সিএমজি সম্পাদকীয়: যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিপাইন ‘মিষ্টি খেজুর’ নাকি ‘বিষের বড়ি’ পায়?
2024-11-01 16:09:21

ফিলিপাইনে মার্কিন দূতাবাস সম্প্রতি এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ফিলিপাইনের কোস্টগার্ডের আধুনিকীকরণ ও আপগ্রেড করতে সাহায্য করবে। উপরিভাগে, এটা ফিলিপাইন-যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ইন্দো-প্যসিফিক কৌশলের’ সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রাপ্ত ‘মিষ্টি খেজুর’, তবে অন্তরালে, ফিলিপাইনকে এ জন্য মূল্য দিতে হবে।

এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখলে ফিলিপাইনে, যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন থেকে শুরু করা যায়। চলতি বছরের এপ্রিলে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপে ‘টাইফুন’ স্থল-ভিত্তিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মত বিদেশে ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন এবং ২০১৯ সালে ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ থেকে প্রত্যাহারের পর প্রথমবারের মত এমন অস্ত্র মোতায়েন করে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে এটা ফিলিপাইনে ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে আসবে। তবে এ সম্পর্কে চিন্তা করুন, একটি পারমাণবিক শক্তি অন্য দেশে আক্রমণাত্মক কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন করে, তার মানে কী? এটি অনিবার্যভাবে আঞ্চলিক শান্তিকে মারাত্মকভাবে হুমকিতে ফেলবে, অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উস্কে দেবে এবং উত্তেজনাপূর্ণ সংঘাত সৃষ্টি করবে। আশপাশের দেশগুলোর তীব্র বিরোধিতার পর ফিলিপাইন জুলাই মাসে ঘোষণা করে ‘টাইফুন’ সিস্টেম সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হবে। তবে কিছু দিনের আগে ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, এই সিস্টেম ফিলিপাইনে কতক্ষণ মোতায়েন থাকবে তা যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেবে।

ফিলিপাইনের প্রতিক্রিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষোভ জাগিয়ে তোলে এবং ফিলিপাইনে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দেয়। একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ফিলিপাইন সরকার কেন ‘তুমি আমার বাসার মালিক’-এর মত আচরণ করে? এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।

ইতিহাস থেকে দেখে, ফিলিপাইন দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ এবং ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আজ অবধি ফিলিপাইনের পাঠ্যপুস্তকে তা দেখা যায়। ফিলিপাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ৫ থেকে ৭ শ্রেণীর সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশের ইতিহাস সুশোভিত করা হয়েছে। যেমন ‘যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন যুদ্ধের প্রথম গুলি চালানোর’ মার্কিন সেনার কৈফিয়ত তলব করে, তবে ২ লাখ ফিলিপিনোর মৃত্যুর কথা কিছুই উল্লেখ করেনি।

বাস্তব দিক থেকে দেখে, ফিলিপাইন সরকার গুরুতর কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্রর ওপর নির্ভর করে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে, কিন্তু তারা জানে না তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দাবার একটি ঘুটি মাত্র। ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ ত্বরান্বিত করেছে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে বিরোধে ফিলিপাইনকে তার ‘দাবা খেলায়’ ঘুটি করেছে, এবং কূটনীতি, জনমত, গোয়েন্দা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথাকথিত ‘সমর্থন প্রদান করে, যাতে ম্যানিলা মনে করে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বৈত সুবিধা পাবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিপাইন কী পাবে, ‘মিষ্টি খেজুর’ বা ‘বিষের বড়ি’?

জুলাইয়ের শেষে ফিলিপাইনকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা ঘোষণা থেকে সম্প্রতি ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ফিলিপাইনের কোস্টগার্ডকে আধুনিকীকরণ ও আপগ্রড করার সাহায্য পর্যন্ত, উপরিভাগে ফিলিপাইন অনেক আর্থিক সহায়তা পাবে, তবে বাস্তবায়নের সময় অনেক অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। যা ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে সাহায্যে প্রমাণ হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনো গোপন বিষয় নয় যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করা ও সাহায্য তহবিল বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কম খরচ দিয়ে বিশাল সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সামরিক বিক্রয়ের পরিমাণ ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, এর পেছনে এই মডেল চলছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনকে দক্ষিণ চীন সাগরের সংঘাতে টেনে এনে আমেরিকান আধিপত্য ধরে রাখতে চায়।

ফিলিপাইন অব্যাহত এমন কমর্কাণ্ড চালিয়ে গেলে স্বাধীনতা হারাবে, বড় দেশের শিকার হবে এবং গার্হস্থ্য দ্বন্দ্ব উদ্দীপিত করবে ও সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি করবে। এখন দেশটির থামার সময়!

(তুহিনা/হাশিম/স্বর্ণা)