নভেম্বর ১৪: “এটি ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রতীক”; “এটি ল্যাটিন আমেরিকার ‘সিঙ্গাপুর বন্দর’ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে”। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পেরুর Chancay বন্দরকে এভাবেই বর্ণনা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে নির্মিত এই বন্দরটি শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। তখন, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এশিয়ায় রপ্তানিকৃত পণ্যের পরিবহন সময় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দুই তীরের আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়নে নতুন চালিকাশক্তি যুক্ত হবে।
এ ছাড়া, পেরুতে চলতি সপ্তাহে এপেকের ৩১তম শীর্ষনেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে অংশ নিতে গেছেন। ‘ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তি, প্রবৃদ্ধি’—এই মূল প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক মহলের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকছে: উন্মুক্ত, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাণিজ্য জোরদার করা; টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া; এবং বৈশ্বিক শক্তি রূপান্তরকাজ ত্বরান্বিত করা। এবারের শীর্ষনেতৃবৃন্দের বৈঠক থেকে উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতার আস্থা জোরদার এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা বৃদ্ধির সুখবরের অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন পক্ষ। পেরুর একজন পণ্ডিত বলেন, সংরক্ষণবাদ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, বাণিজ্যিক উন্মুক্ততার মূল্য অন্বেষণ এবং সদস্যদেশগুলোর মধ্যে সংলাপের প্লাটফর্ম দিয়েছে এপেক।
দীর্ঘকাল ধরে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বৈশ্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার নোঙর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের লোকসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এ অঞ্চলের অর্থনীতি বিশ্বের মোট অর্থনীতির ৬০ শতাংশেরও বেশি। বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকটা হয় এতদঞ্চলে। এ অঞ্চল বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুমান অনুসারে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৪.২ শতাংশে পৌঁছাবে, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে ২.৯ শতাংশ।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন কেন বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা যেমন এর একটি কারণ, তেমনি এপেক নিজেও একটি কারণ। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৩৫ বছরে এপেক সবসময় উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অভিন্ন উন্নয়নের মূল চেতনা অনুসরণ করেছে; মতভেদ সংরক্ষণের সময় অভিন্ন ভিত্তি খুঁজেছে; বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণ ও সহজীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাকে উন্নত করেছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, এপেক প্রতিষ্ঠার প্রথম বিগত ৩০ বছরে এই অঞ্চলে গড় শুল্ক স্তর ১৭ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে; মাথাপিছু আয় চারগুণেরও বেশি হয়েছে; বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিও এই উন্মুক্ত সহযোগিতামূলক পরিবেশ থেকে উপকৃত হয়েছে। এই কারণেই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কিছু দেশ উস্কানি দিচ্ছে, যার সঙ্গে খুব কম লোকই একমত।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হিসাবে, চীন সক্রিয়ভাবে এপেক সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে ও করছে এবং এই অঞ্চলে শক্তির উত্স ও সহযোগিতার চালক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে, চীন এপেকের ১৩টি দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার; এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৬৪.২ শতাংশ। সেই সঙ্গে, চীনের সাহায্যে এই অঞ্চলের ৩৭.৬ শতাংশ পণ্যবাণিজ্য ও ৪৪.৬ শতাংশ পরিষেবা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। এপেক শীর্ষনেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে চীনের ধারাবাহিক প্রস্তাব ও বহুপক্ষবাদ এতদঞ্চলের উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যা ব্যাপক স্বীকৃতি ও সমর্থন পেয়েছে ও পাবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)