‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৯৬ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব কমাতে ১০টি প্রস্তাব
২. চীনা ভাষা সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদরা যা বললেন
৩. চীনে ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখেছে লাখো দর্শক
১. বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব কমাতে ১০টি প্রস্তাব
প্রতি বছর বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে আসছেন। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের হার কম। এর প্রধান কারণ দেশের অর্থনীতির বড় অংশ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক। উচ্চশিক্ষিতরা উৎপাদন খাত ও কারখানা পর্যায়ে কাজ করতে চান না। ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগ্রহও কম তাদের। বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি চাকরিতে তাদের আগ্রহ বেশি। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্নাতকধারীদের বেশির ভাগেরই বিষয়ভিত্তিক বাস্তবিক জ্ঞান অনেক কম থাকে। এ অবস্থায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমাতে হলে শ্রমবাজারে চাকরির প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্র বাড়াতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় নাগরিক প্লাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম আয়োজিত এক সংলাপ অধিবেশন থেকে এমন কথা উঠে আসে। এই সংলাপের মূল বিষয় ছিলো ‘কর্মসংস্থান ও শিক্ষিত বেকার সংকট সমাধানে রাষ্ট্রের করণীয়’।
সংলাপে দেশে শিক্ষিত বেকারত্ব লাঘবে ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম শিক্ষিত বেকারত্বসংক্রান্ত সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ; আগামী পাঁচ বছরের জন্য খাতভিত্তিক শ্রমবাজারের ডিমান্ড ফোরকাস্ট করে সে অনুসারে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দিকনির্দেশনা প্রদান; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজে বাধ্যতামূলক ভোকেশনাল কোর্স চালু; সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সম্পন্নের জন্য (সব বিষয়ে) বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ চালুর বিধান করা; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক চাকরি ও উচ্চ শিক্ষার হার প্রকাশ; প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ছাড়াও অন্য বিদেশী ভাষা সেন্টার খোলা, ফ্রিল্যান্সিং বা গিগ কর্মসংস্থান উদ্যোগকে এমএসএমই ব্যবসায় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও এমএসএমই ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্ত ও কম সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ শেষে বা চাকরি নিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু স্নাতকদের ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং দেশে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্য আলাদা এইচআরডি মন্ত্রণালয় গঠন।
সংলাপে বক্তারা বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর সব মিলিয়ে ২৪ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। এর মধ্যে ৫ থেকে ১০ লাখ দেশের বাইরে যান, যাদের অধিকাংশই অদক্ষ। দেশে বাকিদের সবার চাকরি হয় না। সে জন্য বিদেশে প্রশিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া দরকার। তাতে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।’
সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. চীনা ভাষা সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদরা যা বললেন
সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব চীনা ভাষা সম্মেলন ২০২৪। এতে , চীনা ভাষা শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে ১৬০টি দেশ ও অঞ্চলের ২ হাজারের বেশি শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত এবং গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন।
"ইন্টারকানেকশন এবং ইন্টিগ্রেশন" থিম নিয়ে তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে শক্তিশালী করা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করা। সম্মেলনে আন্তঃ সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের প্রচারে ভাষা শিক্ষার ভূমিকা তুলে ধরেন শিক্ষাবিদরা।
স্ট্রালসান্ড ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফাল্ক হোহেন বলেন, "বেশিরভাগ বিজ্ঞান এবং এই ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীদের জন্য, চীনে কী ঘটছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিবন্ধ এবং ম্যাগাজিন পড়তে হবে।"
আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, অনেক শিক্ষাবিদ বাধা বিপত্তি, স্টিরিওটাইপ এবং ভুল বোঝাবুঝি ভেঙ্গে, মানুষে মানুষে সম্পর্কের উন্নয়নে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
প্যাসিফিক লুথেরান ইউনিভার্সিটির চাইনিজ স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক পল মানফ্রেডি বলেন, "বিশেষ করে তরুণদের জন্য, আমি মনে করি, চাইনিজ অধ্যয়ন অবশ্যই সব ধরণের সুযোগ উপস্থাপন করে। আদর্শের দিক থেকে যাই ঘটুক না কেন আমরা একটি সংযুক্ত দেশ।’’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভাষা শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের বিকাশের একটি হাতিয়ার নয় বরং এটি একজনের দিগন্ত প্রসারিত করার এবং আরও সম্ভাবনা দেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৩ কোটির বেশি মানুষ চীনা ভাষা শেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. চীনে ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখেছে লাখো দর্শক
চীনা তরুণদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ই স্পোর্টস। অনলাইন ভিত্তিক গেইমিং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি খাত। চীনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্ট ফাইনালে বিপুল সংখ্যক অনুরাগীদের উপস্থিতিই যা প্রমাণ করেছে আরও একবার।
চীনের প্রিমিয়ার অনার অব কিংস টুর্নামেন্টের কিং প্রো লিগ গ্র্যান্ড ফাইনাল ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেল সপ্তাহে বেইজিংয়ে এই ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
সরাসরি তিন হাজার দর্শক এ অনুষ্ঠান উপভোগ করলেও অনলাইনে লাখ লাখ দর্শককে মুগ্ধ করেছে। দর্শক সারিতে বেশিরভাগই ছিল তরুণ।
এর আগে চীন জুড়ে ক্রীড়া উত্সাহীরা ফাইনালের জন্য বেইজিংয়ে জড়ো হন, যেখানে তাদের প্রিয় দলগুলো চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য লড়াই করছিল। সুপার প্লে বাছাইপর্বে বেইজিং ডব্লিউবি’র সঙ্গে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ছেংতু এজি।
এরইমধ্যে, ছোংছিং উলভস রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন করেছে।চিনান আরডব্লিউ সিয়া এবং উহান ই-স্টার প্রোর বিরুদ্ধে "এক বনাম দুই" জয় পেয়েছে তারা।
খেলা দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ভক্তানুরাগীরা। "আমি ছোংছিং উলভসের ভক্ত। ছোংছিং এবং শাংহাইতে উলভসের খেলা দেখেছি। এটি আমার দেখা প্রথম ফাইনাল"।
আয়োজকরা বলছেন, কেপিএল-এর মতো বড় টুর্নামেন্ট তরুণ অনুরাগীদের জন্য শুধু চমক নয়, ই স্পোর্টস স্ট্রিমিং এবং টিকিট বিক্রির ক্রমবর্ধমান আয়ের পেছনেও ভূমিকা রাখছে এটি।
ই স্পোর্টস চীনে খুব অল্প সময়ে প্রসারিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই বছরের শেষ নাগাদ এ খাত প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হবে।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, ই স্পোর্টস চীনা তরুণদের জন্য আরও কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন শিল্পে পরিণত হয়েছে বলে জানান তারা।
২০২৩ সালের হাংচৌ এশিয়ান গেমসের সময় টিম চীনের প্রতিনিধিত্ব করে শিরোনামে চলে আসেন ছেংতু এজির সদস্য পি ছ্যং। সেখান থেকেই অনার অফ কিংস একটি অফিসিয়াল অনলাইন গেইম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে চীনে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী