২০ নভেম্বর: গত কয়েকদিনে, জি-২০ নেতাদের রিও ডি জেনিরোর শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভাবছে: রিও থেকে শুরু করে মানবজাতির কী ধরনের বিশ্ব গড়ে তোলা উচিত? কীভাবে এই পৃথিবী গড়ব? কিভাবে বিশ্বব্যাপী শাসন সংস্কার অগ্রসর হবে? এতে জি-২০’র কী ভূমিকা পালন করা উচিত? স্থানীয় সময় সোমবার শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিয়েছে।
‘একটি সাধারণ উন্নয়নের ন্যায়বিচারের বিশ্ব গড়ে তোলা’ এবং ‘একটি ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য হাত মেলানো’ শিরোনামে বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট সি শীর্ষ সম্মেলনে সব দেশের অভিন্ন উন্নয়নের জন্য প্রধান প্রস্তাব পেশ করেন এবং বিশ্ব উন্নয়নকে সমর্থন করার জন্য চীনের আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। একই সময়ে, তিনি অর্থনীতি, অর্থ, বাণিজ্য, ডিজিটাল, পরিবেশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে চীনের বৈশ্বিক শাসনের ধারণাগুলো ব্যাপক ও বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন, যা সভায় উপস্থিত সকল পক্ষের মধ্যে ব্যাপক অনুরণন জাগিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে চীনের প্রস্তাবনা ও কর্মগুলো বিশ্বের সাধারণ উন্নয়নে প্রজ্ঞা ও প্রেরণা যোগ করেছে, বিশ্ব শাসনের উন্নতির জন্য একটি ‘রোডম্যাপ’ প্রদান করেছে, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানব উন্নয়নের প্রবণতাগুলোর গভীর উপলব্ধি প্রতিফলিত করেছে এবং একটি মহান দেশের দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করেছে।
সুন্দর জীবন যাপন এবং আধুনিকীকরণ উপলব্ধি করা সকল দেশের মানুষের সাধারণ সাধনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বৈশ্বিক উত্তর-দক্ষিণ ব্যবধান, পুনরুদ্ধার বিমুখতা এবং প্রযুক্তিগত বিভাজনের মতো সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে উঠেছে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশ সমস্যায় পড়েছে। জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখায় যে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৩৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে এবং ১১ জনের মধ্যে ১ জনের প্রর্যাপ্ত খাবার নেই। দারিদ্র্য থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়? এই প্রসঙ্গে, চীনের ৮০০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করার গল্প মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যমুক্তকরণ প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে না, বরং ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উন্নয়নের আস্থাকে কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করায় যে, চীন সফল হতে পারে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও সফল হতে পারে।
প্রকৃত উন্নয়ন ঘটে যখন সকলের একসাথে বিকাশ করে। সাধারণ উন্নয়নের ন্যায়বিচারপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য, চীন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য এজেন্ডার কেন্দ্রে প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবারের জি-২০ সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট সি আরও চারটি পরামর্শ পেশ করেছেন, এ গুলো হলো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পরিবেশগত সভ্যতা, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিবেশ এবং বহুপাক্ষিকতা মেনে চলা। এটি চীনের ধারাবাহিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে যে দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হওয়া এবং ধনীরা আরো ধনী হওয়ার ভিত্তিতে বিশ্ব সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা তৈরি করা যায় না এবং বিশ্বকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সর্বজনীন, ব্যাপক উপকারী এবং আরও স্থিতিস্থাপক বিশ্ব উন্নয়নের প্রচার করতে হবে।
একই সময়ে, চীন বিশ্ব উন্নয়ন সমর্থনে আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ এর উচ্চ-মানের যৌথ নির্মাণ, দারিদ্র্যমুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, ডিজিটাল অর্থনীতি ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা গভীর করা, আফ্রিকার উন্নয়ন সমর্থন করা, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে স্বতন্ত্র উন্মুক্তকরণ ইত্যাদি। চীন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিলের প্রস্তাবিত ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স’-এ যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে চীন শুধু ‘গ্লোবাল সাউথ’ এর উন্নয়ন সমর্থনের কথা বলে না, কাজেও তা প্রতিফলিত করে।
সাধারণ উন্নয়ন অর্জন বিশ্ব শাসনের উন্নতি থেকে অবিচ্ছেদ্য। এই শীর্ষ সম্মেলনে, চীন একটি সমবায়ভিত্তিক, স্থিতিশীল, উন্মুক্ত, উদ্ভাবনী এবং পরিবেশ-বান্ধব বিশ্ব অর্থনীতির নির্মাণের উপর জোর দিয়ে অর্থনীতি, অর্থ, বাণিজ্য, ডিজিটাল এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে শাসনের উপর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থার উন্নতির বিষয়ে চীনের প্রস্তাবের প্রতি বহির্বিশ্ব বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে, যা ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর’ জোর দেওয়া।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বৈশ্বিক শাসনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ‘গ্লোবাল সাউথ’ গ্রুপের উত্থান। কিন্তু বর্তমান শাসন ব্যবস্থা এই পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে না। ‘বিশ্বব্যাংকের ইক্যুইটি পর্যালোচনা করা, এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শেয়ার অনুপাতের সমন্বয়কে উন্নীত করা’, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কারের প্রচার চালিয়ে যাওয়া’, "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমস্ত মানবজাতির কল্যাণের জন্য নিশ্চিত করা, এবং এটিকে যাতে ধনী দেশ এবং ধনী ব্যক্তিদের খেলা না হয়, তা নিশ্চিত করা’। এসব ‘চীন প্রস্তাব’ বৈশ্বিক দক্ষিণ দেশগুলোর নিজের কণ্ঠস্বর প্রচার করতে এবং বিশ্বব্যাপী শাসনকে আরও ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত দিকে উন্নীত করার জন্য চীনের প্রচেষ্টা প্রতিফলিত করে।
আধুনিকায়নের পথে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না, কোনো দেশকেও পিছিয়ে রাখা যাবে না। রিও থেকে শুরু করে, জি-২০ বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং ঐতিহাসিক অগ্রগতির প্রচারের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি হিসাবে অবিরত থাকা উচিত। একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে, চীন একটি সম ও সুশৃঙ্খল বহু-মেরু বিশ্ব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রচার চালিয়ে যাবে যা সকলকে উপকৃত করে, একই সঙ্গে অভিন্ন উন্নয়ন অর্জন এবং বিশ্ব শাসনের উন্নতির প্রক্রিয়ায় একটি ‘চীনা চিহ্ন’ ও চীনা শক্তি’ অবদান রাখবে।
(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)