বিজ্ঞানবিশ্ব-৯৬তম পর্ব
2024-11-18 15:57:06

১। মহাকাশ স্টেশনে জেব্রাফিশের পরীক্ষায় রেকর্ড চীনের

২। টমেটো স্বাদ ফেরাতে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার

 

মহাকাশ স্টেশনে জেব্রাফিশের পরীক্ষায় রেকর্ড চীনের

চীনের মহাকাশ স্টেশনে স্থাপিত একটি জলজ ইকোসিস্টেমে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। ওই সিস্টেমে রাখা চারটি জেব্রাফিশ তাদের জীবনের বিকাশ ও প্রজনন পর্যন্ত ৪৩ দিন সম্পন্ন করেছে। এটি মহাকাশে পরিবেশগত পরীক্ষায় একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল দ্য ইনোভেশন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

 

এ গবেষণাকে মাইলফলক বলা হয়েছে ওই নিবন্ধে। আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষাটি কেবল চীনের স্পেস ইকোসিস্টেম প্রযুক্তির অগ্রগতি নয় বরং মহাকাশ মিশনে ক্লোজড-লুপ ইকোসিস্টেমের জন্য মূল্যবান প্রাযুক্তিক তথ্যও দেবে। পৃথিবীর বাইরে বাস্তুতন্ত্রের সূচনা ঘটনা যায় কি না, তা দেখতেই পরীক্ষামূলক ভাবে মাছ চাষ করা হয় মহাকাশে।

গত ২৫ এপ্রিল চারটি জেব্রাফিশ এবং চার গ্রাম জলজ উদ্ভিদসহ শেনচৌ-১৮ এর তিন নভোচারী চীনের মহাকাশ স্টেশন থিয়ানকংয়ে গিয়েছিলেন। ৪ নভেম্বর তারা পৃথিবীতে ফিরে আসেন এবং মহাকাশ বাস্তুতন্ত্র থেকে পানির নমুনাও নিয়ে আসেন।

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস (সিএএস)-এর ইনস্টিটিউট অব হাইড্রোবায়োলজি (আইএইচবি) এবং সিএএসের শাংহাই ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল ফিজিক্সের গবেষকরা যৌথভাবে পরীক্ষাটির নকশা করেন। তারা একটি বদ্ধ জলজ ইকোসিস্টেম তৈরি করেন যেখানে জলজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে মাছের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করে। জেব্রাফিশগুলোর বিষ্ঠা থেকে জলজ উদ্ভিদ পেয়েছে পুষ্টি।

 

আইএইচবি জানিয়েছে, মাছের জন্য দরকারি খাবার একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাকাশে জলজ প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পারে কি না, সেখানকার প্রতিকূল পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে কি না, তা-ই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছিল। এই পরীক্ষার জন্য ভেবেচিন্তেই Zebrafish-কে বেছে নেওয়া হয়। কারণ মানুষের সঙ্গে জিনগত মিল রয়েছে এই মাছের। দ্রুত বেড়ে ওঠে। ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ গবেষণার জন্য এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

জেব্রাফিশগুলোর দৈর্ঘ্য তিন থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। তাদের সঙ্গে মানুষের জিনগত মিল আছে ৭০ শতাংশের বেশি। এতে করে মহাকাশে তাদের নিয়ে গবেষণা মানুষের নানা রোগের প্যাথোজেনেসিস বোঝা এবং নতুন ওষুধ তৈরিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আইএইচবি-এর গবেষক ওয়াং কাওহং।

 

চীনা নভোচারীরা দেখেছেন, মহাকাশ স্টেশনে জেব্রাফিশ অস্বাভাবিক আচরণ দেখিয়েছে—যেমন উল্টোদিকে সাঁতার কাটা, চক্রাকারে ঘোরা এবং মাইক্রোগ্রাভিটি পরিবেশে আরও কিছু অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

 

