চীন ও ব্রাজিলকে ‘উইন্ডব্রেকার’ এবং ‘ওয়েভ চেজার’ হতে হবে
2024-11-22 18:40:40

ব্রাজিল সময় ১৭ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে, জি-২০ নেতাদের ১৯তম শীর্ষসম্মেলনে যোগ দিয়েছেন এবং ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন।

 

পূর্ব গোলার্ধ থেকে পশ্চিম গোলার্ধে, পাহাড় ও সমুদ্র জুড়ে, প্রেসিডেন্ট সির ব্রাজিল সফর কি প্রত্যাশা বহন করে এবং এটি কোন সংকেত পাঠায়?

দশ বছর আগে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রাজিলের কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, চীনা জনগণ বিশ্বাস করে, ভাগ্য থাকলে, আমরা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারব, তা যত দূরেই হোক না কেন, যাকে ‘হাজার হাজার মাইল দূরে দেখা’ বলা হয়।

 

চীন এবং ব্রাজিল হল পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ। দূরত্ব অনেক বেশি, কিন্তু ভাগ্য গভীর। প্রেসিডেন্ট সি এবার ব্রাজিলের বিমানবন্দরে এসে তার লিখিত ভাষণে বলেন, আমি চারবার ব্রাজিল সফর করেছি এবং গত ৩০ বছরে ব্রাজিলের উন্নয়ন ও পরিবর্তন দেখেছি।

১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে, সি চিন পিং, তৎকালীন ফুজিয়ান প্রাদেশিক সিপিসি’র উপ সম্পাদক এবং ফুচৌ শহরের সিপিসি সম্পাদক  ছিলেন, প্রথমবারের মতো ব্রাজিল সফর করেন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, তৎকালীন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আবার ব্রাজিল সফর করেন এবং তৎকালীন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার সাথে দেখা করেন।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট সি দুইবার ব্রাজিল সফর করেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে, তিনি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ব্রিকস নেতাদের বৈঠক এবং চীন-ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান নেতাদের বৈঠকে যোগদান করেন এবং ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে, তিনি ১১তম ব্রিকস নেতাদের বৈঠকে যোগ দিতে ব্রাজিল যান।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাও চারবার চীন সফর করেছেন। গত বছরের এপ্রিলে বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি বলেছিলেন, "প্রথমত, আমি বলতে চাই যে, চতুর্থবারের মতো চীন সফর করতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত।"

এই বছরটি চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি স্মরণীয় বছর। এ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। গত ১৫ অগাস্ট যখন প্রেসিডেন্ট সি চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি লুলার সাথে অভিনন্দনবার্তা বিনিময় করেন, তখন তিনি ব্যক্ত করেন যে, চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীকে একটি নতুন সূচনাবিন্দু হিসাবে দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর সমন্বয়কে জোরদার করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা আরও গভীর করতে চায় চীন। যাতে চীন-ব্রাজিল সম্পর্ককে নতুন যুগের সংকেত এবং যৌথভাবে চীন-ব্রাজিল অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলা যায়।

 

ব্রাজিল লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ, এবং চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক অনেক ‘প্রথম’ তৈরি করেছে। ব্রাজিল চীনের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থাপনকারী প্রথম দেশ এবং চীনের সঙ্গে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম লাতিন আমেরিকান দেশ।

দশ বছর আগে, যখন প্রেসিডেন্ট সি ব্রাজিলের কংগ্রেসে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তখন তিনি ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহোর একটি বাক্য উদ্ধৃত করেছিলেন: ‘বিশ্ব তাদের হাতে রয়েছে, যাদের নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজের প্রতিভার উপর নির্ভর করার সাহস আছে।" সি চিন পিং বলেন, চীন ও লাতিন আমেরিকার একসঙ্গে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাহস থাকা উচিত।

ব্রাজিলে এই সফর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সি ব্রাজিলের গণমাধ্যমে একটি স্বাক্ষরিত নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যার শিরোনাম "হাজার মাইল অতিক্রম করে হাত মেলানো এবং ভালো বন্ধুদের যৌথ যাত্রা।"

প্রেসিডেন্ট সি প্রবন্ধে বলেছেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের দুটি প্রধান উন্নয়নশীল দেশ এবং ব্রিকসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে চীন ও ব্রাজিলকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত হতে হবে এবং সাহসিকতার সাথে ‘উইন্ডব্রেকার’ এবং ‘ওয়েভ চেজার’ হতে হবে।

ব্রাজিল অত্যন্ত আবেগের সাথে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে স্বাগত জানিয়েছে।

