাইন্দার মদ তৈরীর কারখানা হচ্ছে তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার একটি সূত্রমাত্র। গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতের আধুনিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যেইতিব্বতে তিব্বতী ওষুধ এবং হস্তশিল্পসহ তিব্বতের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্প পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। আধুনিক বাণিজ্য, পর্যটন, টেলিযোগাযোগ, খাদ্য সেবা , সাংস্কৃতিক বিনোদন এবং তধ্য প্রযুক্তিসহ নতুন আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে তিব্বতের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক জীবন এবং অবকাঠামোগত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
লাসা শহরের কেন্দ্রস্থলে কার্পেট তৈরীর একটি বিখ্যাত কারখানা রয়েছে। এ কারখানার মহাপরিচালক এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি তসেরিং দ্রোল্কারের নেতৃতে পরিচালিত এ কারখানার ৩০ বছরেরও বেশি সুনাম রয়েছে । লাসা অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৮ সালে এ কার্পেট কারাখানায় উত্পাদিত পণ্যের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ইউয়ান। এ কারখানার তৈরী সুন্দর কার্পেট চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে বিক্রী হচ্ছে। এছাড়াও, এ কার্পেট যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিদেশী বাজারে রপ্তানি হয়েছে। এ সম্পর্কে এ কারখানার অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন:
" কার্পেট তৈরীর কাজে আমরা সবসময় ঐতিহ্যবাহী হস্ত তৈরীর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। কার্পেটে নানা ধরণের বিভিন্ন ভিন্ন রঙের ছবি রয়েছে। ক্রেতাদের যদি কার্পেট ব্যবসায়ীদের তৈরী কার্পেট পছন্দ না হয়, তাহলে ক্রেতারা নিজেদের বাছাই ও পছন্দ অনুযায়ী ব্যবসায়ীদেরকে কার্পেট তৈরী করে দেয়ার কথা বলতে পারেন।"
কার্পেট ডিজাইনের কাজ ইতোমধ্যেই এ বছরের শেষ দিকে এসে আরো উন্নত হচ্ছে। এ কারখানার একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, এ কারখানার আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা গোষ্ঠীকরণের দিকে পরিণত হচ্ছে।
1 2 |