সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সি আশা প্রকাশ করেছেন যে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতার নীতিতে সংলাপ ও যোগাযোগ জোরদার করবে, সঠিকভাবে মতপার্থক্য পরিচালনা করবে, পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা প্রসারিত করবে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক সহাবস্থানের পথ খুঁজে বের করবে। যা উভয় দেশ এবং বিশ্বকে উপকৃত করবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও সি চিন পিং-এর এসব কথার খবর প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হবে কি না, সেদিকেই নজর দিয়েছে। এই উদ্বেগের পিছনে, বাংলাদেশের মিডিয়া চীন-মার্কিন সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং জয়-জয় সহযোগিতার জন্য তাদের অভিন্ন আশা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের আচরণ অব্যাহত রাখলে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য-যুদ্ধ সব দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এশিয়ার দেশগুলোতে বিরাট অস্থিরতা দেখা যাবে।
প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বে সব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট অর্থনীতির পরিমাণ বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশের বেশি, মোট জনসংখ্যা বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পর্ক ভালভাবে পরিচালনা করতে পারে কিনা তা মানবজাতির ভবিষ্যত এবং পৃথিবীর ভবিষ্যতের সাথে জড়িত। উভয় পক্ষের উচিত ইতিহাস, জনগণ এবং বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন পরিচালনা করা।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক নীতি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি প্রধান দেশ- যার ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথে অতীতে ও বর্তমানে পার্থক্য রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পার্থক্য থাকবে। উভয় পক্ষের একে অপরের সামাজিক ব্যবস্থা এবং একে অপরের নির্বাচিত উন্নয়নের পথকে সম্মান করা উচিত। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে, চীনা জনগণ ব্যাপকভাবে চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকীকরণের অগ্রগতি এবং মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলছে। ১৪০ কোটি মানুষের পছন্দ এবং প্রচেষ্টাকে সম্মান করা উচিত। সান ফ্রান্সিসকোতে যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা মিলিত হন, তখন যুক্তরাষ্ট্র চীন-মার্কিন সম্পর্কের দিকনির্দেশনামূলক নীতির মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের বিষয়ে সম্মত হন।
দুই দেশকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি মেনে চলতে হবে। আন্তর্জাতিক সমাজ আশা করে যে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ প্রত্যাশিত না। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, দুটি প্রধান দেশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতের পরিণতি বিশ্ব সহ্য করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রও বারবার বলেছে যে, চীনের সঙ্গে তার কোনো সংঘাতের ইচ্ছা নেই। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই একটি সঠিক বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে এবং একে অপরকে প্রতিপক্ষ বা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
জয়-জয় সহযোগিতা চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভিত্তি। বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং বৃহত্তম উন্নত দেশ হিসেবে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত পরিপূরক এবং সহযোগিতার জন্য বিস্তৃত স্থান রয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, আর্থিক সঙ্কটে সাড়া দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি অর্জনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উভয় পক্ষ সুষ্ঠুভাবে একসঙ্গে কাজ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ কমেনি বরং বেড়েছে। অর্থনীতি ও বাণিজ্য, জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং মানবিকতার মতো অনেক খাতে সহযোগিতার জন্য উভয় পক্ষের বিস্তৃত জায়গা রয়েছে এবং অভিন্ন দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ট্রাম্পকে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার অভিনন্দনবার্তায় উল্লেখ করেছিলেন যে, ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই সহযোগিতা থেকে উপকৃত হবে এবং সংঘর্ষ হলে হেরে যাবে। সহযোগিতা উভয় পক্ষের একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব উন্নয়ন এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য বিশ্ব যথেষ্ট বড়।
পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, এবং জয়-জয় সহযোগিতা হল সঠিক দিকনির্দেশনা চীন তার নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে কে ক্ষমতায় রয়েছে- তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়নি এবং হবে না। আশা করা যায় যে, নতুন মার্কিন সরকার চীনের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে এবং দুই দেশের জনগণ এবং বিশ্বের জনগণের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যত গঠন করার চেষ্টা করবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)