চীনের শাংহাইতে মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭ম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা (সিআইআইই)। এটি শুধু আগের ছয়টি মেলার ধারাবাহিকতাই নয়, বরং বিশ্বে চীনের দৃঢ়ভাবে উন্মুক্ত হওয়ার একটি নতুন পদক্ষেপ। যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং গত মঙ্গলবার সিআইআইই এবং হংছিয়াও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন। তিনি বলেছেন, চীন উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে এবং চীন সুস্থ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রচারের সক্ষমতা রাখে।
এ বছরের সিআইআইই-তে ১৫২টি দেশ, অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নিচ্ছে, যা পাঁচটি মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশকেই অন্তর্ভুক্ত করছে। এটি বিশ্বজুড়ে পণ্য ও সেবা সরবরাহকারীদের একটি মিলনমেলা ও বৃহত্তম বাজারের সংযোগকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সিআইআইই-তে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী এলাকার আয়তন ৩৬০,০০০ বর্গমিটারের বেশি। এতে ১২৯টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ৩,৪৯৬জন প্রদর্শক অংশগ্রহণ করছে। রেকর্ডসংখ্যক- ২৯৭টি ‘ফরচুন গ্লোবাল ৫০০’ প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পের শীর্ষস্থানীয়রা এতে জড়ো হয়েছেন। ৭ম সিআইআইই গ্লোবাল সাউথ সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম। চীন ৩৭টি স্বল্প আয়ের দেশের জন্য ১২০টি বিনামূল্যে স্টল অফার করছে। জাম্বিয়া থেকে মধু, ইথিওপিয়া থেকে কফি এবং তানজানিয়া থেকে কাজু বাদামের মতো স্থানীয় পণ্যগুলি বিশাল চীনা বাজারে সরবরাহ করা হয় এবং তাদের দেশে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এটি চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম এবং জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের একটি বাস্তব পদক্ষেপ। সিআইআইই গ্লোবাল নর্থ বা উন্নত দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম। আমেরিকান ব্যবসায়িক প্যাভিলিয়ন আবারও সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়, যেমনটি গত ছয়টি মেলাতে ছিল। নেতৃস্থানীয় আমেরিকান বহুজাতিকরা, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা সত্ত্বেও, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে পেতে উদগ্রীব।
মেলায় চীনের সর্বশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে ছাংএ্য-৬ চন্দ্র প্রোব, গভীর সমুদ্রের মানুষ বহনকারী সাবমারসিবল যান, হিউম্যানয়েড রোবট, এবং বিশেষ স্মার্টফোন। মেলায় ১২৯টি দেশের ৪০০টিরও বেশি নতুন পণ্য, প্রযুক্তি ও পরিষেবা প্রদর্শিত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলো ভুচেভিকের মতো বিভিন্ন নেতা অংশ নেন। ২৯৭টি ‘ফরচুন গ্লোবাল ৫০০’ কোম্পানির অংশগ্রহণ একটি রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রদর্শনীতে ভবিষ্যতের নেটওয়ার্ক, গভীর সমুদ্র ও মহাকাশ উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন শক্তির মতো ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রদর্শিত হয়।
হংছিয়াও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের অধীনে সাব-ফোরামগুলিতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং গ্রাহক উদ্দীপনা নিয়ে আলোচনা হয় এবং ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ওপেননেস রিপোর্ট এবং সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ওপেননেস ইনডেক্স প্রকাশিত হয়। ৭ম সিআইআইই চীনের উচ্চ-স্তরের উন্মুক্ততার প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বের সাথে নতুন উন্নয়নের সুযোগগুলি ভাগ করার প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করেছে। গত ৬টি চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা বিশ্বজুড়ে ২,৫০০টিরও বেশি আধুনিক পণ্য এবং প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে। আমদানি ও বিনিয়োগ চুক্তির প্রস্তাবিত চিঠির মোট পরিমাণ ৪২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা চীনের নতুন মানের উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছে এবং বিশ্বের জন্য বিশাল বাজার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনকে উচ্চ প্রযুক্তির দিকে তার আমদানি কাঠামো পরিবর্তন করার জন্য সিআইআইই-এর গুরুত্ব অনেক। মোট আমদানিতে উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা চীনের আধুনিকায়নের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ২০তম সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সামগ্রিক গভীরতর সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণের মৌলিক নীতিগত দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা দিয়েছে।
মূলত, সিআইআইই চীনের একক প্রদর্শনী নয়, বরং এটি গোটা বিশ্বের সম্মিলিত মেলা। একটি শীর্ষস্থানীয় বাজার এবং চীনের উন্মুক্তকরণের প্রদর্শনী হিসাবে সিআইআইই ভূমিকা রাখছে।
গ্লোবাল টাইমস অবলম্বনে-
মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।