অঞ্চলভিত্তিক খাদ্যতালিকা নিয়ে নেচার ফুডে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রকাশ
2024-11-10 16:58:46

নভেম্বর ১০, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: প্রথমবারের মতো চীনা বিজ্ঞানীরা একটি অঞ্চলভিত্তিক টেকসই, স্বাস্থ্যকর ডায়েটারি মডেল তৈরির প্রস্তাব করেছেন। প্রতিটি অঞ্চলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য বিবেচনা করে পৃথক ডায়েটারি পরিকল্পনা তৈরি করাই তাদের এ গবেষণার লক্ষ্য। চীনাদের খাদ্যাভ্যাসের উন্নতি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের প্রসারে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌতে সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে লিউ ইয়ান এবং চিয়া মিনের নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল সম্প্রতি নেচার ফুড জার্নালে ‘অ্যাডপশন অব রিজিয়ন স্পেসিফিক ডায়েটস ইন চায়না ক্যান হেল্প অ্যাচিভ গেইনস ইন হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।

এ গবেষণায় খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য এবং চীনের অঞ্চলগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্তরের ওপর ভিত্তি করে, অঞ্চলভিত্তিক রেফারেন্স ডায়েট নামের একটি টেকসই ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।

স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক লিউ বলেন, এটি বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের টেকসই খাদ্যের জন্য নির্দেশনা দেবে এবং 'স্বাস্থ্যকর চীন' এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের সমাধানও দেবে।

গবেষণাটির ব্যাপক প্রশংসা করে বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের গ্লোবাল ফুড-এর প্রধান বিজ্ঞানী ব্রেন্ট লোকেন ওই জার্নালের একই সংখ্যায় ‘স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই খাদ্য অবশ্যই সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে’ শিরোনামে একটি বিশেষ পর্যালোচনাও প্রকাশ করেছেন।

লোকেন বিশ্বাস করেন, গবেষণাটি শুধু চীনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই খাদ্যতালিকা তৈরিতে ব্যবহারিক ও সম্ভাব্য উপায় দেবে না, বরং ভারত ও কেনিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্সও দেবে। আবার ওই দেশগুলোও এ গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তাদের অঞ্চলভিত্তিক টেকসই খাদ্যতালিকা তৈরি করতে পারবে বলে জানান লিউ।

গবেষণায় বলা হয়, অযৌক্তিক খাদ্যাভ্যাস বিশ্বব্যাপী রোগের অন্যতম কারণ, যার ফলে বছরে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু হয়, যা বিশ্বের সমস্ত মৃত্যুর প্রায় এক-পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী।

এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস পৃথিবীর সম্পদ ও পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি করছে। কেননা, খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত কাজে বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ১৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।

সাম্প্রতিক গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ ডাটাবেস অনুসারে, চীনে প্রতি বছর ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ অনুপযুক্ত ডায়েটের কারণে মারা যায়, যা দেশের বাৎসরিক মৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশের জন্য দায়ী।

চীনে, অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের কারণে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার প্রায় ৫৮ শতাংশ, যেখানে একই কারণে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

লিউ বলেন, সেদ্ধ মাংসের স্যুপ এবং কিউরড মাংস কুয়াংতোংয়ে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিও তৈরি করে। স্যুপ ক্যান্টোনিজ খাবারের একটি অপরিহার্য অংশ হলেও এতে প্রায়শই স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু প্রক্রিয়াজাত মাংসে উচ্চ মাত্রার লবণ থাকে বলে দীর্ঘমেয়াদি গ্রহণে শরীরে উচ্চমাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড জমা হওয়া এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ দেখা দিতে পারে।

লিউ উল্লেখ করেন, কুয়াংতোংয়ের খাদ্য সংস্কৃতিতে প্রচুর শাকসবজি এবং জলজ পণ্য, যেমন তাজা মাছ এবং তোফু রয়েছে। এগুলো বেশ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ।

এ গবেষক বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য ব্যাপকভাবে পশ্চিমে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্যাটার্ন হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে প্রচুর ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, মাছ ও জলপাই তেল খাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়, যেগুলো সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে সামগ্রিক স্বাস্থ্যে অবদান রাখে বলে জানান তিনি।

লিউ যোগ করেন, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং পিৎজা সহ পশ্চিমা ফাস্ট ফুডগুলোয় অত্যাধিক চিনি, লবণ এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা স্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফয়সল/শুভ

তথ্য: চায়না ডেইলি, ছবি: সিজিটিএন