নভেম্বর ৮: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে গণ-মহাভবন সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সাক্ষাত্ করেছেন। সাক্ষাত্কালে জনাব সি বলেছেন, চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী, অর্থাত্ চীন-মালয়েশিয়া মৈত্রী বর্ষ উদযাপনের সুযোগ উভয় পক্ষেরই গ্রহণ করা উচিত। যাতে চীন-মালয়েশিয়া অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গঠনে হাত মেলানো যায়। বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
সাক্ষাত্কালে প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন, “চীন ও মালয়েশিয়া শুধু সমুদ্র জুড়ে ভালো প্রতিবেশীই নয়, একই সাথে ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। গত বছরের মার্চে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার প্রথম চীন সফরের সময় আমরা চীন-মালয়েশিয়া অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, উভয় পক্ষ সব স্তরে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান এবং মিথস্ক্রিয়া বজায় রেখেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ-মানের পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার প্রচার করেছে এবং দুই দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা এনেছে।”
সি বলেন, চীন ও মালয়েশিয়া উভয়ই নিজের দেশের উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আছে, দু’দেশের উচিত চীন-মালয়েশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী অর্থাত্ চীন-মালয়েশিয়া বন্ধুত্বপূর্ণ বছরের’ সুযোগে নিজ দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
তিনি বলেন, “বর্তমানে, চীন-মালয়েশিয়া সম্পর্ক একটি নতুন ঐতিহাসিক শুরুতে পৌঁছেছে। চীন-মালয়েশিয়া অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার জন্য, দুই দেশ ও অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় নতুন এবং বৃহত্তর অবদান রাখতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক চীন। যৌথভাবে দু’দেশের সম্পর্কের আরও গৌরবময় আগামী ৫০ বছর তৈরি করা হবে।”
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, উভয় পক্ষের উচিত একটি উচ্চ-স্তরের কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক গড়ে তোলা, উচ্চ-স্তরের ঘনিষ্ঠ বিনিময় বজায় রাখা, রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা বিনিময় জোরদার করা, পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাস বৃদ্ধি করা এবং একে-অপরের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা। উভয় পক্ষের উচিত উন্নয়ন কৌশল জোরদার করা এবং সার্বিক পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা আরও গভীর করা। মালয়েশিয়াকে চীনে আরও উচ্চ-মানের মালয়েশিয়ান বিশেষ পণ্য প্রচার করতে চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার প্ল্যাটফর্ম ভালোভাবে ব্যবহারে স্বাগত জানায়।
জনাব সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, বিশ্ব আজ অশান্তি ও পরিবর্তনের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি হিসেবে চীন ও মালয়েশিয়ার উচিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা, একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা, যৌথভাবে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করা, আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করা। চীন আগামী বছর আসিয়ানের পালাক্রমিক সভাপতি রাষ্ট্র হিসেবে মালয়েশিয়ার ভূমিকাকে সমর্থন করে, আসিয়ানের কেন্দ্রীয় অবস্থান এবং কৌশলগত স্বাধীনতাকে সমর্থন করে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন সহযোগিতার মূলধারা বজায় রাখে।
সাক্ষাতে জনাব আনোয়ার বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধারণার প্রস্তাব করেছেন এবং 'ব্রিকস+' সহযোগিতার নেতৃত্ব ও প্রচারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন, যা মানবসভ্যতার অগ্রগতির জন্য তাঁর গভীর অনুভূতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্ব প্রতিফলিত করে। পাশাপাশি, ‘গ্লোবাল সাউথের’ সাধারণ স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সমর্থন প্রকাশ করে। মালয়েশিয়া সরকার চীনের সঙ্গে তার ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা এবং তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মালয়েশিয়া ও চীন বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে একই ধারণা এবং একই অবস্থান ভাগাভাগি করে। আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি রক্ষায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় দেশটি।
(জিনিয়া/তৌহিদ/ফেই)