থাইল্যান্ড হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গাড়ি উত্পাদনকেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় থাই সরকার, বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্প উন্নয়ন করে আসছে, যাতে ঐতিহ্যবাহী অটোমোবাইল শিল্পের রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা যায়।
রাজধানী ব্যাংককের ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রায়ং প্রদেশের শিল্প উদ্যানে একটি প্রায় ১০ লাখ বর্গমিটারের গাড়ি কারখানা আছে। এটি হলো চীনা গাড়ি বিওয়াইডি’র কারখানা। গত জুলাই মাসে কারখানাটি নির্মিত হয়।
গত জুলাই পর্যন্ত, চীনা গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি, সাই সি এমজি, গ্রেটওয়াল, নেচা, ছাংআন, জিএসি আইআন ও চেরি থাইল্যান্ডে কারখানা নির্মাণ করেছে। থাইল্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি সমিতির চেয়ারম্যান সুরা সানি সাংবাদিককে জানান, চীনা গাড়ি প্রতিষ্ঠানগুলো থাইল্যান্ডসহ আসিয়ানের বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্প চেইনের আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করবে।
তিনি আরও বলেন, “চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রতিষ্ঠানগুলোর আসিয়ানের দেশগুলোয় বিনিয়োগ আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। আমরা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উচ্চমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি যন্ত্রাংশ উত্পাদনের প্রযুক্তি শিখতে পারি।”
২০২২ সাল থেকে থাইল্যান্ড বৈদ্যুতিক গাড়ি উত্পাদনের ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো থাইল্যান্ডে বিশুদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করলে ১.৫ লাখ বাথ ক্রয়-ভর্তুকি পেতে পারে। গত পয়লা জানুয়ারি থাইল্যান্ড দ্বিতীয় দফা বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি সারা বিশ্বের নতুন জ্বালানিসম্পদচালিত গাড়ি কোম্পানিগুলোকে সেদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে। বিওয়াইডি’র থাইল্যান্ডের শাখা কোম্পানির সাধারণ ম্যানেজার খ্যে ইউ পিন বলেন, “থাইল্যান্ড সরকার আমাদেরকে ৫ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত কর্পোরেট আয়কর হ্রাস বা ছাড় প্রদান করেছে। এ ছাড়া, ব্যাটারিসহ কোনো কোনো যন্ত্রাংশের রপ্তানির ওপর কর হ্রাস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়া ছাড়াও, থাই সরকার সেদেশের বৈদ্যুতিক যানবাহন কেনার জন্য স্থানীয় গ্রাহকদের গাড়িপ্রতি ১ লাখ বাথ পর্যন্ত ক্রয়-ভর্তুকি প্রদান করে। থাই সরকার সারা দেশে পাবলিক চার্জিং স্টেশনসহ অবকাঠামো নির্মাণ ত্বরান্বিত করার চেষ্টাও করছে। বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থায় অধিক থেকে অধিকরত থাই ভোক্তা নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি কিনছেন। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে নিবন্ধিত বিশুদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজারটি, যা মোট নিবন্ধিত গাড়ির ১২ শতাংশ। এর মধ্যে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রয়ের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজারটি। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত থাইল্যান্ডে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রয়ের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি ছিল, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
থাইল্যান্ডের একজন ভোক্তা বলেন, ‘নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি আমার জন্য খরচ সাশ্রয় করে। এটি হলো আমার বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার কারণ।’
বিওয়াইডি’র বিক্রয় ম্যানেজার চিদাপোল বদনপ্রীদা বলেন, চীনা ব্রান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির অনেক উপকারিতা আছে। থাই ভোক্তাদের সামনে এখন বাছাই করার সুযোগ বেশি। চীনা বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো থাইল্যান্ডে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
চীনা গাড়ি প্রতিষ্ঠানগুলোর থাইল্যান্ডে বিনিয়োগ, বিদেশী বাজার উন্নয়নের পাশাপাশি, থাই গাড়িশিল্পের রূপান্তর ত্বরান্বিত করছে। এ ছাড়াও, দু’দেশের মধ্যে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে সহযোগিতাও ত্বরান্বিত হচ্ছে। থাইল্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি সমিতির চেয়ারম্যান সুরা সানি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আগামী এক থেকে দুই বছরে, দু’দেশের বৈদ্যুতিক গাড়ির সহযোগিতা দ্রুত উন্নত হবে। আমি একটি বিরাট সহযোগিতা ও উন্নয়নের সুযোগ দেখছি।” (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)