মানুষ ও প্রকৃতি ২৩
2024-11-16 16:09:52

 

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. পরিযায়ী পাখির জন্য চীনে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার

২. মিলু হরিণের শাবক

 

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা  এমনভাবেই  দেখতে চাই  ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা, মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠানে থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।

 

পরিযায়ী পাখির জন্য স্যাটেলাইট ট্র্যাকার চীনে

চীন মানেই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের এক অপার ভুবন। আর দেশটির হাজার হাজার মাইল জুড়ে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি। দিন দিন চীনের পরিবেশ ও প্রকৃতি যতই নির্মল হচ্ছে, ততই বাড়ছে এসব পাখির আনাগোনা। আর এসব যাযাবর পাখির চালচলন বোঝার জন্য চীনে গড়ে উঠেছে কিছু স্মার্ট প্রযুক্তির পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। বিস্তরিত জানাচ্ছেন ফয়সল আবদুল্লাহ

পরিযায়ী পাখিদের গতিপথ ও চালচলন পরীক্ষা করতে এবার অভিনব প্রযুক্তি বেছে নিয়েছেন চীনা গবেষকরা। কিছু পাখির মধ্যে তারা জুড়ে দিয়েছেন ছোট আকারের ক্যামেরা ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকার। অতিথি পাখিরা কোথায় পাড়ি জমাচ্ছে, কোথায় বিরতি নিচ্ছে—সমস্ত তথ্যই পাচ্ছেন গবেষকরা। অন্যদিকে, হবেই প্রদেশের ছাংচৌয়ের নানতাকাং জলাভূমিতে পাখিদের শব্দ, হাঁটাচলার সময়সীমা ও নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সেন্সরের সাহায্যে।

২০২২ সালে উত্তর চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুমুজি নেচার রিজার্ভ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল একটি ধূসর সারস। পাখিটিকে সুস্থ করে তোলার পর ওটার শরীরে অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকার জুড়ে দেন গবেষকরা। পাখির ওপর নজর রাখতে শুরু করে চীনের শক্তিশালী বেইতৌ স্যাটেলাইট সিস্টেম।

তথ্য ও ভিডিও দেখে জানা গেল সারসটি গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াংয়ের ছিছিহারের কাছে অবস্থান করছিল এবং ওই সময় পাখিটি দক্ষিণে যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এ প্রযুক্তিতে হুনান প্রদেশের তংথিং হ্রদে পাখির অভিবাসন প্রক্রিয়াও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তংথিং হ্রদটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং সুরক্ষিত এলাকা। শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আবাসস্থলও এটি।

হুনান গ্লোবাল মেসেঞ্জার টেকনোলজি কোং লিমিটেডের টেক ডিরেক্টর ছেন চেনরং জানালেন, ‘পাখির পুরো মাইগ্রেশনটি একবারে সম্পন্ন হয়েছিল। সময় লেগেছিল ছয় দিন। এর মধ্যে দুটি ছোট বিরতি ছিল। পুরো উত্তর-দক্ষিণের যাত্রাপথ ছিল ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি। পাখিটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার উড়েছিল। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৯ কিলোমিটার।’

স্যাটেলাইট ট্র্যাকার থেকে পাখির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। যেমন, চীনা গবেষকরা জানতে পারেন, সেই সারসটি গতবছরের ২৩ নভেম্বর দুপুর একটায় ২৩ কিলোমিটার গতিতে ৬৬০ মিটার উঁচুতে উড়েছিল।

বেইতৌ স্যাটেলাইট ডেটায় জানা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা কোথায় কতদিন উড়েছে, কোথায় কতক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এসবের বিস্তারিত।

অন্যদিকে হ্যবেই প্রদেশের ছাংচৌয়ের বিস্তৃর্ণ নানতাকাং জলাভূমিতেও চলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাখির চলাফেরা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের কাজ।

সেই সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে রেকর্ড করা হচ্ছে জলচর পাখির ডাক। প্রযুক্তির মাধ্যমে সে ডাক শুনেই চেনা যাচ্ছে পাখির প্রজাতি।

