এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা-এপেকের অর্থনৈতিক নেতাদের ৩১ম সম্মেলন ৯ থেকে ১৬ নভেম্বর পেরুর রাজধানী লিমায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার এপেক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। বিগত ৩৫ বছরে, এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে।
উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাকে সমর্থন করে, এপেক সহযোগিতা আঞ্চলিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে, এই অঞ্চলটিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র, একটি স্থিতিশীল শক্তি এবং সহযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। এবারের সম্মেলন থেকে এপেক সহযোগিতাকে আরো জোরদার করার পথ খুঁজবেন চীনসহ এর সদস্যদেশগুলোর নেতারা।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পেরু প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট দিনা এরসিলিয়ার আমন্ত্রণে ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর পেরুতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। তিনি এপেক অর্থনৈতিক নেতাদের সভায় যোগ দেবেন এবং দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন।
বেইজিংয়ে শুক্রবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, এ বছরের এপেক অর্থনৈতিক নেতাদের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি’র উপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে, চীন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে কতটা গুরুত্ব দেয়।
সি’র আসন্ন পেরু সফর প্রসঙ্গে মাও বলেন, ৫৩ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন ও পেরু রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছে।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রেসিডেন্ট সি’র সফর চীন ও পেরুর মধ্যে রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও সুসংহত করবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করবে এবং দ্বিপাক্ষিক ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে আরও ইতিবাচক ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে।
এপেক সম্মেলন প্রসঙ্গে মাও বলেন, “বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি নেই, এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এ সত্ত্বেও আশা করা যায় এই অঞ্চলটি বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকবে।”
প্রেসিডেন্ট সি সম্মেলনে তাঁর বক্তৃতায় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণকে গভীর করার জন্য চীনের পদক্ষেপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতার অগ্রগতির বিষয়ে তার নীতি ও প্রস্তাবনাগুলো ব্যাখ্যা করবেন বলে জানান মাও।
শুক্রবার, সিনহুয়ার উচ্চ-পর্যায়ের থিঙ্ক ট্যাংক, সিনহুয়া ইনস্টিটিউট লিমায় ‘যৌথভাবে উচ্চমানের উন্নয়নের প্রচার এবং অভিন্ন ভবিষ্যতের একটি এশিয়া-প্যাসিফিক সম্প্রদায় গড়ে তোলা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ এবং বাণিজ্য উদারীকরণের প্রচারে এপেকের অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রচারে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করার জন্য চীনের পদক্ষেপ, ধারণা এবং সমাধানগুলো তুলে ধরে।
বিশ্ব আজ, অভূতপূর্ব ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যা একা কোনো দেশ বা একক কোনো অর্থনীতির দ্বারা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনীতির উচিত একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক সম্প্রদায় গড়ে তুলতে, যৌথভাবে বাধা অতিক্রম করতে এবং এই অঞ্চলে অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা পরিচালনা করা। উন্নয়নের মূল চালক হিসাবে উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া, টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব অগ্রগতি প্রচার করা এবং উন্নয়নের ফাঁকগুলো পূরণ করা, যাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্ত মানুষ প্রবৃদ্ধির সুবিধাগুলো ভাগ করে নিতে পারে।
মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তুলতে বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ, বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ ও বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগের পাশাপাশি চীন সক্রিয়ভাবে এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার প্রচার করেছে, এশিয়া-প্যাসিফিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট সুযোগ এবং গতি প্রদান করেছে।
বর্তমানে, চীন উচ্চমানের উন্নয়নের মাধ্যমে চীনা আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, উদ্ভাবন এবং সবুজ উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে এশিয়া-প্যাসিফিকের বৃদ্ধিকে সমর্থন করছে এবং ব্যাপকভিত্তিক উচ্চমানের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক অংশীদারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, চীন অভিন্ন ভবিষ্যতের একটি এশিয়া-প্যাসিফিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য আরও বেশি অবদান রাখতে প্রস্তুত রয়েছে।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।