শাংহাই আমদানি মেলা: চীনা বাজারকে জানা এবং পণ্য ও সরবরাহ চেইন উন্নীত করার ভালো মঞ্চ
2024-11-04 18:08:31

নভেম্বর ৪: ২০ অক্টোবর চলতি বছরের প্রথম ‘চীন-ইউরোপ ট্রেন-শাংহাই আমদানি মেলা’র পণ্য সম্ভার বহন করে শাংহাইয়ে পৌঁছেছে। সপ্তম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা (শাংহাই আমদানি মেলা) প্রতি বছরের মত ৫ থেকে ১০ নভেম্বর শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের আমদানি মেলার আয়তন ৪.২ লাখ বর্গমিটারেরও বেশি। ১৫২টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করবে। এবার মেলায় যোগ দেওয়া বিশ্বের শেষ্ঠ ৫০০ কোম্পানি ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। তাছাড়া ১৮৬টি কম্পানি ও প্রতিষ্ঠান টানা ৭ বছর ধরে শাংহাই আমদানি মেলায় অংশগ্রহন করছে।

২০১৯ সালে দ্বিতীয় আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, মানবজাতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশের উচিত নয় যে নিজ নিজ স্বার্থকে মানবজাতির গোটা গ্রুপের স্বার্থের সামনে অগ্রাধিকার দেওয়া। আমাদের আরো উন্মুক্ত মন ও বাস্তব ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ব বাজারকে আরো বড় করে তোলা উচিত, বিশ্ব ভাগ করার ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা উচিত এবং বিশ্ব সহযোগিতাকে আরো নমনীয় করে তোলা উচিত।

বিশ্ব অর্থনীতি অবনতি এবং ‘বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে দাবি’ জোরালো হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, চীন সব সময় ‘উন্মুক্তকরণকে চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণের প্রতীক হিসেবে’ চিহ্নিত করে। সপ্তম আমদানি মেলার আয়োজন আবারও বহুপক্ষবাদ ও বিশ্বায়নের উপরে চীনের বিশ্বাস প্রতিফলিত করবে, এবং ‘চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা বন্ধ হবে না, বরং আরো উন্মুক্ত হবে’-এর প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করবে। বিশ্বস্ত বিশ্ব বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতার মঞ্চ স্থাপন করা, বিশ্ব অর্থনীতিতে আস্থা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রাণশক্তি যুগিয়ে দেওয়া হল আমদানি মেলার প্রধান লক্ষ্য।

আমদানি মেলার মাধ্যমে বন্ধুরা আরো কাছে আসতে পারছে। এবারের আমদানি মেলার বন্ধু চক্র আরো বিস্তৃত হয়েছে। মোট ৩ হাজার ৪৯৬টি কোম্পানি আমদানি মেলায় অংশগ্রহণ করবে। তানজানিয়ার ক্যাসোনাট, ইথিওপিয়ার কফি এবং রুওয়ান্ডার মরিচ, আমদানি মেলা মঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের বৈচিত্রময় পণ্য সমুদ্র পার হয়ে চীনের হাজার হাজার পরিবারে পৌঁছতে পেরেছে। চীনের বিশাল বাজার বিশ্বের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির মহাসচিব আল-মামুন মৃধা আমাদের দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন: ‘শাংহাই আমদানি মেলা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য একটি খুব ভালো মঞ্চ। মেলায় চীনসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা আছে এবং শুধু তাই নয়, শিল্প চেইনের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতিনিধিরাও থাকবে। এখানে ই-কমার্স, লজিষ্টিক এবং ব্যাংক পরিষেবা কোম্পানিগুলো রয়েছে, তা শিল্প চেইনের ওয়ান-স্টপ পরিষেবা দিতে পারে’। গত বছরে বাংলাদেশের কয়েকটি বড় কোম্পানি আমদানি মেলায় অংশগ্রহণ করেছিলো এবং খুব ভাল সাড়া পেয়েছিলো। ‘আশা করি এ বছরে আরো বিভিন্ন খাতের বাংলাদেশী কোম্পানি মেলায় অংশগ্রহণ করবে। কারণ একটি চীনা বাজারের চাহিদা এবং বাংলাদেশের নিজের পণ্য ও সরবরাহ চেইন উন্নীত করার একটি ভাল সুযোগ।’

শাংহাই আমদানি মেলা হল সারা বিশ্বের নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি, নতুন পরিষেবা যুক্ত হওয়ার একটি ভাল মঞ্চ। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক উদ্যোগগুলো তাদের সর্বোশেষ অগ্রগতি প্রদর্শনের একটি মঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করে। এবার ৪০০টিরও বেশি নতুন পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হবে। তাছাড়া, মেলায় প্রথম বারের মত নতুন মাটিয়ারিল (উপাদন) প্রদর্শনী এলাকা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে বৈদ্যুতিক, বায়োলজিক্যাল এবং বিশেষ উপাদান ইত্যাদিত বিশ্বের উচ্চ উত্পাদন শিল্প চেইনের উচ্চমূল্য যোগ করা পণ্য থাকবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম ছয় বার আমদানি মেলায় মোট ২৫০০টি প্রতিনিধিত্ব নতুন পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শিত হয়েছে। যার সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক পরিমাণ ৪২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

শাংহাই আমদানি মেলায় শুধু পণ্য ও পরিষেবার বিনিময় হয় তা নয়, সংস্কৃতি ও চেতনার বিনিময়ও বটে। চেক প্রজাতন্ত্রের ক্রিস্টাল কাট, ইকুয়েডর থেকে ছিলিন ফল, বাংলাদেশের হস্তশিল্প পণ্য, বিভিন্ন দেশের বৈশিষ্টময় পণ্য যার যার নিজের আমদানি মেলা গল্প বলতে থাকে এবং সবাই মিলে সুন্দর জীবন উপভোগের ইতিহাস চিত্র আঁকতে থাকে। 

 (স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)