১৮ ও ১৯ তারিখে, চলতি বছরের জি-২০ শীর্ষসম্মেলন রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়।

রিও ডি জেনিরো ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এবং এটি ব্রাজিলের অর্থনৈতিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে একটি। শহরটি ‘অসাধারণ শহর’ নামে পরিচিত। এটি ১৯৯২ সালের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন, ২০১২ সালের জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন শীর্ষসম্মেলন এবং ২০১৬ সালের অলিম্পিক গেমস-সহ বহু আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করেছে।

      

                                             

১৮২২ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬০ সালে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে স্থানান্তরিত হওয়া পর্যন্ত রিও ডি জেনেরিও ব্রাজিলের রাজধানী ছিল। পুরানো শহরটি এখনও রাষ্ট্রপতির পুরোনো প্রাসাদ, সংসদ এবং পুরানো রাজধানীর অন্যান্য ভবনগুলো ধরে রেখেছে। এ বছরের জি-২০ সম্মেলনের ভেন্যু শহরের মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টে অবস্থিত। রাস্তায়, সর্বত্র ‘জি-২০ ক্যাপিটাল’ চিহ্ন দেখা যায়।

এই বছরের জুন মাসে, প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং যখন চীন সফররত ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ডো অ্যালকমিনের সাথে সাক্ষাত করেন, তিনি বলেছিলেন যে, চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৃহত্তর ভূমিকা পালনে ব্রাজিলকে সমর্থন করে এবং এই বছরের জি-২০ নেতাদের শীর্ষসম্মেলন সফলভাবে আয়োজনে ব্রাজিলকে সমর্থন জানায়।

"চীন ও ব্রাজিল কীভাবে 'উইন্ড ব্রেকার' এবং 'ওয়েভ চেজার' হওয়ার সাহস পেতে পারে?" এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে প্রেসিডেন্ট সি'র সফরের স্বাক্ষরিত নিবন্ধে। নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট সি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে চীন-ব্রাজিল বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করতে হবে এবং পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার জন্য নতুন পথ খুঁজতে হবে। এছাড়াও, তিনি চীন ও ব্রাজিলের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

 

‘উইন্ড ব্রেকার’ এবং ‘ওয়েভ চেজার’ হওয়ার সাহস পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট সি দুটি মূল শব্দকে গুরুত্ব দিয়েছেন: ‘ন্যায়’ এবং ‘টেকসই’। এই শব্দ দুটি এই জি-২০ শীর্ষসম্মেলনের থিম ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং একটি টেকসই গ্রহ নির্মাণ’কেও প্রতিফলিত করে।

 

চীন ও ব্রাজিলের জন্য, "ন্যায়বিচার" ও "টেকসই অবস্থা" চীন ও ব্রাজিলের অভিন্ন কল্যাণের সমাজ নির্মাণের যৌথভাবে প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ।

গত বছরের এপ্রিলে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা চীন সফর করেন এবং দুই রাষ্ট্রপ্রধান নতুন যুগে চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং উন্মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এই বছরের জুনে, প্রেসিডেন্ট সি যখন ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালকমিনের সাথে সাক্ষাত করেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে চীন প্রথম হওয়ার সাহসিকতার অগ্রণী মনোভাব বজায় রাখতে ব্রাজিলের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য আরও এগিয়ে যাওয়ার সাথে কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে ইচ্ছুক।

এই সফরের সময়, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে তিনি চীন-ব্রাজিল সম্পর্ককে একটি নতুন "সোনালি ৫০ বছরে" নিয়ে যেতে এবং একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ ও আরও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রেসিডেন্ট লুলার সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।

 

বর্তমানে, বিশ্বের পরিবর্তনগুলি ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং একের পর এক নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন আসছে। "শতশত জাহাজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, এবং যারা এগিয়ে যায় তারাই প্রথম; হাজার হাজার পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, এবং যারা সাহসের সাথে এগিয়ে যায় তারা জয়ী হয়।" ঠিক যেমন প্রেসিডেন্ট সি তার স্বাক্ষরিত নিবন্ধে বলেছেন, চীন ও ব্রাজিলকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত হতে হবে এবং যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। "উইন্ড ব্রেকার" এবং "ওয়েভ চেজার" হতে হবে। একটি নতুন চ্যানেল খোলার জন্য পাশাপাশি কাজ করতে হবে, দুই দেশের মানুষ এবং মানবজাতির জন্য একটি ভাল ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করার জন্য হাত মেলাতে হবে।

 

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)