জনগণের উপকার করার প্রাচীন চীনের ধারণাটি ‘যা জনগণের কাছ থেকে নেওয়া হয়, তা জনগণের জন্য ব্যবহার করা উচিত’ এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের প্রাচীনতম খালসহ প্রাচীন চীনের তিনটি বিখ্যাত জল সংরক্ষণ প্রকল্পের কথা ধরা যাক। কুয়াংসি অঞ্চলের লিং ছুই খাল ২১৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়। তা শিয়াংসুই নদী এবং লিসুই নদী সংযুক্ত করে এবং ইয়াংজি নদী অববাহিকা ও পার্ল নদী অববাহিকার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জল পরিবহন চ্যানেল। এ ছাড়াও তিচিয়াংইয়ান-এর কথা বলা যেতে পারে। যা ২৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয় এবং চেংদু সমভূমিতে সেচ দিয়ে এটিকে ‘স্বর্গের ভূমি’ করে তোলে। এটি ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্যা মোচন, দুর্যোগ হ্রাস এবং পানীয় জলের সেচের ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো জল সংরক্ষণ প্রকল্প যা এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি বাঁধহীন বড় আকারের একটি জলসেচ প্রকল্প। এ ছাড়াও রয়েছে বেইজিং-হ্যাংচৌ গ্র্যান্ড ক্যানেল, যার ২৫০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে এবং এটি চীনের উত্তর ও দক্ষিণকে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম এবং অতুলনীয় মহান প্রকল্প। এটি ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্প্রসারণ ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং এটি এখনও সেচ, জল পরিবহন এবং বন্যা মোচনের ভূমিকা পালন করে। এটি উপকূলবর্তী কয়েক মিলিয়ন মানুষকে উপকৃত করেছে এবং সর্বদা দেশে-বিদেশে জল সংরক্ষণের ইতিহাসে একটি অলৌকিক ঘটনা বলা যেতে পারে।
যদিও প্রাচীন চীনারা জোর দিয়েছিল যে রাজনীতিবিদদের ‘জনগণকে সমৃদ্ধ করার’ জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবে তারা এও পরামর্শ দিয়েছিল যে, জনগণকে সমৃদ্ধ করতে, তাদের অবশ্যই অপচয়ের অবসান ঘটাতে হবে এবং জনগণকে অহংকারী এবং অযৌক্তিক হতে দেবে না। অতএব, সহকর্মীরা যারা "মানুষকে সমৃদ্ধ" করে তাদের অবশ্যই সমাজের টেকসই উন্নয়নের জন্য সমগ্র সমাজে পরিহার, পরিশ্রম এবং মিতব্যয়িতাকে প্রচার করতে হবে। বর্জনের উপর এত জোর কেন? ‘ছুনশু জিয়াও’ বইয়ে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকেরই প্রবল আকঙ্ক্ষা আছে এবং সকলেই খ্যাতি, ভাগ্য, শক্তি, গয়না এবং সুস্বাদু খাবার পছন্দ করে। কিন্তু যদি একজন ব্যক্তি তার তীব্র আকঙ্খাকে সংযত না করে নেশাগ্রস্তের মতো অনুসরণ করে, তবে সে তার নেশার দাস হয়ে যাবে এবং এমনকি তার স্বার্থপরতা চরিতার্থ করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে। যদি এটি এমন একটি সমাজ হয়য় যেখানে প্রত্যেকে তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে প্রশ্রয় দেয়, সীমিত সম্পদের সম্মুখীন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ দখল করার জন্য প্রত্যেকে যা যা লাগে তাই করবে। তাই, প্রাচীনরা বিশেষভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আকাঙ্ক্ষাগুলোকে যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ধনী হওয়া উচিত কিন্তু অযথা নয়, এবং পুণ্যের পথে চলে মানুষকে মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, সেই সময়ে ‘মাছ ধরার জন্য হ্রদটি নিঃশেষিত করার’ সম্পদ আহরণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য, কুয়ানজং শর্ত দিয়েছিলেন যে, কাঠ কাটা, মাছ ধরা এবং শিকার করা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে করা উচিত, এবং লোকেদের অনিয়ন্ত্রিত এবং নির্বিচারে কাঠ কাটা ও শিকার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এইভাবে ব্যাপকভাবে ছি রাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা হয়।
মিত্যব্যয়িতা প্রচার করতে হলে নেতাদের থেকেই শুরু করতে হবে। ‘জেং ইয়াও লুন’ (রাজনৈতিক তত্ত্ব) বইয়ে এমন কথা আছে: পরিবার এবং দেশগুলোর সাথে মানুষের সমৃদ্ধি অর্জনের কারণ হল মিতব্যয়িতা। মহান সম্রাট ইয়াও এবং শুন যেখানে থাকতেন সেখানে শুধুমাত্র তৃতীয় শ্রেণীর মাটির ধাপ ছিল এবং তাদের পোশাক ছিল খুবই সাধারণ। মহান সম্রাট ইয়ু-এর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তার বাসা খুব সাধারণ এবং খাবার-দাবারও খুব সামান্য। এমন নয় যে এই সম্রাটরা ভাল খেতে, ভাল থাকতে এবং ভাল পোশাক পরতে চান না। বরং তারা বাড়াবাড়ি পরিহার করেন এবং মিতব্যয়িতার চর্চা করেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন থাং রাজবংশের সম্রাট থাইজং লি শিমিন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দেশটি খুব সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী ছিল। অনেক দেশকে শ্রদ্ধা জানাতে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু থাং থাইজং তার স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্রয় দেননি, বরং অধ্যবসায় ও সার্থকতা ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, যারা ক্ষমতায় থেকেও নিজ আকাঙ্ক্ষাকে ছেটে দেয় তারাই সত্যিকার অর্থে মানুষকে ভালোবাসতে এবং উপকার করতে পারে। কেন? কারণ নেতা যদি লোভী ও লম্পট হয় তবে সে জনগণকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শোষণ করবে এবং মুনাফার জন্য জনগণের সাথে প্রতিযোগিতা করবে। নেশা প্রসারিত হতে থাকে, এবং তারা এমনকি শোষণ, আগ্রাসন এবং অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে অন্য দেশের ভূখণ্ড দখল করতে এবং তাদের জনগণকে দাসত্বে নিয়োজিত করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত জীবনকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে।
(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)