১৮ নভেম্বর: “চীন ২০২৬ সালে এপেকের আয়োজক হিসাবে কাজ করবে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে এবং এ অঞ্চলের জনগণের উপকার করার জন্য সকল পক্ষের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।” ৩১তম এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এ ঘোষণা পেরুর রাজধানী লিমা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১২ বছর পর চীন আবারও এপেকের আয়োজক হিসেবে কাজ করবে। বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে, এটি এশিয়া-প্যাসিফিকের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য চীনের দৃঢ় সংকল্প ও দায়িত্ববোধ প্রতিফলিত করে।
২০১৩ সাল থেকে, রাষ্ট্রপতি সি বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি অভিন্ন কল্যাণের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিউনিটি গড়ে তোলার ধারণা এবং প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন। এবার ইতিহাসের মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট সি আবারও চীনের সমাধান নিয়ে এসেছেন। লোকেরা লক্ষ্য করেছে যে রাষ্ট্রপতি সি এপেক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন এবং বিজনেস লিডারস সামিটে একটি লিখিত বক্তৃতা দেন। তাঁর ভাষণের শিরোনামে একটি অভিন্ন প্রধান শব্দ ‘যুগ’ রয়েছে। তাহলে, আমরা কোন যুগে আছি? কালের প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিব?
বর্তমানে, বিশ্ব অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল, একতরফাবাদ এবং সংরক্ষণবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন উল্টো স্রোতের সম্মুখীন হচ্ছে। ‘ওয়ার্ল্ড ওপেননেস রিপোর্ট ২০২৪" দেখায় যে ২০২৩ সালে বিশ্ব উন্মুক্ততা সূচক ২০০৮ সালের তুলনায় ৫.৪৩% কমেছে। একই সময়ে, নতুন দফা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং শিল্প পরিবর্তন গভীরভাবে বিকশিত হয়েছে, আবার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের জন্য শক্তিশালী গতি সঞ্চয় করছে।
‘একটি উন্মুক্ত ও সমন্বিত এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার প্যাটার্ন তৈরি করা’, ‘সবুজ ও উদ্ভাবনী এশিয়া-প্যাসিফিক বৃদ্ধির গতিবেগ লালন করা’ এবং ‘একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উন্নয়ন ধারণা নিশ্চিত করা’ - এবারের এপেক শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি যে তিনটি পরামর্শ পেশ করেছিলেন একটি এশিয়া-প্যাসিফিক কমিউনিটি এবং এশিয়া-প্যাসিফিক উন্নয়নের নতুন যুগ তৈরি করার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করে।
উন্মুক্ততা এবং অন্তর্ভুক্তি এশিয়া-প্যাসিফিকের বৈশিষ্ট্য। দশ বছর আগে, এপেক বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকার প্রক্রিয়া চালু করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শীর্ষ সম্মেলন এশিয়া-প্যাসিফিক মুক্ত বাণিজ্য এলাকা নির্মাণের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা নথি গৃহীত হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হিসাবে বিবেচিত হয়। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি বাণিজ্য উদারীকরণের জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রচেষ্টা এবং সংকল্পকে প্রতিফলিত করে এবং ২০৪০ পুত্রজায়া ভিশন বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সবাই বিকশিত হলেই আমরা সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন করতে পারব। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য, যৌথভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ‘কেক’ বড় করা এবং ভাগাভাগি করা, যাতে আরও বেশি অর্থনৈতিক সত্ত্বা এবং আরও বেশি মানুষ উন্নয়নের ফল ভাগ করে নিতে পারে, এটিই ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের লক্ষ্য। চীন সবসময় জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়য়নের ধারণাকে মেনে চলে। এবার চীন বলেছে যে এপেকের মধ্যে জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ গোষ্ঠীর বিকাশের মতো উদ্যোগগুলোকে প্রচার করবে। এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের মঙ্গল বৃদ্ধি করবে, সামাজিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারকে উন্নীত করবে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে।
সবুজ এবং ডিজিটাল উন্নয়ন এশিয়া প্যাসিফিকের নতুন স্বাক্ষর। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট সি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন থেকে উৎপাদনশীলতা খোঁজার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উদীয়মান প্রযুক্তির সক্রিয় ভূমিকাকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর এবং বৈজ্ঞানিক ও একটি নতুন দফা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সাথে বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রেরণা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, চীন ঘোষণা করেছে যে, ‘গ্লোবাল ডেটা ক্রস-বর্ডার ফ্লো কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ’ প্রকাশ করবে। এই উদ্যোগটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এটি চীন এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি মৌলিক গ্যারান্টি যা ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে চীনের ইতিবাচক মনোভাব এবং মুক্ত মনকে প্রতিফলিত করে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে, চীনের উন্নয়ন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে অবিচ্ছেদ্য এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে আরও উপকৃত করবে। এবারের এপেক শীর্ষ সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট সি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, চীন ব্যাপকভাবে সংস্কারকে আরও গভীর করবে, উচ্চ-মানের উন্নয়নের প্রচার করবে, সবুজ উন্নয়নের পথে অটলভাবে অনুসরণ করবে এবং একটি নতুন উচ্চ-স্তরের উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীন নতুন গতি আনবে।
চানকাই পোর্ট এপেককে আলোকি করে। আশা করা যায় যে এপেক সদস্যরা একটি উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এশিয়া-প্যাসিফিকের সোনালী চিহ্নকে উজ্জ্বল করতে থাকবে, একটি সবুজ ও ডিজিটাল এশিয়া-প্যাসিফিক তৈরি করবে, প্রশান্ত মহাসাগরকে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির মহাসড়কে পরিণত করবে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক উন্নয়নের পরবর্তী ‘সুবর্ণ ত্রিশ বছর’ তৈরি করবে।
(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)