সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এশিয়ান-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) এবং জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা বিশ্বের নজর কেড়েছে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি এবং বক্তব্য চীনের বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী প্রভাবকে প্রতিফলিত করেছে।
এপেক সম্মেলনে সি চিন পিং-এর ভূমিকা:
গত শনিবার সকালে এপেকের ৩১তম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষসম্মেলন পেরুর রাজধানী লিমায় অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্মেলনে ‘যৌথভাবে যুগের দায়িত্ব বহন করা, যৌথভাবে এশিয়া-প্যাসিফিক উন্নয়ন জোরদার করা’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। এপেক সম্মেলনে সি চিন পিং মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে কথা বলেছেন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। প্রথমত, একটি উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, সবুজ উদ্ভাবনের এশিয়া-প্যাসিফিক বৃদ্ধির শক্তি লালন করা। তৃতীয়ত, সহনশীল এশিয়া-প্যাসিফিক উন্নয়নের ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জি২০ সম্মেলনে সি চিন পিং-এর ভূমিকা:
এরপর গত সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জি২০ নেতাদের ১৯তম শীর্ষসম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। জি২০ সম্মেলনে সি চিন পিং বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের জন্য বহুপক্ষবাদে জোর দিয়েছেন। তিনি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। জনাব সি’র ভাষণে বিশ্বের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া ও বিশ্ব প্রশাসন উন্নয়নে ধারাবাহিক বাস্তব পদক্ষেপ উত্থাপিত হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মতৈক্য এগিয়ে নেওয়া ও বিভিন্ন দেশের যৌথভাবে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট সি’র গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ
এসব বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরা হলো।
বহুপক্ষবাদ: সি চিন পিং বহুপক্ষবাদকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি হিসেবে দেখেছেন। তিনি একতরফা নীতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন।মুক্ত বাণিজ্য: তিনি মুক্ত বাণিজ্যকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখেছেন এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন।জলবায়ু পরিবর্তন: সি চিন পিং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং এই সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা: তিনি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে জোর দিয়েছেন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা:
চীনা নেতার এসব সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং বক্তব্য চীনের বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে স্পষ্ট করেছে। চীন এখন বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। সি চিন পিং এপেক ও জি২০ সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে বারবার এই দেশগুলোর উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং সমস্যা সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন।
জনাব সি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো উচিত। চীন নিজেই এই ধরনের সহযোগিতার একজন প্রধান অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায়। এক্ষেত্রে তিনি বহুপক্ষবাদকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন যে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। তিনি একতরফা নীতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। তিনি গরিব দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও বেশি করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। জনাব সি বলেছেন যে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি জোরদার হবে।
সি চিন পিং-এর এই বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে চীন গ্লোবাল সাউথে তার প্রভাব বাড়াতে চাইছে। তিনি চীনকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে চীনের এই উদ্যোগের পেছনে নিজস্ব স্বার্থও লুকিয়ে থাকতে পারে।
মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা।