মহাকাশে মাছি ও কোষ নিয়ে গবেষণা করছে চীন
2024-11-24 16:42:27

নভেম্বর ২৪, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীকে ঘিরে আছে এক অদৃশ্য শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র, যা কিনা কাজ করে অদৃশ্য শক্তিবলয়ের মতো এবং ওটার কারণেই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বেঁচে থাকতে পারে পৃথিবীর যাবতীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী। কিন্তু মঙ্গল গ্রহ বা চাঁদের এমন চৌম্বকক্ষেত্র নেই। এমন প্রতিকূল পরিবেশ প্রাণীর ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে সেটা জানতে সম্প্রতি কক্ষপথে ফ্রুট ফ্লাই বা ফলের মাছি নিয়ে গেলেন চীনা নভোচারীরা। অন্যদিকে কোষ নিয়ে গবেষণা করতে সম্প্রতি থিয়ানকংয়ে একটি গবেষণা মডিউল পরিবহন করে নিয়ে গেছে থিয়ানচৌ-৮ কার্গো স্পেসশিপ।

এ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান লি ইয়ান বলেন, ‘মহাকাশ স্টেশনটি পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথে রয়েছে। সেখানে চৌম্বক ক্ষেত্রের মাত্রা পৃথিবীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। তবে আমরা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের স্তরের সঙ্গে মিলিয় সেখানে আরেকটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র স্থাপন করেছি। ওই ক্ষেত্রটির ফলে মহাকাশ স্টেশনের ভেতরের চৌম্বক ক্ষেত্রের মান শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে দেয়। ওই ধরনের নানা পরিবেশে প্রাপ্তবয়স্ক মাছি ও সদ্য বিকশিত মাছির ওপর গবেষণা করা হবে।’

ফলের মাছির জিনের সঙ্গে মানুষের মিল রয়েছে। তাই গবেষণাটি মানুষের জিনগত অনেক রোগ বুঝতে সাহায্য করবে। আবার মানুষ কীভাবে মহাকাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে, সেটা নিয়েও তথ্য দেবে।

মাইক্রোগ্র্যাভিটির মতো জটিল পরিবেশে প্রাণীদের বেঁচে থাকা, প্রজনন এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ নিয়েও চলবে গবেষণা। এরপর মাছিগুলোকে ফিরিয়ে আনা হবে পৃথিবীতে।

লি ইয়ান আরও জানালেন, ‘ফিরিয়ে আনা মাছির নমুনাগুলো হিমায়িত থাকবে। আমরা তখন সেগুলোর জিনগত পরিবর্তনগুলো পরীক্ষা করব এবং পৃথিবীতে থাকা মাছিগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখবো। এরপর মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব ও চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুপস্থিতির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে পারবো।’

গত ৩০ অক্টোবরে চীনা মহাকাশ স্টেশন থিয়ানকংয়ে পৌঁছান শেনচৌ-১৯ মিশনের তিন নভোচারী। সম্প্রতি তাদের জন্য রসদ নিয়ে মহাকাশে গেছে থিয়ানচৌ-৮ কার্গো যান। ফলের মাছির পাশাপাশি কোষ ও টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করার একটি সম্পূর্ণ নতুন মডিউলও ছিল তাতে।

মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণের পরিবেশে মানবদেহের স্টেমকোষ, হাড় ও ফুসফুসের কোষ নিয়ে গবেষণা করা হবে ওই যন্ত্র দিয়ে। মডিউলটিতে ছিল একটি বায়োটেকনোলজি এক্সপেরিমেন্ট ক্যাবিনেট। তাতেই নেওয়া হয়েছে কোষ টিসু ও নানা ধরনের জৈবিক উপকরণ।

চায়না স্পেস স্টেশন লাইফ ইকলোজিক্যাল সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট সিস্টেমের ডিজাইনার চেং ওয়েইবো জানালেন, ‘এর নমুনা ইউনিটগুলো তিনটি ড্রয়ারে আছে। মহাকাশচারীরা দ্রুত এগুলো ইনস্টল করে নিতে পারবেন। পরীক্ষা ইউনিটগুলো বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতেই সাজিয়ে নিয়েছেন। উৎক্ষেপণের আগে এগুলোকে কার্গো ক্রাফটের জৈবিক সাপোর্ট সিস্টেমে স্থাপন করা হয়। মহাকাশচারীরা ইউনিটগুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দিলেই পরীক্ষার মডিউলে সেগুলো যুক্ত হবে।’

একটি বহুমুখী স্বয়ংক্রিয় মাইক্রোস্কোপও এ মডিউলে যুক্ত করা হয়েছে, যা মাইক্রোগ্যাভিটি পরিবেশে কোষের বিস্তার ও নানা ধরনের পার্থক্য তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

 

থিয়ানকং মহাকাশ স্টেশনে নতুন করে আরও ৩৬টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে চীন। পরবর্তীতে এসব গবেষণার তথ্য উপাত্ত থেকে উপকৃত হবে সারা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা এবং মহাকাশ জয়ে দ্রুত আরও কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে মানবসভ্যতা।

 

ফয়সল/শান্তা

 

তথ্য ও ছবি: সিসিটিভি