নানতাকাং ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড বার্ড নেচার রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অফিসের কর্মী চাং চিনসিং জানালেন, ‘পাখির ডাক সংগ্রহ করা হয় দুটি নৌকার মতো দেখতে ভয়েসপ্রিন্ট সংগ্রাহক যন্ত্র এবং একটি খুঁটির মতো ডিভাইসের মাধ্যমে। রেকর্ড করা ডাকগুলো আমাদের এআই ডাটাবেসে সংরক্ষিত এক হাজার ৫৬৯টি প্রজাতির পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। এতে প্রজাতিটা শনাক্ত করতে পারি। আমরা ১ লাখ ৯০ হাজার পাখির শব্দের নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং এর মাধ্যমে ১৯৭টি প্রজাতি চিহ্নিত করেছি।’

জলচর প্রাণীর এ অভয়ারণ্যে রয়েছে ১১টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভিডিও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। পাখি শনাক্ত করার পাশাপাশি সংখ্যাও গুনতে পারে এটি।

চাং চিনসিং আরও জানালেন, ‘এই ফুটেজে দেখা যাবে পাখিগুলো ফ্রেমবন্দি হচ্ছে, তাদের প্রজাতি এবং সংখ্যা উপরে দেখা যাচ্ছে। আমাদের এআই ডাটাবেসে পাখির ছবি পাঠানোর পর পাখিদের শনাক্ত করা হয়। এটি একটি বিশাল ডাটাবেস। এটি আমাদের মনিটরিং সিস্টেমের আওতা বাড়িয়ে দেয় এবং ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণের ত্রুটি কমাতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে, আমরা পাখিদের বিরক্ত না করেই পর্যবেক্ষণ করতে পারি।’

এদিকে শরৎ ও শীতের শুকনো মৌসুমে পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের পোয়াং হ্রদে বিস্তীর্ণ জলাভূমি তৈরি হয়। তখন এখানে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি।

এ জলাভূমিতে পাখি পর্যবেক্ষণে আছে একটি বুদ্ধিমান ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম।

সিস্টেমটি প্রাথমিকভাবে পোয়াং হ্রদে ৭০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করে এবং পাখির সংখ্যা গোনে। এমনকি এখানকার জলাভূমির গভীরে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্মার্ট ড্রোন।

ড্রোনগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা তাৎক্ষণিকভাবে পাখি শনাক্তকরণ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিযায়ী পাখির যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।

প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

প্রকৃতি সংবাদ

মিলু হরিণের শাবক

চীনের দেশীয় প্রজাতির হরিণ মিলু। এর আরেক নাম পিয়েরে ডেভিডস ডিয়ার। চলতি বছর চিয়াংসু প্রদেশে এই হরিণের নবজাতকের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানিয়েছে তাফেং মিলু ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ। বিস্তারিত শুনবেন প্রকৃতি সংবাদে।

চীনের মিলু হরিণ। একে পিয়েরে ডেভিডস ডিয়ার নামেও ডাকা হয়। বিশাল আকৃতির এই হরিণ এক সময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। চীন থেকে ইউরোপে এই প্রজাতির হরিণ নিয়ে গিয়েছিলেন পিয়েরে ডেভিড নামের একজন ফরাসি প্রকৃতি বিজ্ঞানী।হারব্রান্ড রাসেল নামে একজন ব্রিটিশ অভিজাত ব্যক্তি এই হরিণ তার খামারে পালন করেছিলেন। ১৯৮০ এর দশকে এই অভিজাত ডিউকের বংশধর চীনকে কয়েকজোড়া হরিণ উপহার দেন। সেই হরিণগুলো থেকে প্রজনেনর মাধ্যমে চীনের প্রকৃতিতে মিলু হরিণকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চীনের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে এখন চীনে ৮হাজার ২০০টির বেশি মিল হরিণ রয়েছে। এদের মধ্যে বন্য অবস্থায় আছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। সম্প্রতি চিয়াংসু প্রদেশের তাফ্যং মিলু ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে চলতি বছর এই সংরক্ষিত পার্কে ৮২৫টি মিলু শাবকের জন্ম হয়েছে।

পরিবেশকর্মী ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত চেষ্টায় চীনের প্রকৃতিতে এখন রয়েছে মিলু হরিণের মতো এক সুন্দর প্রাণী।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। একটু উষ্ণতার খোঁজে শীতল ভূমি থেকে দক্ষিণে  উড়ে আসা পারিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