সিএমজি সম্পাদকীয়: চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ ইইউকেই প্রভাবিত করবে
2024-10-31 16:26:15

সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউরোপীয় কমিশন স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, ৩১ তারিখ থেকে চীন থেকে আমদানি করা বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর ৫ বছরের চূড়ান্ত কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপ করবে। এর মধ্যে বিওয়াইডি, গিলি ও শাংহাই স্বয়ংচালিত শিল্প কর্পোরেশনকে যথাক্রমে ১৭, ১৮.৮ ও ৩৫.৫ শতাংশের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে, টেসলা ছাড়া অন্যান্য ‘সহযোগী’ গাড়ি কোম্পানিগুলোকে ২০.৭ শতাংশের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে, আর সব ‘অসহযোগী’ গাড়ি কোম্পানির উপর ৩৫.৩ শতাংশের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তে চীন স্পষ্টভাবে অসম্মতি ও মেনে না নেয়ার মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার অধীনে মামলা দায়ের করেছে।

চীন কেন ‘অসম্মতি’ জানিয়েছে? কারণ ইইউ’র আচরণ ‘অযৌক্তিক, অবৈধ’, ‘ন্যায় প্রতিযোগিতার’ নামে ‘অন্যায় প্রতিযোগিতা’ করে, বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ করে। এই আচরণ শুধু চীন-ইইউ শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং ইউরোপীয় ভোক্তাদের আরও বেশি অর্থ  ব্যয় করতে হবে, ইইউ’র বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং নিজের সবুজ রূপান্তর প্রক্রিয়া নিচে টেনে আনবে।

ইইউ’র সঙ্গে আলোচনায় চায়না চেম্বার অফ মেকানিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারি চীনের একমাত্র শিল্প প্রতিনিধি। এর সহ-সভাপতি শি ইয়ং হং সিএমজি’র সাক্ষাত্কারে বলেন, ইইউ’র তদন্তের প্রয়োজনীয়তা ও বৈধতার অভাব রয়েছে, তাই এটা শুধু একটি ‘রাজনৈতিক ঘোষণা’। আলোচনার সময় ইইউ’র প্রযুক্তিগত কর্মকর্তারা মনে করেন কিছু বিষয় গ্রহণযোগ্য, তবে বিপুল রাজনৈতিক চাপে তারা দ্রুত মত পরিবর্তন করেছেন, সমস্যা সমাধানের আন্তরিকতা নেই।

শুধু তাই নয়। বিশেষভাবে কোম্পানি বাছাই করা থেকে তথাকথিত ‘ভর্তুকি’ প্রকল্প কৃত্রিম বনোয়াট ও অতিরঞ্জন এবং বাণিজ্যিক সংবেদনশীল তথ্য প্রদানের জন্য চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ ও হুমকি দেওয়ার পর্যন্ত, ইইউ’র এহেন আচরণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যবিরোধী নীতি লঙ্ঘন করেছে, এবং এটি তাদের প্রচারিত মুক্ত বাজারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এর পেছনে রয়েছে ইইউ অর্থনৈতিক নীতি আরও রক্ষণশীল ও ‘রাজনীতিকরণের’ কারণ, আর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আটকানোর ধারণার প্রভাব। কিন্তু এর ফলে শুধুমাত্র উভয়েরই হার এবং ইইউ’র নিজেকেই একাধিক মূল্য চুকাতে হবে।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, প্রথমে যা গাড়ি শিল্প উত্পাদন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা, ইউরোপীয় গাড়ি কোম্পানি ও ইউরোপীয় ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন থিংক ট্যাংক রোডিয়াম কনসাল্টিং বলেছে, বৈশ্বিক গাড়ি সরবরাহ চেইন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। তাই ফ্রান্সের রেনল্ট কোম্পানির সিইও লুকা ডি মেও বলেন, চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভালো সহযোগিতা না করলে ইউরোপীয় গাড়ির বিদ্যুতায়নের প্রক্রিয়া আরও কঠিন হবে। বিএমডব্লিউ গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইইউ’র আচরণ ইউরোপীয় গাড়ী উত্পাদনকারীর প্রতিযোগিতা শক্তি উন্নতি করতে পারে না, বরং বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করা গাড়ি কোম্পানিগুলোর ক্ষতি করবে। ফলে আরও উচ্চ দাম ও কম বাজারের পছন্দ হল ইউরোপীয় ভোক্তাদের মূল্য।

একই সঙ্গে চীন ও ইউরোপের বিনিয়োগ সহযোগিতাও প্রভাবিত হবে, ইউরোপের বাণিজ্যিক পরিবেশ আরও উদ্বেগজনক হবে। চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার অন্য একটি উদ্দেশ্য হল আরও বেশি চীনা গাড়ি কোম্পানি ইউরোপে বিনিয়োগ ও কারখানা নির্মাণে বাধ্য করা। তবে শুধুমাত্র একটি উন্মুক্ত ও ন্যায্য বাজার সত্যিকার বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। ইইউ এক দিকে চীনা কোম্পানিকে দমন করে, অন্য দিকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায়, যা ভালো ফল বয়ে আনবে না।

তা ছাড়া ইইউ’র এই আচরণ নিজের সবুজ রূপান্তর ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বর্তমান ইইউ’র ২৭টি সদস্য দেশ ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্বন নির্গমন ৫৫ শতাংশ কমাবে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত নিট শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চীনের অনেক সবুজ উন্নয়ন সম্পর্কিত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি রয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে বিরোধ করলে ইইউ’র সবুজ রূপান্তর প্রক্রিয়া আরও বেশি বাধা পাবে।

গভীরভাবে দেখলে, অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইইউ’র মধ্যে ঐকমত্য গঠন করা সবচেয়ে সহজ ক্ষেত্র, তবে এখন বড় পার্থক্য দেখা দিয়েছে, যা ইইউ’র অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং এজন্য তাদের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে।

(তুহিনা/হাশিম/স্বর্ণা)