মহাকাশ স্টেশনে মেরুদণ্ডী প্রাণীর দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার বিষয়টি নিয়ে দরকারি তথ্য চীনের হাতে আছে বলে জানিয়েছেন আইএইচবি-এর গবেষক সুন ইয়ংহুয়া। তিনি বলেন, এই অর্জন মহাকাশে আরও জলজ জীববিজ্ঞান এবং ওষুধ গবেষণা চালানোর শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু মেরুদণ্ডী প্রাণী মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে চীনের।

আপাতত মহাকাশ স্টেশন থিয়ানকং থেকে নিয়ে আসা নমুনাগুলো অতি-নিম্ন তাপমাত্রার স্টোরেজ কেসে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

চীনে জেব্রাফিশ নিয়ে গবেষণা চালাতে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষাগার রয়েছে বলেও জানা গেছে।  বিজ্ঞানীরা আরও জানালেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে, মহাকাশে মাছচাষের এই গবেষণা অত্যন্ত জরুরি ছিল জীববিজ্ঞানকে আরও ভাল ভাবে বোঝার জন্য। মহাকাশের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রাণীর শরীরে কী প্রভাব পড়ে এবং কোন প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে ওঠা যায়, তা বোঝার চেষ্টা চলছে।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার

 

টমেটো স্বাদ ফেরাতে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার

ছোটবেলায় খাওয়া টমেটোর স্বাদ এখন আর মিলছে না। আজকালের টমেটো আগের মতো মিষ্টি ও সুস্বাদু নয়। কেন? কারণ, বেশি ফলন পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা টমেটোর জিনগত বৈশিষ্ট্য বদলে দিয়েছেন। এই পরিবর্তনে টমেটোর স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এক কথায়, বেশি ফলন পাওয়ার লোভে আমরা টমেটোর স্বাদ হারিয়ে ফেলছি।

সম্প্রতি চীনের একদল বিজ্ঞানীএমন এক উপায় বের করেছেন। এর ফলে টমেটোর পুরনো সেই স্বাদ পুনরায় ফিরে পাওয়া যাবে। এই নতুন পদ্ধতির ফলে দোকানে খুব তাড়াতাড়ি মিষ্টি আর রসালো টমেটো পাওয়া যাবে। এই বিজ্ঞানীরা জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে টমেটোতে চিনির উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু ফলনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়নি।

চাইনিজ একাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের গবেষকরা এ গবেষণাটি করেছেন। তারা এ গবেষণায় ১০০-এর অধিক টমেটো জাতের স্বাদ বিশ্লেষণ করেছেন। এছাড়া তারা ৩৩টি ভিন্ন স্বাদ যৌগ চিহ্নিত করেছেন যা টমেটোর সামগ্রিক স্বাদকে প্রভাবিত করে এবং ভোক্তার পছন্দকে নির্ধারণ করে। এই আবিষ্কার টমেটো চাষ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে।

পরবর্তীতে চীনা এই গবেষকরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা ৪০০-এরও বেশি টমেটোর স্বাদ যৌগের পরিমাণ এবং জিনগত গঠন বিশ্লেষণ করে। এই গবেষণায় তারা ৪৯টি জিন খুঁজে পেয়েছে যা টমেটোর স্বাদকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে দুটি জিন সরাসরি টমেটোতে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

তারা বলছেন এই দুটি জিনকে পরিবর্তন করে টমেটোর মধ্যে মিষ্টির পরিমাণ ৩০% বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই আবিষ্কারের ফলে আমরা খুব শীঘ্রই আরও মিষ্টি টমেটোর দেখা পাবো। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে, ফলে মিষ্টির পরিমাণ বাড়াতে হলে ফলের ওজন বা আকার বড় করতে হবে। কিন্তু এই নতুন আবিষ্কার দেখিয়েছে যে এটা সম্ভব নয়। এবার ফলের আকার ছোট হলেও মিষ্টি হবে।

ফরাসি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের ফল বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফ রোথানের মতে, বন্য ফলের বিচিত্র জিনগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা আধুনিক ফলের জাতগুলোকে আরও উন্নত করতে পারব। বন্য ফলে এমন অনেক গুণ আছে যেগুলো সাধারণ ফলে হারিয়ে গেছে। ফল কীভাবে চিনি তৈরি হয় এবং সঞ্চয় হয় তা বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী